অটল বিহারী বাজপেয়ী (Atal Bihari Vajpayee)। ভারতীয় রাজনীতিতে সদা প্রাসঙ্গিক এক নাম। শুধু দেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী (Prime Minister) হিসেবেই নয়, তাঁর জনপ্রিয়তা এবং কবিতাও তাঁকে এক আলাদা আসনে বসিয়েছে। আজ যখন দেশের রাজনীতিতে নরেন্দ্র মোদী (Narendra Modi) কেন্দ্রীয় চরিত্র, ঠিক সেই সময় একইভাবে স্মরণ করা হয় বাজপেয়ীজিকেও। কারণ ১৯৯৯ সালে তিনি এমন এক জোটের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন যেখানে ছিল ২৪টি দল, ছিলেন ৮১ জন মন্ত্রী। বহুমতের মিলিত সিদ্ধান্তে চলার এক অনন্য নজির সৃষ্টি করেছিলেন তিনি। সেই অটল বিহারী বাজপেয়ীরই আজ ৯৬তম জন্মদিন।
জোট সরকারের ৫ বছর পূর্তির নজির
২৪টি দল ও ৮১ জন মন্ত্রীকে নিয়ে ছিল তাঁর সরকার। প্রতিটি দলেরই নিজস্ব দাবি দাওয়া ছিল। আঞ্চলিক বাধ্যবাধকতা ছিল। কিন্তু বাজপেয়ী নামের বিশালতার নিচে সমস্ত মতাদর্শই পরিচালিত হয়েছিল একই পথে। তিনিই ছিলেন প্রথম প্রধানমন্ত্রী যিনি জোট সরকার নিয়ে ৫ বছরের কার্যকাল সম্পূর্ণ করেছিলেন। শুধু দল এবং শরিকদের মধ্যেই নয়, বিরোধীদের কাছেও একইরকম সম্মান পেয়েছেন তিনি। তাঁর স্বচ্ছ ভাবমূর্তিকে সবসময় মান্যতা দিয়েছেন বিরোধীরাও।
গোয়ালিয়রে জন্ম
১৯২৪ সালের ২৫ ডিসেম্বর গোয়ালিয়রে জন্ম অটল বিহারী বাজপেয়ীর। মাত্র ১৮ বছর বয়সে যোগ দেন স্বাধীনতা সংগ্রামে। ভারত ছাড়ো আন্দোলনের সময় ২৩ দিনের জন্য জেলেও গিয়েছিলেন তিনি। ১৯৪৭ সালে স্বাধীনতার সময় কানপুরে ডিএবি কলেজে রাষ্ট্রবিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা করছিলেন তিনি। ১৯৫৭ সালে ৩৩ বছর বসয়ে জনসংঘের টিকিটে প্রথম নির্বাচনে লড়ই করেন বাজপেয়ী।
গণতন্ত্রের নার্সারিতে বাজপেয়ী
১৯৫২ সালে দেশে প্রথম নির্বাচন হয়। ১৯৫৭ সালে প্রথম নির্বাচনে লড়াই করেন বাজপেয়ী। আজকের দিনে শুনে অবাক লাগলেও সেই সময় সাইকেল, ট্রেন এমনকি গরুর গাড়িতে করেও প্রচার চালাতেন নেতারা। শুধু মাত্র প্রার্থী পেতেন জিপ। সেই সময় রাজনীতির আঙিনায় কাজ করা শুরু করেন বাজপেয়ী।
দুটি জিপ
জনসংঘের নির্বাচনী প্রতীক ছিল প্রদীপ। বলরামপুর জয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয় বাজপেয়ীকে। ২০০৪ সালে নির্বাচনের আগে এক সাক্ষাৎকারে সেই প্রথম নির্বাচন প্রসঙ্গে বাজপেয়ী জানান, "আমাদের দুটি জিপ ছিল, একটি দল দিয়েছিল, একটি ভাড়া নেওয়া হয়েছিল, আর কোনও উপায় ছিল না, তবে কর্মীরা অবশ্যই ছিলেন।" তিনি আরও বলেন, "যেদিন ভোটগ্রহণ ছিল সেদিন আমার জিপটি জঙ্গলের মধ্যে খারাপ হয়ে যায়। ভোট প্রক্রিয়া শেষ হওয়া পর্যন্ত আমি পৌঁছতে পারিনি। তবে আমি নির্বাচনে জিতে যাই।"
নিজেই ঠেলে চালু করেন জিপ
জনসংঘের তরফে তাকে যে জিপটি দেওয়া হয়েছিল, সেটি প্রতি এক - দু কলোমিটার অন্তর বন্ধ হয়ে যেত। ফের ধাক্কা দিয়ে চালু করতে হত জিপটিকে। একবার একটি নির্বাচনী সভায় যাওয়ার পথে সেভবেই বন্ধ হয়ে যায় জিপটি। সেই সময় দলীয় কর্মীদের সঙ্গে তিনিও জিপে ঠেলতে শুরু করেন। অনেক চেষ্টার পর শেষ পর্যন্ত চালু হয় জিপটি।
বলরামপুর ভবিষ্যতের প্রধানমন্ত্রীকে বেছে নেয়
১৯৫৭ সালে লখনউ, মথুরা ও বলরামপুর থেকে লড়েছিলেন বাজপেয়ী। সেসময় জওহরলাল নেহেরুর বিপুল জনপ্রিয়তা। সেই জনপ্রিয়তার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে লড়াই করেছিলেন বাজপেয়ী। লখনউ ও মথুরায় পরাজিত হলেও বলরামপুর বেছে নিয়েছিল বাজপেয়ীজিকে। তার বেছে নিয়েছিল ভবিষ্যতের প্রধানমন্ত্রীকে। এক বর্ণময় রাজনৈতিক জীবনের পর ২০১৮ সালের ১৬ অগাস্ট শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন বাজপেয়ী।