প্রয়াত বারাণসীর স্বামী শিবানন্দ বাবা। বয়স হয়েছিল ১২৮ বছর। তিনিই ছিলেন দেশের প্রবীণতম যোগসাধক। শনিবার রাত ৮টা ৩০ মিনিটে বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ের স্যার সুন্দরলাল হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। বারাণসীর ভেলপুরে দুর্গাকুণ্ড এলাকার কবীর নগরে বসবাস করতেন এই সাধক। সেখানেই রয়েছে তাঁর আশ্রম। দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে রয়েছে তাঁর অসংখ্য ভক্ত।
১৮৯৬ সালের ৮ আগস্ট অধুনা বাংলাদেশে একটি ভিক্ষুক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন এই যোগসাধক। বাবা-মা ভিক্ষা করেই দিন কাটাতেন। ৪ বছর বয়সে তাঁকে বাবা-মা নবদ্বীপ নিবাসী স্বামী ওঙ্কারানন্দ গোস্বামীর হাতে সমর্পণ করে দিয়েছিলেন। ৬ বছর বয়সে তিনি জানতে পারেন, ক্ষুধার জ্বালায় মা-বাবা ও বোনের মৃত্যু হয়েছএ। স্বামী বিবেকানন্দের ঐতিহাসিক শিকাগো ভাষণের তিন বছর আগে পৃথিবীর আলো দেখেছিলেন তিনি। শৈশবে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর সঙ্গেও সময় কাটিয়েছিলেন স্বামী শিবানন্দ বাবা। তাঁর সুদীর্ঘ জীবনে বহু ঘটনার সাক্ষী থেকেছেন, দেখেছেন বহু উত্থান-পতন।
স্বামী শিবানন্দ বাবার জীবন ছিল সরল এবং পরিমিত। আধ্যাত্মিক সাধনায় নিজেকে নিমজ্জিত করে রেখেছিলেন তিনি। নিয়মিত যোগব্যায়াম করতেন জীবন সায়াহ্নে এসেও। সংযত ও পরিমিত আহার এবং নির্লোভ জীবনযাপনই তাঁর দীর্ঘায়ুর মূল মন্ত্র ছিল বলে জানাচ্ছেন ভক্তরা। ভোর ৩টে থেকে ৪টের মধ্যে ঘুম থেকে উঠে পড়তেন। ভাত খেতেন না। সেদ্ধ খাবারই খেতেন স্বামী শিবানন্দ বাবা। মৃত্যুর আগে পর্যন্তও তিনি লাঠি ছাড়াই দিব্যি হাঁটাচলা করতেন। ২০১৯ সালে কলকাতার দু’টি হাসপাতালে স্বাস্থ্যপরীক্ষা হয় তাঁর। সেখানে তাঁকে সম্পূর্ণ সুস্থ বলে ঘোষণা করেছিলেন চিকিৎসকরা। এমনকী চলতি বছর মহাকুম্ভে পৌঁছে অমৃতস্নানও করেছিলেন তিনি।
যোগী শিবানন্দ বাবার এই অনন্য জীবনযাপন ও সমাজসেবার স্বীকৃতি স্বরূপ ২০২২ সালে ভারত সরকার তাঁকে পদ্মশ্রী সম্মানে ভূষিত করে। রাষ্ট্রপতি ভবনে পদ্মশ্রী গ্রহণের সময় তাঁর সাষ্টাঙ্গ প্রণাম করার ভিডিওটি দেখে মুগ্ধ হয়েছিল গোটা দেশ। সে সময়ে তিনি বলেছিলেন, 'আমি সবার মধ্যেই শিবকে দর্শন করি।'
এই যোগ সাধকের মৃত্যুতে শোকজ্ঞাপন করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে রয়েছে এই যোগসাধনের অসংখ্য অনুগামী। তাঁর মরদেহ বারাণসীর কবীরনগরের আশ্রমে রবিবার পর্যন্ত রাখা থাকবে। সেখানেই তাঁকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে পারবেন ভক্তরা। বারাণসীর হরিশ্চন্দ্র ঘাটে তাঁর শেষকৃত্য সম্পন্ন হবে।