উত্তরপ্রদেশের সম্ভলের জামা মসজিদ কি হরিহর মন্দির? রবিবার মসজিদের সমীক্ষাকে কেন্দ্র করে ছড়িয়ে পড়ে অশান্তি। ঘটনার পর প্রশ্ন উঠছে, আদৌ কি ওই মসজিদ মন্দির ছিল কোনওকালে? জামা মসজিদ কি সত্যিই অতীতে প্রাচীন হিন্দু মন্দির ভেঙে তৈরি করা হয়েছিল? গোটা বিষয়টি নিয়ে ঐতিহাসিক ও প্রত্নতাত্ত্বিক তদন্ত করেছে Aaj Tak। তাতে উঠে এসেছে চমকপ্রদ তথ্য। কী রকম? ভারতের প্রত্নতাত্ত্বিক সর্বেক্ষণ বিভাগের (ASI) ১৮৭৫ সালের রিপোর্ট সামনে এসেছে। ওই রিপোর্টটি প্রকাশিত হয়েছিল 'Tours in the Central Doab and Gorakhpur 1874–1875 and 1875–1876' নামে।
১৮৭৫ সালের এএসআই রিপোর্টে কী রয়েছে?
'Tours in the Central Doab and Gorakhpur 1874-1875 and 1875-1876' নামাঙ্কিত রিপোর্টটি তৈরি করেছেন ভারতের প্রত্নতাত্ত্বিক সর্বেক্ষণ বিভাগের তৎকালীন কর্তা এসিএল কার্লাইল (A. C. L. Carlleyle)। সম্ভবলের জামা মসজিদ নিয়ে বিশদে সমীক্ষা করা হয়েছে ওই রিপোর্টে। তাতে বলা হয়েছে, মসজিদের ভিতরে ও বাইরের স্তম্ভগুলি প্রাচীন হিন্দু মন্দিরের। সেগুলি প্লাস্টার দিয়ে লুকোনোর চেষ্টা করা হয়েছিল। মসজিদের স্তম্ভগুলির একটি থেকে প্লাস্টার সরানো হলে প্রাচীন লাল রঙের হিন্দু মন্দিরের নকশা বেরিয়ে আসবে। মসজিদে এমন অনেক নিদর্শন রয়েছে যাতে স্পষ্ট এটি একাকেল প্রাচীন মন্দির ছিল। অতিসম্প্রতি ওই মসজিদে সমীক্ষার নির্দেশ দিয়েছিল স্থানীয় আদালত। যে সমীক্ষা রিপোর্ট জমা পড়বে ২৯ নভেম্বর।
হিন্দু মন্দির বদলে সম্বলের জামা মসজিদ?
সম্ভলের শাহি জামা মসজিদ সম্পর্কে হিন্দুপক্ষ দাবি করেছে,এটা আদতে হরিহর মন্দির। আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়া (এএসআই) এবং ঐতিহাসিক প্রমাণেও তুলে ধরেছে তারা। ব্রিটিশ জমানায় এএসআই-এর ১৮৭৫ সালের রিপোর্টে এই মসজিদে থাকা প্রাচীন পুঁথি সবচেয়ে বড় প্রমাণ।
ASI-এর যুক্তি
রিপোর্ট অনুযায়ী, মসজিদে একটি শিলালিপি রয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, ৯৩৩ হিজরিতে মসজিদ নির্মাণ করেছিলেন মীর হিন্দু বেগ। মীর হিন্দু বেগ বাবরের দরবারি ছিলেন। একটি হিন্দু মন্দিরকে মসজিদে রূপান্তরিত করেছিলেন। এএসআই-এর মতে, এই লেখাটি প্রমাণ করে যে মসজিদটি একটি হিন্দু ধর্মীয় স্থানে তৈরি হয়েছিল।
সম্ভলের জামা মসজিদ: ঐতিহাসিক দাবি ও প্রমাণ
সম্ভলের জামা মসজিদ নিয়ে হিন্দু পক্ষ দাবি করেছে, এটি বিষ্ণুর হিন্দু মন্দির ভেঙে তৈরি করা হয়েছিল। এই দাবির পক্ষে প্রমাণ হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে বাবরনামা এবং আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়ার (এএসআই) রিপোর্ট।
এএসআই রিপোর্ট:
এএসআই-এর ১৮৭৫ সালের রিপোর্টে এমন একাধিক প্রমাণ রয়েছে, যাতে হিন্দু মন্দিরের অস্তিত্ব প্রমাণিত।
মসজিদের স্তম্ভ- মসজিদের স্তম্ভগুলি হিন্দু মন্দিরের ধাঁচে। খাঁটি হিন্দু স্থাপত্যের প্রতীক।
গম্বুজ- এএসআইয়ের মতে, হিন্দু সম্রাট পৃথ্বীরাজ চৌহানের আমলে মসজিদের গম্বুজটি সংস্কার করা হয়েছিল।
প্রত্নতাত্ত্বিক প্রমাণ- মসজিদের কাঠামোতে হিন্দু মন্দিরের একাধিক নিদর্শন মিলেছে। পরে প্লাস্টার দিয়ে সেগুলি ঢেকে দেওয়া হয়েছে।
বাবরনামাতেও উল্লেখ
হিন্দু পক্ষের আবেদনকারী হরিশঙ্কর জৈন বাবরনামার উল্লেখ করেছেন। বাবরনামায় বাবর নিজেই লিখেছেন। ব্রিটিশ প্রাচ্যবিদ অ্যানেট বেভারিজ সেটি অনুবাদ করেছেন। বাবরনামার ৬৮৭ পৃষ্ঠায় লেখা আছে, বাবরের নির্দেশে তাঁর দরবারি মীর হিন্দু বেগ সম্ভলের হিন্দু মন্দিরকে জামা মসজিদে রূপান্তরিত করেন। এই বিবরণটি শিলালিপির সঙ্গে মেলে। যেখানে লেখা, মীর হিন্দু বেগের ৯৩৩ হিজরিতে মসজিদ নির্মাণ করেছেন।
সম্ভলের মন্দির ও মসজিদ নিয়ে বিরোধ এখন আদালতের বিচারাধীন। আগামী ২৯ নভেম্বর আদালতে পেশ করা সমীক্ষা রিপোর্ট।