রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সংঘ (আরএসএস)-এর অনুষ্ঠানে কেন যোগ দিয়েছিলেন প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়? আরএসএসের অনুষ্ঠানে যাওয়ায় প্রণবের সঙ্গে মতানৈক্য হয়েছিল তাঁর কন্যা শর্মিষ্ঠা মুখোপাধ্যায়ের। এমনই না-জানা তথ্য এ বার প্রকাশ্যে এল। প্রণব-কন্যা শর্মিষ্ঠার বই 'প্রণব, মাই ফাদার: দ্য ডটার রিমেম্বার্স'-এ সেই ব্যাপারে আলোকপাত করা হয়েছে। প্রণবের ডায়েরির অংশ তুলে ধরা হয়েছে এই বইতে।
সোমবার বই প্রকাশের এক অনুষ্ঠানে প্রণবের আরএসএসের অনুষ্ঠানে যোগদানের বিষয়টি তুলে ধরেছেন শর্মিষ্ঠা। প্রাক্তন আমলা পবন কে বর্মার সঙ্গে এক আলোচনাচক্রে এই বিষয়ে মুখ খুলেছেন প্রণব-কন্যা। বলেছেন, 'এই সিদ্ধান্ত নিয়ে তিন-চার দিন বাবার সঙ্গে তর্কাতর্কি করেছি। এক দিন উনি বললেন যে, আরএসএসকে দেশ স্বীকৃতি দিয়েছে। আমি নই। বাবা মনে করতেন,পারষ্পরিক কথাবার্তার মধ্যে পড়ে গণতন্ত্র। বিরোধীদের সঙ্গে কথা বলাটাও গণতন্ত্র।' ২০১৮ সালের ৬ জুন আরএসএসের অনুষ্ঠানে নাগপুরে গিয়েছিলেন প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি। ওই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসাবে যোগ দিয়েছিলেন প্রণব। কংগ্রেস নেতা হিসাবে রাজনৈতিক জীবন প্রণবের। ফলে আরএসএসের অনুষ্ঠানে প্রণবের যোগ দেওয়া ঘিরে শোরগোল পড়ে গিয়েছিল জাতীয় রাজনীতিতে।
অন্য দিকে, সাভারকর সম্পর্কে প্রণবের ভাবনাও তুলে ধরেছেন শর্মিষ্ঠা। বলেছেন, 'ইন্দিরাজি (ইন্দিরা গান্ধী) বীর সাভারকরের নামে একটি ডাকটিকিট প্রকাশ করেছিলেন। চিঠি লেখা হয়েছিল। বাবা বলতেন, এক দিকে, বিজেপি বলছে পণ্ডিত নেহরুর (জওহরলাল নেহরু) অবদান নেই। আর কংগ্রেস বীর সাভারকরকে কাপুরুষ বলছে। এই ধরনের গল্প তৈরি দেশের জন্য ভাল নয়।'
ইন্দিরা গান্ধী প্রসঙ্গে শর্মিষ্ঠা বলেছেন, 'বাবা বলতেন যে, ইন্দিরার জমানা ছিল বাবার রাজনৈতিক জীবনের সুবর্ণ সময়। বাবার উপর আলাদা নজর রেখেছিলেন ইন্দিরাজি। বাবা যদি কারও অনুগত হয়ে থাকেন, তা হলে তিনি ইন্দিরাজি।'
সনিয়া গান্ধীর প্রসঙ্গও টেনেছেন শর্মিষ্ঠা। একটি কারণে কখনওই ক্ষমা করতে পারেননি প্রণব। কী সেই কারণ? বইয়েতে প্রণব-কন্যা সেই কারণ তুলে ধরেছেন। লিখেছেন, দেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী নরসিমা রাওয়ের সঙ্গে প্রণব খুব ঘনিষ্ঠ ছিলেন। নরসিমার মৃত্যুর পর একটা ঘটনা প্রণবকে কুঁড়ে খেয়েছিল। প্রয়াণের পর নরসিমার দেহ এআইসিসি-র সদর দফতরে আনতে দেননি সোনিয়া। যা পীড়া দিয়েছিল প্রণবকে। আর এই কারণেই ইন্দিরার পুত্রবধূকে কখনওই ক্ষমা করতে পারেননি প্রণব।
এই বই নিয়ে এক সাক্ষাৎকারে প্রণব-কন্যা দাবি করেছেন, কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীর কিছু আচরণ মন:পূত ছিল না প্রণবের। ২০১৩ সালে ইউপিএ সরকার অধ্যাদেশ এনেছিল। সেই অধ্যাদেশ ছিঁড়ে দিয়েছিলেন রাহুল। সনিয়া-পুত্রের এ হেন আচরণে অসন্তুষ্ট ছিলেন প্রণব। যা ঘিরে শোরগোল পড়ে গিয়েছে জাতীয় রাজনীতির অলিন্দে। সেই রেশ কাটতে না কাটতেই সনিয়া প্রসঙ্গে প্রণবের এ হেন অসন্তোষের কথা প্রকাশ্যে এল।