পুরুষ পুরুষের সঙ্গে, মহিলা মহিলার সঙ্গে, অর্থাত্ সমলিঙ্গ বিয়ে কি ভারতে আইনি বৈধতা পাবে? আজ অর্থাত্ মঙ্গলবার রায় জানাবে সুপ্রিম কোর্ট। ৫ বিচারপতির সাংবিধানিক বেঞ্চে টানা ১০ দিন শুনানির পর গত ১১ মে এই রায়দান স্থগিত রেখেছিল দেশের শীর্ষ আদালত।
গত ১৮ এপ্রিল সমলিঙ্গ বিয়ে মামলার শুনানি শুরু হয়েছিল সুপ্রিম কোর্টে। শীর্ষ আদালত জানিয়েছিল, সংসদ এ বিষয়ে কী প্রতিক্রিয়া দেবে, তার আশা করে আগেই কোনও সাংবিধানিক ঘোষণা করতে পারবে না সর্বোচ্চ আদালত।
সমলিঙ্গ বিয়ে এখনও আইনি স্বীকৃতি পায়নি
শুনানি চলাকালীন আবেদনকারীরা আইনজীবী মুকুল রোহাতগি, অভিষেক মনু সিংভি, রাজু রামচন্দন, আনন্দ গ্রোভার, গীতা লুথরা প্রমুখদের মাধ্যমে LGBTQ+ এর সমতার অধিকারের পক্ষে সওয়াল করেন। স্পেশাল ম্যারেজ অ্যাক্টের আওতায় সমলিঙ্গের বিয়েকে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য আবেদন জানানো হয়। এই বিষয়ে বিভিন্ন রাজ্য, কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল , কেন্দ্রের মতামত নিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট। বস্তুত, ভারতে সমকামী সম্পর্ক যে অপরাধ নয়, সে বিষয়ে আগেই জানিয়ে দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। তবে সমলিঙ্গের বিয়ে এখনও আইনি সিলমোহর পায়নি।
সমলিঙ্গ বিয়েকে আইনি স্বীকৃতি দেওয়ার বিরোধিতাই করেছে কেন্দ্র। কেন্দ্রের দাবি, সমলিঙ্গ বিবাহ আইনি স্বীকৃতি দেওয়ার অধিকার সংসদের। আদালতের নয়।
গত বছর ১৪ ডিসেম্বর সমলিঙ্গ বিয়েকে আইনি স্বীকৃতি দেওয়ার বিষয়টিতে দিল্লি হাইকোর্ট সহ বিভিন্ন আদালতে দায়ের হওয়া মামলাগুলি একসঙ্গে সুপ্রিম কোর্টে ট্রান্সফার করার বিষয়ে কেন্দ্রের জবাব তলব করেছিল সর্বোচ্চ আদালত। ৬ জানুয়ারি মামলাটি যায় সুপ্রিম কোর্টে।
সমলিঙ্গ বিয়ে নিয়ে ঠিক কী দাবি?
মূলত, সমলিঙ্গ বিবাহকেও স্পেশাল ম্যারেজ অ্যাক্টের আওতায় আইনি স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য আবেদন করা হয়েছে। আবেদনে বলা হয়েছে, LGBTQ+ সম্প্রদায়ভুক্তদের এটি মৌলিক অধিকার। কোনও ব্যক্তির সেক্সুয়াল ওরিয়েন্টেশনের জন্য বৈষম্যমূলক আচরণ যাতে না করা হয়।
কেন্দ্র কেন সমলিঙ্গ বিয়ের বিরুদ্ধে?
কেন্দ্রীয় সরকার প্রথম থেকেই সমলিঙ্গ বিয়ের বিরুদ্ধে। সুপ্রিম কোর্টে হলফনামা দাখিল করে আবেদন খারিজের আবেদন জানিয়েছিল কন্দ্র। কেন্দ্রের বক্তব্য, সুপ্রিম কোর্ট ধারা ৩৭৭ ডিক্রিমিনালাজড (অপরাধ নয়) করেছে মানেই এই নয় যে, সমলিঙ্গ বিয়ে মৌলিক অধিকার। কারণ বিবাহ আইন স্বামী ও স্ত্রীর পরিভাষা বায়োলজিক্যাল ভিত্তি তৈরি করা হয়েছিল। কিন্তু সমলিঙ্গ বিয়ে হলে স্বামী ও স্ত্রীকে পৃথক কীভাবে মানা হবে?
আদালতে কেন্দ্রের সওয়াল, সমলিঙ্গ বিয়ে আইনি স্বীকৃতি পেলে দত্তক নেওয়া, ডিভোর্স, ভরণ-পোষণ, সম্পত্তির অধিকার সম্পর্কিত একাধিক জটিলতা তৈরি হবে। কারণ এই সব বিষয়ই পুরুষ ও মহিলার বিয়ের উপর ভিত্তি করে আইন তৈরি করা হয়েছিল।
প্রধান বিচারপতি এই মামলার শুনানি চলাকালীন প্রশ্ন তুলেছিলেন, বিবাহিত সম্পর্কে বলতে যা বুঝি আমরা, তাতে দুই মানুষকে বিপরীত লিঙ্গেরই হতে হবে, এমন কোনও বাধ্যবাধকতা রয়েছে? সেই সঙ্গে প্রধান বিচারপতি আরও বলেন, এই ধরনের সম্পর্ককে (সমকামী) শুধুমাত্র শারীরিক সম্পর্ক হিসেবে দেখি না আমরা। বরং এই ধরনের সম্পর্ক তার চেয়ে বেশিই, স্থিতিশীল, আবেগমিশ্রিত, এবং মানসিক সংযোগও জড়িয়ে রয়েছে।