বালেশ্বর দুর্ঘটনার (Balasore Train Accident) কারণ অনুসন্ধানে মিলল বড়সড় গাফিলতির হদিশ। করমণ্ডলের ডেটা লগারে পাওয়া তথ্যে জানা যাচ্ছে, হোম সিগনাল ও আউটার সিগনাল, দুই ক্ষেত্রেই করমণ্ডলকে সবুজ সঙ্কেত দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু হঠাত্ প্রথমে আপ লাইন ও তারপর লুপ লাইনে সিগনাল লাল হয়ে যায়। যার নির্যাস, দাঁড়িয়ে থাকা মালগাড়িকে ধাক্কা মারে করমণ্ডল।
বস্তুত, গত শুক্রবার সন্ধ্যায় হাওড়া-চেন্নাই সেন্ট্রাল করমণ্ডল এক্সপ্রেস প্রথমে থাক্কা মারে লুপ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা একটি মালগাড়িকে। ধাক্কার অভিঘাতে করমণ্ডলের কয়েকটি বগি থার্ড লাইনে গিয়ে পড়ে। সেই সময় ওই লাইনে তীব্র গতিতে আসছিল যশবন্তপুর-হাওড়া সুপারফাস্ট এক্সপ্রেস। করণ্ডলের ছিটকে যাওয়া বগিগুলিতে ধাক্কা মেরে উল্টে যায়। এখনও পর্যন্ত ২৮৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। ১১০০-র বেশি আহত।
ট্রেনের ডেটা লগার কী বলছে?
বালেশ্বর ট্রেন দুর্ঘটনার ডেটা লগার পেয়েছে 'আজতক'। একে ট্রেনের ব্ল্যাক বক্সও বলা যেতে পারে। বিমানে যেমন থাকে। দুর্ঘটনার কারণ এই বক্সে থেকে যায়। দুর্ঘটনাগ্রস্ত কোনও বিমানের ব্ল্যাক বক্স উদ্ধার হলে দুর্ঘটনার কারণ জানা যায়। রেলের সিগনালিং বিভাগের প্রাক্তন আধিকারিক অখিল আগরওয়াল 'আজতক'-কে জানিয়েছেন, ডেটা লগারের ডায়াগ্রাম জানায়, স্টেশন মাস্টারকে অ্যালার্ট করতে রেললাইনে একাধিক সেন্সর থাকে। জানিয়ে দেয়, কোন প্ল্যাটফর্ম খালি রয়েছে। কোনও প্ল্যাটফর্মে ট্রেন দাঁড়িয়ে আছে না আস্তে চলছে, তাও জানিয়ে দেয় ওই সেন্সর।
কী হয়েছিল ওই রাতে?
অখিল আগরওয়াল জানালেন, কোনও লাইনে ট্রেন দাঁড়িয়ে থাকলে, ডেটা লগারে রেড অ্যালার্ট দেখায়। লাইন খালি হলে ধূসর রঙের হয়ে যায় লগার। যখন সিগনাল হলুদ হয়ে যায়, তখন আপ ও ডাউন লাইনেও সিগনাল হলুদ হয়। যশবন্তপুর-হাওড়া সুপারফাস্ট ট্রেনটিকে প্রথমে হলুদ ও তারপর সবুজ সিনগাল দেওয়া হয়েছিল। এরপরেই আপ লাইনে করমণ্ডলকে সবুজ সিগনাল দেওয়া হয়। যখন যশবন্তপুর সুপারফাস্ট ট্রেন যাচ্ছিল, তখন করমণ্ডল বহগানা বাজার স্টেশনের কাছে চলে এসেছে। ওই সময় করমণ্ডল হোম ও আউটার সিগনাল, দুটোই সবুজ দেখানো হয়। হঠাত্ করে আপ লাইনে সিগনাল লাল হয়ে যায়। ওদিকে হঠাত্ লুপ লাইনেও সিগনাল লাল হয়ে যায়। সেখানে মালগাড়ি দাঁড়িয়েছিল। ডেটা লগারের সময় অনুযায়ী, দুর্ঘটনা ঘটেছে সন্ধে ৬টা ৫৫ মিনিটে।
রিলে রুম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ
অখিল আগরওয়াল জানালেন, ইলেক্ট্রনিক লকিং সিস্টেমে রিলে রুমের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি মাইক্রোপ্রসেসর ভিত্তিক একটি প্রণালী। এরসঙ্হে ইভেন্ট লগারও রাখা থাকে, যাতে বোঝা যায় যে কেউ কোনও রকম ভাবে ডেটা বানচালের চেষ্টা করেছে কিনা। ভারতীয় রেলে রিলে রুম সর্বদা লক করা থাকে।