পৃথিবীতে এমন অনেক ঘটনা আছে যা মাঝে মাঝে ঘটে। এর মধ্যে কিছু পৃথিবীর তার অক্ষ এবং সূর্যের চারপাশে ঘূর্ণনের কারণে। এর মধ্যে রয়েছে সূর্যগ্রহণ, চন্দ্রগ্রহণের মতো অনেক জ্যোতির্বিদ্যা সংক্রান্ত ঘটনা। আরেকটি ঘটনা হল 'জিরো শ্যাডো ডে' (Zero Shadow Day)। জিরো শ্যাডো ডে-র আগের ঘটনাটি এই বছরের এপ্রিলে হয়েছিল। আর দ্বিতীয়বার হবে আজ শুক্রবার ১৮ অগাস্ট দুপুর ১২টা ২৪ মিনিট নাগাদ। জিরো শ্যাডো ডে মানে শূন্য ছায়াযুক্ত একটি দিন, যখন সরাসরি সূর্যালোকের কারণে কোনও ব্যক্তি বা বস্তুর ছায়া মুহূর্তের জন্য অদৃশ্য হয়ে যায়। তখন সূর্য অক্ষাংশ রেখার ঠিক উপরে থাকে। সূর্যের অবস্থানের নিরিখে মাটিতে দাঁড়িয়ে থাকা ব্যক্তির ছায়া উল্লম্ব ভাবে তাঁরই নীচে পড়বে। যাতে ছায়া চোখে ধরা দেবে না। মনে হবে কোনও ছায়া পড়েনি।
শুক্রবার দক্ষিণ ভারতের কিছু অংশে কিছু সময়ের জন্য ছায়া পড়বে না। ম্যাঙ্গালোর, বান্টওয়াল, সাক্লেশপুর, হাসান, বিদাদি, বেঙ্গালুরু, দাসারহাল্লি, বাঙ্গারাপেট, কোলার, ভেলোর, আরকোট, আরাককোনাম, শ্রীপেরামবুদুর, তিরুভাল্লুর, আভাদি, চেন্নাই, ইত্যাদিতে শুক্রবার শূন্য ছায়া দিন হবে। এই পরিস্থিতিকে বলা হয় জিরো শ্যাডো এবং এই বিশেষ দিনটিকে বলা হয় জিরো শ্যাডো ডে। এই বিশেষ পরিস্থিতির কারণ হল পৃথিবীর ঘূর্ণনের অক্ষের কাত, যা সূর্যের চারপাশে পৃথিবীর কক্ষপথে লম্ব না হয়ে ২৩.৫ ডিগ্রির দিকে ঝুঁকে আছে। এ কারণে সারা বছরই সূর্যের অবস্থান উত্তর ও দক্ষিণের মধ্যে পরিবর্তিত হতে থাকে।
যখন দিন রাত সমান
সারা বছর সূর্যের উত্তর ও দক্ষিণ দিকের গতিবিধি উত্তরায়ণ ও দক্ষিণায়ন নামেও পরিচিত। দক্ষিণ থেকে উত্তরে যাওয়ার প্রক্রিয়া ২২ ডিসেম্বর থেকে শুরু হয় এবং সাধারণত ২১ মার্চ সূর্য বিষুব রেখার ঠিক উপরে আসে। এই দিন বিকেলে এই লাইনে কোনও ছায়া তৈরি হয় না। এই দিনে পৃথিবীতে দিন রাত সমান। একে বলে সম্পাত, বিষুব। শূন্য ছায়ার অবস্থা শুধুমাত্র কর্কট ও মকর রাশির কাছাকাছি অঞ্চলে তৈরি হয়। এই দিনে সূর্যের রশ্মি পৃথিবীর পৃষ্ঠে প্রায় ঋজু থাকে।
এটি বছরে মাত্র দুবার হয়
সাধারণত ২১ মার্চের ঘটনার পর ২১ জুন থেকে সূর্য দক্ষিণ দিকে যেতে থাকে এবং আবার ২১ সেপ্টেম্বর আসে সম্পত দিবস। এইভাবে, পৃথিবীর ২৩.৫ ডিগ্রি অক্ষাংশের মধ্যে, উত্তর ও দক্ষিণের মধ্যে, অর্থাৎ কর্কটক্রান্তি এবং মকরক্রান্তির মধ্যে শূন্য ছায়ার অবস্থান তৈরি হতে পারে। এই দুটি রেখার মধ্যে সর্বত্র বছরে মাত্র দুবার এটি ঘটে। এইবার বছরে দ্বিতীয়বার ঘটনাটি ঘটবে আজ।
শূন্য ছায়া দিবসকে জ্যোতির্বিজ্ঞানের গণনার ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হয়। বিজ্ঞানীরাও পৃথিবীর পরিধি পরিমাপের জন্য এই ঘটনাটি ব্যবহার করেন। আমাদের জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা ২০০০ বছর আগেও এই ধরনের গণনা করতেন। এর মাধ্যমে আজ পৃথিবীর ব্যাস এবং পৃথিবীর ঘূর্ণনের গতিও পরিমাপ করা হয়। দুটি স্থানে শূন্য ছায়ার সময়ের পার্থক্যের মাধ্যমে এটি গণনা করা হয়। শুধু তাই নয়, এই বিশেষ দিনে সূর্য থেকে আসা রশ্মি যখন উত্তল লেন্সের মধ্য দিয়ে যায়, তখন একই বিন্দুতে পড়ে। একই সময়ে, এটি সাধারণ দিনে ঘটে না। শূন্য ছায়া দিবসে লেন্স ব্যবহার করা আরও সহজ এবং কার্যকর।