scorecardresearch
 

অপরাধ জগতে পাচারের কুখ্যাত 'সেফ করিডর' শিলিগুড়ি

চোর করিডর কিংবা সেফ করিডর। শিলিগুড়ি ভৌগোলিক করিডর অপরাধ ও পুলিশের ভাষায় এখন এ নামেই পরিচিত। সোনা, গাঁজা, পিস্তল, চোরাই বাইক, জাল নোট, হাসিস, দেশি ও বিদেশি বেআইনি মদ, ব্রাউন সুগার, কোকেন, আফিম, চোরাই কয়লা, চোরাই কাঠ, গরু। তালিকাটা নেহাৎ ছোটো নয়। মাঝে মধ্যে কিছু পরিমাণ পাচার বিভিন্ন এজেন্সির রাডারে ধরা পড়লেও বেশিরভাগটাই থেকে যায় লোকচক্ষুর অন্তরালে।

Advertisement
পাচারে সেফ রুট শিলিগুড়ি করিডর পাচারে সেফ রুট শিলিগুড়ি করিডর
হাইলাইটস
  • দেশের অভ্যন্তরীণ পাচারের সেফ করিডর শিলিগুড়ি
  • পাচারের সিংহভাগই থেকে যায় আড়ালে
  • সোনা থেকে মাদক, পিস্তল থেকে গরু সব পাচারের একটাই রুট

শিলিগুড়িকে করিডোর করে পাচার চক্র সক্রিয়। কখনও ভুটান থেকে সোনা ঢুকছে শিলিগুড়িতে। কখনও নাথুলা সীমান্ত হয়ে ঢুকছে।

শিলিগুড়ি করিডর

চোর করিডর কিংবা সেফ করিডর। শিলিগুড়ি ভৌগোলিক করিডর অপরাধ ও পুলিশের ভাষায় এখন এ নামেই পরিচিত।

পাচারের বেসাতি

সোনা, গাঁজা, পিস্তল, চোরাই বাইক, জাল নোট, হাসিস, দেশি ও বিদেশি বেআইনি মদ, ব্রাউন সুগার, কোকেন, আফিম, চোরাই কয়লা, চোরাই কাঠ, গরু। তালিকাটা নেহাৎ ছোটো নয়।

পাচারের মূল রুট

কখনও মায়ানমার, কখনও চিন, কখনও নেপাল থেকে এসে শিলিগুড়ি হয়ে বিহারের পথে উত্তর প্রদেশ হয়ে দিল্লি। ব্যাস! পাচারকারীর সিংহভাগ কাজ শেষ। এবার বেশিরভাগই দিল্লি থেকে ঘাঁটি করে তা পাচার হয়ে যায় দেশের বিভিন্ন অংশে। মাদকের একটা বড় অংশ চলে যায় মুম্বই ও গোয়ায়। এ ছাড়াও যেখানে যে জিনিসের চাহিদা বেশি, তা প্রয়োজনমতো নিয়ে যান পাচারে যুক্তরা। তবে শিলিগুড়ি রুটে পাচারের লম্বা রুটে যাঁরা পাচার করেন, তাঁরা আলাদা। তাঁদের কাজ শেষ হয় দিল্লি পৌঁছেই।

অধিকাংশ পাচারই থেকে যায় এজেন্সির রাডারের বাইরে

মাসে এক একটি পাচার সামগ্রী, সামগ্রী ভেদে পাচার হয়ে যায় নানা পরিমাণে। সোনা যেমন সবচেয়ে বেশি পাচার হয়। এরপরই পাচার হয় কাঠ। কম নয় মাদকের বিভিন্ন আইটেম। চোরাই ও নিষিদ্ধ সামগ্রী পাচারের ক্ষেত্রে যতটুকু পুলিশ, শুল্প দফতর, আবগারি দফতর কিংবা অন্যান্য গোয়েন্দা এজেন্সির তরফে ইন্টারসেপ্ট করা সম্ভব হয়, তা মাত্র ১০ শতাংশ বলে বিভিন্ন দফতরের আধিকারিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গিয়েছে। বেশিরভাগ খবর মেলে না। কিছু খবর মিললেও তৎপরতার অভাব কিংবা কর্মী সংখ্যা কম থাকায় হাতছাড়া হয়ে যায়। কিছু সরকারি এজেন্সির কিছু আধিকারিকদের সঙ্গে যোগসাজশে পার পেয়ে যায়।

Advertisement

লাভের গুড় বেশি সোনাতেই

তবে এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি মূল্যের পাচার হয় সোনাই। লাভের পরিমাণ বেশি থাকায় এটাতেই হাত পাকায় চোরাকারবারীরা। ভারতে সোনা পাচারচক্রের পান্ডারা চিনে বসেই অপারেশন চালাচ্ছে বলে গোয়েন্দাদের দাবি।শিলিগুড়িতে গত কয়েক বছর ধরে কয়েক কুইন্ট্যাল সোনা বাজেয়াপ্ত করার পর প্রাথমিক তদন্তে জানা গিয়েছে এমনটাই। কেন্দ্রীয় রাজস্ব গোয়েন্দা দপ্তরের আধিকারিকরা তদন্ত করে জানতে পেরেছেন, যে ভাবে কোটি কোটি টাকার সোনা বাজেয়াপ্ত করা হচ্ছে, তা সাধারণ পাচারকারীদের কাজ নয়। এর পিছনে রয়েছে কোনও সঙ্ঘবদ্ধ কাজ করছে। শিলিগুড়িকে করিডোর করে এই পাচার চক্র সক্রিয়। কখনও ভুটান, কখনও নেপাল ও নাথুলা হয়ে সোনা ঢুকছে শিলিগুড়িতে। মায়ানমার থেকে মণিপুর হয়ে অসম হয়ে শিলিগুড়ি ঢোকে চক্রগুলি। সোনা আসে হংকং থেকে। 

অন্য আইটেম পাচারেও পিছিয়ে নেই

অন্য সামগ্রীগুলি পাচার হয় মায়ানমার, হংকং সহ চিন থেকেও বলে জানা গিয়েছে। তবে পিস্তল পাচার হয় নেপাল থেকেও। শিলিগুড়ি করিডরের চারিদিকে কোথাও সিআইএসএফ, কোথাও বিএসএফ, কোথাও এসএসবি জওয়ানরা রক্ষণভাগ সামলালেও ফাঁক ফোঁকর গলে বেরিয়ে যায় পাচারকারীরা। ফের সর্ষের মধ্যে ভূত থাকার আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। শিলিগুড়িতে যে কোনও রুটে পুলিশ, আধা সামরিক বাহিনীকে আরও সক্রিয় হতে হবে বলে দাবি বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনেরও।

সব মিলিয়ে শিলিগুড়ি করিডর ক্রমশ কুখ্যাত করিডরে পরিণত হয়েছে দেশের অপরাধ জগতের কাছে।

 

Advertisement