বেআইনি ভাবে, বৈধ নথি ছাড়া বসবাসকারী বাংলাদেশিদের চিহ্নিত করা শুরু করল ওড়িশা। রাজ্যের আইনমন্ত্রী পৃথ্বীরাজ হরিচন্দন জানিয়েছেন, ওড়িশার একাধিক জেলায় এমন অনেক বেআইনি বাংলাদেশি নাগরিক বাস করছেন। জেলায় জেলায় তল্লাশি চলছে তাঁদের খোঁজ পেতে। ইতিমধ্যেই সমস্ত জেলাশাসক, উপকূলবর্তী নিরাপত্তা এজেন্সিকে বিষয়টি নিয়ে অবগত করেছে ওড়িশার BJP সরকার। পাশাপাশি এই মর্মে একটি স্পেশাল টাস্ক ফোর্সও গঠন করা হয়েছে।
পৃথ্বীরাজ হরিচন্দন বলেন, 'শহর এবং গ্রাম এলাকায় বসবাসকারী এমন বেআইনি বাংলাদেশিদের চিহ্নিত করার কাজ শুরু করেছি আমরা। বৈধ নথি ছাড়া ওড়িশায় কোনও বিদেশি নাগরিকদের থাকতে দেওয়া হবে না।' একইসঙ্গে আইনমন্ত্রী জানিয়েছেন, রাজ্যের ইঞ্জিনিয়ারিং দফতগুলিকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে,বৈধ নথি ছাড়া কোনও বাংলাদেশিকে যেন কাজে না রাখা হয়।
ওড়িশা সরকারের এই কঠোর পদক্ষেপ সম্পর্কে নয়া গঠিত STF-এর DIG পিনাক মিশ্র বলেন, 'আমরা পেট্রলিং বাড়িয়েছি। উপকূলবর্তী এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করেছি। কারণ বিদেশি নাগরিদের অনুপ্রবেশের সম্ভাবনা রয়েছে। যার মধ্যে অধিকাংশই বাংলাদেশি। জলপথেই এরা ঢুকে পড়তে পারে ওড়িশায়। এই রাজ্যে ৫০০ কিলোমিটার বিস্তৃত উপকূল রয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে অন্তর্বর্তী সীমা রয়েছে ওড়িশার। পশ্চিমবঙ্গ আবার বাংলাদশের সঙ্গে সীমান্ত ভাগ করে। ফলে আমাদের বাড়তি সতর্ক থাকতে হচ্ছে।'
গত মাসে ওড়িশার পঞ্চায়েতমন্ত্রী রবি নারায়ণ নায়েক এবং খাদ্য সরবরাহমন্ত্রী কেসি পাত্র জানিয়েছিলেন, খুব শীঘ্রই বৈধ নথি ছাড়া বসবাসকারী বাংলাদেশিদের চিহ্নিত করবে সরকার। সেই মতোই কাজ শুরু হয়েছে। গ্রাম পঞ্চায়েত স্তর থেকেই এই শনাক্তকরণের চলছে। বৈধ নথি ছাড়া রেশন কার্ড নিয়ে থাকলে তাদের কার্ড বাতিল ঘোষণা করা হবে।
ভুবনেশ্বর-কটকের পুলিশ কমিশনারও বেআইনি ভাবে বসবাসকারী বাংলাদেশিদের চিহ্নিত করার বিষয়টি নিয়ে একটি বৈঠক করেছে। এই দুই শহরে যারা বেআইনি ভাবে বাস করছেন, তাদের দ্রুত চিহ্নিত করা হবে। ভুবনেশ্বরের DCP জগোহন মিনা সমস্ত থানাগুলিকে অ্যালার্ট করে জানিয়েছেন, নথি ছাড়া যে সমস্ত বাংলাদেশি বাস করছেন, সেই তথ্য জোগাড় করতে। কীভাবে নথি ছাড়া তারা ভুবনেশ্বরে প্রবেশ করলেন, সেটিও খতিয়ে দেখতে বলা হয়েছে।
জানা গিয়েছে, ক্রাইম ব্রাঞ্চের এই STF ইতিমধ্যে ১০ জন এমন বেআইনি বাংলাদেশি নাগরিককে গ্রেফতার করেছে। যার মধ্যে ৬ জন পুরুষ, ৩ জন মহিলা এবং ১ জন নাবালক। মার্চ মাসেই ভুবনেশ্বর রেল স্টেশন থেকে ধরা পড়ে তারা। খুরদা, কটক, কেন্দাপাড়া, জগৎসিংহপুর, বালেশ্বর, ভদ্রক, গঞ্জাম এবং পুরীর মতো শহরেও বসবাস রয়েছে বেআইনি বাংলাদেশিদের, অনুমান তদন্তকারীদের। মূলত নির্মাণ কাজ, ভাঙাচোরা জিনিসপত্র সংগ্রহ করা এবং রাস্তার ধারে দোকানে কর্মরত এই নাগরিকরা।
ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী মোহন মাঝি তথ্য তুলে ধরে জানান, গত ১০ বছরে রাজ্য থেকে ৪১ জন বাংলাদেশির বিরুদ্ধে FIR দায়ের করা হয়েছে। মোট ৩ হাজার ৭৩৮ অনুপ্রবেশকারীকে চিহ্নিত করা হয়েছে আগেই। এর মধ্যে কেন্দাপাড়ায় ১ হাজার ৬৪৯ জন, জগৎসিংহপুরে ১ হাজার ১১২ জন, মালকানগিরিতে ৬৫৫ জন, ভদ্রকে ১৯৯ জন, নবরঙ্গপুরে ১০৬ এবং ভুবনেশ্বরে ১৭ জনকে চিহ্নিত করা হয়।