কলকাতাতেই জোটের ডাক, ২৪-এর লক্ষ্যেই কি রাজধানী যাত্রা মমতার?

তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক হয়েই অভিষেক বন্দপাধ্যায় জানিয়ে দিয়েছেন তাঁর লক্ষ্য দেশের নানা প্রান্তে দলের সংগঠনকে ছড়িয়ে দেওয়া। এবারের একুশের জুলাইও যেন সেই ব্লু প্রিন্ট অনুযায়ী আয়োজন করা হয়েছে। দিল্লি-পঞ্জাব- গুজরাত-ত্রিপুরা সবখানেই আজ শোনান হয়েছে তৃণমূলনেত্রীর ভাষণ। দেশের রাজধানী দিল্লির কনস্টিটিউশনাল ক্লাবে জায়ান্ট স্ক্রিন লাগিয়ে তৃণমূল নেত্রীর বক্তৃতা শোনার জন্য মোদী-বিরোধী নেতাদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। মমতার দিল্লি সফরের আগে যেন অনেকটা পিচ তৈরি করে রাখা হচ্ছে।

Advertisement
কলকাতাতেই জোটের ডাক, ২৪-এর লক্ষ্যেই কি দিল্লিতে এবার মমতা? বাদল অধিবেশনের মাঝেই দিল্লিতে যাচ্ছেন মমতা
হাইলাইটস
  • বাদল অধিবেশনের মাঝেই দিল্লিতে যাচ্ছেন মমতা
  • এদিন ভার্চুয়াল ভাষণেই জোটের ডাক দিলেন তিনি
  • দিল্লি সফরে মমতার লক্ষ্য কি বিরোধিদের মন বোঝা?

গত সোমবার থেকে শুরু হয়েছে বাদল অধিবেশন। আর তার এক সপ্তাহের মধ্যেই বাংলার মুখ্যমন্ত্রী হাজির হতে চলেছেন দেশের রাজধানীতে। তৃণমূলের অন্দরে কান পাতলেই এখন জোর গুঞ্জন, নেত্রী দিল্লি যাচ্ছেন। নিজের দিল্লি গমনের কথা অবশ্য ছোপাননি মমতাও। নবান্নে সাংবাদিকদের নিজেই বলেছেন সেকথা। জানা যাচ্ছে আগামী রবিবার অর্থাৎ ২৬ তারিখ তিনি রাজধানী যাত্রা করছেন। বাদল অধিবেশন চলাকালীন মমতার এই দিল্লি যাত্রাই এখন আলোচনার অন্যতম বিষয়বস্তু হয়ে উঠেছে রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মধ্যে।

আরও পড়ুন: নিশীথকে নিয়ে তোলপাড়, রাজ্য থেকে ৪ মন্ত্রীর তিন জনই কিন্তু পূর্ববঙ্গীয় 

তৃতীয়বার মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর এটাই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রথম দিল্লিযাত্রা। মমতার বক্তব্য অনুযায়ী, তিনি নির্বাচনের পর প্রত্যেকবার দিল্লি যান। এবারও সেই পরম্পরায় ছেদ পড়বে না। রাজধানীতে গিয়ে রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ ও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে সাক্ষাতের পরিকল্পনাও রয়েছে তাঁর। তৃতীয়বার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই গত দু'মাসে একাধিকবার কেন্দ্রের সঙ্গে সংঘাতে জড়িয়েছেন মমতা। এই প্রেক্ষাপটে তাঁর দিল্লি গিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতের বিষয়ে সবারই নজর থাকবে। তবে তাৎপর্যের বিষয়টি হল, মমতার দিল্লি যাওয়ার সময়কাল। সংসদে বাদল অধিবেশন চলাকালীন সময়টাকেই নিজের রাজধানী যাত্রার জন্য বেছে নিয়েছেন তৃণমূলনেত্রী। আর দিল্লিতে গেলে তিনি সংসদভবনে যাবেন না এমনটা হতেই পারে না। মমতা পাঁচবারের সাংসদ। সেই সুবাদে সংসদের হালহকিকত তাঁর সব জানা। আর বাদল অধিবেশন চলায় এখন দেশের সমস্ত বিরোধী দলের নেতারাই হাজির রয়েছেন দিল্লিতে। তাই সংসদে ঢুঁ দিয়ে পুরনো সম্পর্কগুলো এক জায়গায়  ঝালাই করে নেওয়া তৃণমূলনেত্রীর পক্ষেও অনেকটাই সহজ।

 

