
বিপদ থেকে উদ্ধার পাওয়ার জন্য দেবী বিপত্তারিণীর পুজো করা হয়। বিশ্বাস অনুযায়ী, ভক্তি মনে এই পুজো করলে, যে কোনও বিপদ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। হিন্দু ধর্মে বিপত্তারিণী ব্রতের গুরুত্ব অনেক। দেবী দুর্গা ১০৮ অবতারের অন্যতম এবং দেবী সঙ্কটনাশিনীর একটি রূপ মা বিপত্তারিণী।
আষাঢ় মাসের রথযাত্রা থেকে উল্টো রথের মধ্যে যে শনিবার ও মঙ্গলবার পড়ে, সেই দিনগুলিতেই বিপত্তারিণীর ব্রত পালন করা হয়। সংসারের সব বিপদ দূর করতে হিন্দু মহিলারা এই ব্রত পালন করেন। এই পুজোর বিশেষ নিয়ম হল, সব কিছু ১৩টা করে উৎসর্গ করতে হয় দেবীকে।
বিপত্তারিণী পুজো ২০২৫
প্রতি বছর দু'দিন করে পড়ে বিপত্তারিণী পুজো। এবছর বিপত্তারিণীর ব্রত পালন করা যাবে ২৮ জুন (১৩ আষাঢ়), শনিবার এবং ১ জুলাই (১৬ আষাঢ় ), মঙ্গলবার।
ব্রত পালনে কী কী লাগে?
ঘট, আম্র পল্লব, শীষ সহ ডাব, একটি নৈবেদ্য, ১৩ টি গিঁট দেওয়া লাল সুতো (সঙ্গে ১ত টি দূর্বা বাঁধা), ১৩ রকম ফুল, ১৩ রকম ফল, ১৩ গাছি লাল সুতো, ১৩টি দূর্বা, ১৩টি পান ও ১৩টি সুপুরি।
বিপত্তারিণী পুজোর নিয়মকানুন
ব্রতের আগের দিন নিরামিষ আহার করলে ভাল। উপবাস করে নিষ্ঠা করে সব উপকরণ দিয়ে মা বিপত্তারিণীর পুজো করতে হয়। পুজো শেষে ১৩ টা লুচি ও ১৩ রকমের ফল খেতে হয় প্রসাদ হিসাবে। পুজো হয়ে গেলে ঠাকুরের পায়ে অর্পণ করা ১৩ টি গিঁট দেওয়া লাল সুতো (ডোর) হাতে বেঁধে নিতে হয়। এই লাল সুতো মেয়েদের বাম ও ছেলেদের ডান হাতে পড়তে হয়। এটি অন্তত তিনদিন হাতেই রাখার নিয়ম।
বিপত্তারিণী পুজোর বিধি নিষেধ
* বিপত্তারিণী পুজোর আগের দিন নিরামিষ এবং পুজো শেষে ১৩ টা লুচি ও ১৩ রকমের ফল খেতে হয় প্রসাদ হিসাবে গ্রহণ করুণ। তবে চাল বা গমের জিনিস খাওয়া একেবারেই নিষেধ।
* কোনও অপরিচ্ছন্ন স্থানে বিপত্তারিণী পুজো করবেন না। নয়তো ঘরের সুখ ও শান্তির নষ্ট হয়।
* পুজোর চলাকালীন কারও সঙ্গে কথা বলবেন না। এর ফলে দেবী ক্রুদ্ধ হতে পারেন এবং অর্থ সম্পর্কিত সমস্যা শুরু হয়। সেই সঙ্গে ব্যবসায় ক্ষতি, বাড়িতে অসুস্থতা দেখা দিতে পারে।
* বিপত্তারিণী পুজোর সময় কখনই কাউকে অপমান করবেন না। এমনকি এদিন কোনও মহিলার সম্পর্কে কুরুচিকর কথা বলবেন না। এতে মা লক্ষ্মী ক্রুদ্ধ হন।
* এদিন পরিবারের নিকট সদস্য ছাড়া কোনও ব্যক্তিকে টাকা দেবেন না ও নিজেও ধারও করবেন না। মনে করা হয় এই সময় প্রদত্ত অর্থ ফেরত আসে না। সেই সঙ্গে, দেবী রুষ্ট হন এবং সম্পর্কও নষ্ট হয়ে যায়।
* এই পুজোর দিন পরিবারের কোনও সদস্যের মদ্যপান করা এড়ানো উচিত।
* বিপত্তারিণী পুজোর দিন কাউকে চিনি দেবেন না। জ্যোতিষশাস্ত্র অনুযায়ী, চিনির শুক্র এবং চন্দ্রের সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে। অন্যদিকে শুক্র বস্তুগত সুখের কর্তা। তাই এদিন চিনি দিলে শুক্র দুর্বল হয় এবং সংসারে অশান্তির পাশাপাশি আর্থিক সংকট দেখা দেয়।