পাখির চোখ ত্রিপুরা! আগামী মাসে কোন প্ল্যান নিয়ে বিপ্লব গড়ে অভিষেক ?

লোকসভা ভোটের আগে জোট করে লাভ নেই, যা করার আগেই করতে হবে, স্পষ্ট বার্তা দিয়েছেন মমতা। ২৬শে জুলাই মমতার দিল্লি সফর তাই রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের কাছে তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে উঠছে। তবে তৃণমূলনেত্রীর দিল্লি সফরের মতই সকলের নজর থাকবে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ত্রিপুরা সফরের দিকেও। শোনা যাচ্ছে আগামী মাসেই উত্তর-পূর্বের এই রাজ্যটিতে যাচ্ছেন অভিষেক। ২০২৩ সালে বিধানসভা ভোট রয়েছে ত্রিপুরায়। তার আগে বাঙালি অধ্যুষিত এই রাজ্যটিতে ঘাসফুল ফোটাতে যেন বদ্ধপরিকর অভিষেক।

Advertisement
পাখির চোখ  ত্রিপুরা!  আগামী মাসে  কোন প্ল্যান নিয়ে বিপ্লব গড়ে অভিষেক ?পরবর্তী লক্ষ্য কি বিপ্লবের রাজ্য?
হাইলাইটস
  • দেশের নানা প্রান্তে দলের সংগঠনকে ছড়িয়ে দিতে হবে
  • তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক হয়েই নিজের পরিকল্পনা জানিয়েছিলেন অভিষেক
  • শোনা যাচ্ছে দিল্লি থেকে ফিরেই এবার আগরতলায় রওনা দেবেন তিনি

তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক হয়েই অভিষেক বন্দোপাধ্যায় আগেই স্পষ্ট করে দিয়েছেন তাঁর লক্ষ্য দেশের নানা প্রান্তে দলের সংগঠনকে ছড়িয়ে দেওয়া। এবারের একুশে জুলাইও যেন সেই ব্লু প্রিন্ট অনুযায়ী আয়োজন করা হয়েছিল। ভার্চুয়াল ভাষণ থেকেই মমতা ২০২৪-এর লোকসভা ভোটে জোট বেঁধে বিরোধী দলগুলিকে লড়ার আহ্বান জানালেন। লোকসভা ভোটের আগে জোট করে লাভ নেই, যা করার আগেই করতে হবে, স্পষ্ট বার্তা দিয়েছেন মমতা।  ২৬শে জুলাই মমতার দিল্লি সফর তাই রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের কাছে তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে উঠছে। তবে তৃণমূলনেত্রীর দিল্লি সফরের মতই সকলের নজর থাকবে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ত্রিপুরা সফরের দিকেও। শোনা যাচ্ছে আগামী মাসেই উত্তর-পূর্বের এই রাজ্যটিতে যাচ্ছেন অভিষেক। ২০২৩ সালে বিধানসভা ভোট রয়েছে ত্রিপুরায়। তার আগে বাঙালি অধ্যুষিত এই রাজ্যটিতে ঘাসফুল ফোটাতে যেন বদ্ধপরিকর অভিষেক।

 

আরও পড়ুন: কলকাতাতেই জোটের ডাক, ২৪-এর লক্ষ্যেই কি দিল্লিতে এবার মমতা?

এবারের একুশের জুলাই ভার্চুয়াল হলেও সবদিক থেকে ছিল আলাদা। এই প্রথম গুজরাত, উত্তরপ্রদেশ, পঞ্জাব-সহ দেশের নানা প্রান্তে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভার্চুয়াল ভাষণ শোনার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। তার মধ্যে ছিল ত্রিপুরাও। আগামী বছর উত্তরপ্রদেশ-সহ দেশের ৬ রাজ্যে ভোট রয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের বাইরে তৃণমূল কংগ্রেসের সংগঠনকে ছড়িয়ে দিতে উদ্যোগী হলেও উত্তরপ্রদেশের মত রাজ্যে তৃণমূলের শক্তি বিস্তার করা খুব একটা সহজ হবে না বলেই মত ওয়াকিবহাল মহলের। ফলত এই রাজ্যগুলিতে তৃণমূল বিধানসভা ভোটে দাঁড়ালেও কতটা কী করতে পারবে তা নিয়ে সন্দিহান রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা। এর ঠিক একবছর পরেই রয়েছে ত্রিপুরা। পশ্চিমবঙ্গের বাইরে বাঙালি এই রাজ্যেই তৃণমূলের সবচেয়ে বেশি সম্ভাবনা দেখছেন বিশেষজ্ঞরা। বিষয়টি ভাল করেই জানেন অভিষেক নিজেও। তাই তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক হওয়ার পর আগামী মাসেই তাঁর সফর সূচিতে থাকছে ত্রিপুরা, এমনটাই খবর দলের অন্দরে।

 

 