মমতার দিল্লি যাওয়ার অন্যতম কারণ হিসাবে উঠে আসছে সনিয়া গান্ধীর নামও। কংগ্রেস সভানেত্রীর সঙ্গে তাঁর সাক্ষাতের জল্পনা শোনা যাচ্ছে। গত বিধানসভা ভোটে বিজেপি শিবিরকে পর্যদুস্ত করার পর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে কেন্দ্র করে জাতীয় রাজনীতিতে চর্চা ইতিমধ্যে শুরু হয়ে গিয়েছে। এরইমধ্যে একুশের ভোটে তৃণমূলের ভোট কুশলী প্রশান্ত কিশোরের সঙ্গে  কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী ও  প্রিয়াঙ্কা গান্ধীর বৈঠক আলাদা মাত্রা যোগ করেছে। তার মধ্যেই মমতার দিল্লি সফরে ওয়াকিবহাল মহলের অনেকেই অন্য সমীকরণ দেখতে পাচ্ছেন। প্রসঙ্গত সম্প্রতি শোনা গিয়েছিল ২০২৪-এর লোকসভা ভোটে দিকে তাকিয়ে তৃণমূলের সঙ্গে সঙ্গে সেতুবন্ধন গড়তে  চাইছেন খোদ কংগ্রেস হাইকমান্ড। তাই  কংগ্রেসের জাতীয় নেতৃত্বের একাংশও তৃণমূলের প্রতি সুর নরম করেছেন। এদিকে মমতা তৃতীয়বার বাংলার মসনদে বসতেই প্রশান্ত কিশোর শরদ পাওয়ার-সহ বিজেপি বিরোধী একাধিক দলের নেতৃত্বের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। এরমধ্যে অনেকেই অন্য গন্ধ পাচ্ছেন। ২০২৪-এর দিকে লক্ষ্য রেখেই বিরোধী ঐক্য গড়ার চেষ্টা শুরু হয়ে গিয়েছে এমনটাই মনে করছেন ওয়াকিবহাল মহল।

Advertisement

 

 

তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক হয়েই অভিষেক বন্দপাধ্যায় জানিয়ে দিয়েছেন তাঁর লক্ষ্য দেশের নানা প্রান্তে দলের সংগঠনকে ছড়িয়ে দেওয়া। এবারের একুশের জুলাইও যেন সেই ব্লু প্রিন্ট অনুযায়ী আয়োজন করা হয়েছে। দিল্লি-পঞ্জাব- গুজরাত-ত্রিপুরা সবখানেই আজ শোনান হয়েছে  তৃণমূলনেত্রীর ভাষণ।  দেশের রাজধানী দিল্লির কনস্টিটিউশনাল ক্লাবে জায়ান্ট স্ক্রিন লাগিয়ে তৃণমূল নেত্রীর বক্তৃতা শোনার জন্য মোদী-বিরোধী নেতাদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। মমতার দিল্লি সফরের আগে যেন অনেকটা পিচ তৈরি করে রাখা হচ্ছে। সেখানে হাজিরও হয়েছিলেন এনসিপি, শিবসেনা, সমাজবাদী পার্টি, কংগ্রেস, ডিএমকে, আরজেডির সমস্ত তাবড় তাবড় নেতৃত্ব। ছিলেন শরদ পাওয়ার, চিদম্বরও, জয়া ভাদুড়িরা। একুশের ভাষণ দিতে উঠে ২৪-এর লক্ষ্য নিয়ে কোনও রাখঢাক এদিন করেননি মমতা। সোজাসুজি বিরোধী জোট গড়ার ডাক দিয়েছেন। আগামী ডিসেম্বরে কোভিড পরিস্থিতি ঠিক হলে বিজেপি বিরোধী দলগুলিকে নিয়ে সমাবেশ করার ঘোষণা করেছেন। এমনকি তিনি দিল্লিতে থাকাকালীন কোনও বৈঠক করা যায় কিনা সেই প্রস্তাবও দিয়েছেন মমতা। 

আরও পড়ুন: NHRC রিপোর্ট নতুন হাতিয়ার BJP-র, বিড়ম্বনা মমতার?

এখনও পর্যন্ত যা খবর তাতে  ২৬ জুলাই বিকেলে বিমানে কলকাতা থেকে দিল্লির উদ্দেশে রওনা দিচ্ছেন  মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। চারদিনের সফর সূচিতে একগুচ্ছ কর্মসূচি রয়েছে মুখ্যমন্ত্রীর। সংসদের ভিতরে ও বাইরে বিজেপি বিরোধিতার নীল নকশা তৈরি করতে সমমনস্ক বিরোধী দলের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করবেন তিনি। সেক্ষেত্রে কংগ্রেস নেত্রী সোনিয়া গান্ধীর পাশাপাশি এনসিপি প্রধান শরদ পাওয়ার এবং দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী তথা আম আদমি পার্টির প্রধান অরবিন্দ কেজরিওয়ালের সঙ্গে মমতার দেখা করার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। শরদ এবং কেজরিওয়াল দু'জনের সঙ্গেই মমতার ব্যক্তিগত সম্পর্ক অত্যন্ত ভাল। ২০২৪-এর জন্য বিজেপি বিরোধী জোটের সলতে পাকাতেই  তিনি বাদল অধিবেশন চলাকালীন দিল্লিতে পা রাখছেন, সমীকরণ কিন্তু সেকথাই বলছে। 

 

POST A COMMENT
Advertisement