দলীয় সূত্রে খবর, ত্রিপুরায় ইতিমধ্যেই তৃণমূল সাংগঠনিকভাবে বৃদ্ধি পেতে শুরু করেছে। উত্তর ত্রিপুরা, উনকোটি, ধলাই-সহ বিভিন্ন জায়গায় অন্য দলের বহু নেতা–কর্মীরা তৃণমূলে যোগদান করতে শুরু করেছে। পাশাপাশি আদিবাসীদের মধ্যেও তৃণমূলের প্রভাব বিস্তারের সম্ভাবনা দেখা গিয়েছে। তার মধ্যে বাম শাসনের অবসান ঘটিয়ে ইতিহাস গড়লেও এই মুহূর্তে ত্রিপুরাতে কার্যত টলমল গেরুয়া শিবিরের অবস্থা। বিধায়ক সুদীপ রায় বর্মণের সঙ্গে এই মুহূর্তে সংঘাত চরমে মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব দেবের। সুদীপ  একাধিক বিধায়ক নিয়ে দল ছাড়তে পারেন বলেও জল্পনা তৈরি হয়েছে। মুকুল রায় বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে ফিরতে এই জল্পনা আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। মুকুল ঘনিষ্ঠ হিসাবেই পরিচিত সুদীপ। মুকুলের হাত ধরেই কংগ্রেস থেকে গেরুয়া শিবিরে নাম লিখিয়েছিলেন তিনি। এই বিজেপি বিধায়ক তাঁর অনুগামীদের নিয়ে দল ছাড়লে চাপ বাড়তে পারে সরকারের। পরিস্থিতি সামাল দিতে কয়েকদিন আগেই ত্রিপুরার নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠক করেছে বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব, তাতেও পরিস্থিতি আয়ত্বে আসেনি।

Advertisement

 

আরও পড়ুন: নিশীথকে নিয়ে তোলপাড়, রাজ্য থেকে ৪ মন্ত্রীর তিন জনই কিন্তু পূর্ববঙ্গীয়

উত্তর-পূর্বের এই রাজ্যটিতে গেরুয়া শিবিরের টালমাটাল পরিস্থিতিকেই কাজে লাগাতে চাইছেন তৃণমূলনেত্রী। তাই তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক হওয়ার পর ভিন রাজ্যের সফর ত্রিপুরা দিয়েই সম্ভবত শুরু করবেন অভিষেক। যদিও ২১ জুলাইয়ের অনুষ্ঠানের পর বুধবার রাতে দিল্লি উড়ে গিয়েছেন অভিষেক। তবে সেখানে এখন কোনও ভোট নেই। বরং সামনেই ত্রিপুরার বিধানসভা নির্বাচন। আগরতলায় রাজ্য নেতাদের সঙ্গে বৈঠকের পাশাপাশি আঞ্চলিক দলগুলির সঙ্গেও অভিষেক কথা বলতে পারেন বলে খবর। সুদীপ রায় বর্মনের সঙ্গেও তাঁর বৈঠকের সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। প্রসঙ্গত সুদীপ রায় বর্মণের হাত ধরেই ত্রিপুরায় তৃণমূল আত্মপ্রকাশ করেছিল। মুকুল দল ছাড়ার পর বিজেপিতে যোগ দেন সুদীপও। এবার মুকুলের ঘর ওয়াপসিতে তাঁর ঘাসফুলে ফেরার সম্ভাবনাও উজ্জ্বল হচ্ছে। অভিষেকের ত্রিপুরা সফরের সময় তা হতে পারে এমন সম্ভাবানও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। 

 

 

ত্রিপুরায় ক্ষমতা থেকে চলে যাওয়ার পর বাংলার মতোই বামশক্তি ক্ষয়িষ্ণু সেখানে । প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকারের পক্ষে একা বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াই করা অসম্ভব। কংগ্রেসের অবস্থাও  তথৈবচ। আর তাই বাংলার পর ত্রিপুরাই তৃণমূলের সবচেয়ে সহজ টার্গেট। আর ত্রিপুরাতেও বাঙালিরাই সংখ্যাধিক্য। ফলত  ত্রিপুরার মানুষের আস্থা অর্জন করা তৃণমূলের পক্ষে গোবলয়ের রাজ্যগুলির তুলনায় অনেক সহজ। ত্রিপুরায় বিধানসভা নির্বাচনের আগে দেড় বছর সময় রয়েছে তৃণমূলের হাতে ৷ তার আগেই ত্রিপুরাকে তৃণমূলের ঘাঁটি শক্ত করতে, এখন থেকেই আদাজল খেয়ে নামতে চাইছেন অভিষেক । ত্রিপুরা ভোটের ঠিক একবছর পরেই রয়েছে লোকসভা নির্বাচন। তার আগে যদি উত্তর পূর্বের এই রাজ্যে চমক দিতে পারে তৃণমূল তাহলে ২০২৪-এর যুদ্ধে বাড়তি আত্মবিশ্বাস নিয়ে ঝাঁপাতে পাড়বে গেরুয়া শিবির তা বলাই বাহুল্য। 


 

POST A COMMENT
Advertisement