বছরের নতুন পঞ্জিকা বা ক্যালেন্ডার হাতে পেলেই বাঙালিরা যেই দিনগুলিতে সবার আগে চোখ বোলায়, তার মধ্যে দুর্গাপুজো (Durga Puja) একটি। উৎসবপ্রেমী বাঙালির সবচেয়ে বড় পার্বণ এই দুর্গা পুজো। আশ্বিন মাসে প্রায় দশ দিন ধরে দুর্গাপুজোর উৎসব পালিত হয়। দুর্গাপুজোর পাঁচ দিন মহাষষ্ঠী, মহাসপ্তমী, মহাঅষ্টমী, মহানবমী এবং বিজয়া দশমী হিসেবে পরিচিত।
চার ছেলেমেয়েকে নিয়ে উমা কৈলাশ থেকে মর্তে বাপের বাড়ি এসে দিন পাঁচেক থেকে ফিরে যান শ্বশুরবাড়ি। আর ঘরের মেয়েকে আদরে যত্নে ভরিয়ে, জাকজমকপূর্ণ ভাবে সেই উদযাপন করেন পশ্চিমবঙ্গ তো বটেই, এমনকি গোটা বিশ্বের বাঙালি। দেবী দুর্গা, মহিষাসুরকে বধ করেছিলেন, এজন্যেই বিশ্বাস করা হয় যে, এই উৎসব খারাপ শক্তির বিনাশ করে শুভশক্তির বিজয়।
দুর্গাপুজোর সঙ্গে জড়িয়ে আছে নানা রীতিনীতি। সেরকমই একতি পরিচিত রীতি হল বিজয়া দশমীর দিন নীলকণ্ঠ পাখি ওড়ানো। এই রীতির সঙ্গে জড়িয়ে আছে বিভিন্ন কাহিনি। জানুন নীলকণ্ঠ পাখি ওড়ানোর পৌরাণিক ব্যাখ্যা
পুরাণ অনুযায়ী, রাবণকে বধ করার আগে, নীলকণ্ঠ পাখির দর্শন করেছিলেন শ্রীরামচন্দ্র। সেজন্যে এই পাখিকে শুভ বলে মনে করা হয়। অনেকে বিশ্বাস করেন দশমী বা দশহরার দিন নীলকণ্ঠ দেখলে, পাপ মুক্ত হওয়া যায় এবং ইচ্ছাপূরণ হয়। অপর দিকে সমুদ্র মন্থনের পর বিষের তেজে দেবাদিদেব মহাদেবের গলা নীল বর্ণের হয়ে যায়। এজন্যেই শিবের অপর নাম নীলকণ্ঠ। মহাদেবের দোসর মনে করা হয় এই নীলকণ্ঠ পাখিকে। হিন্দু ধর্মের প্রাচীন বিশ্বাস অনুযায়ী, দশমীর দিন দুর্গা প্রতিমা নিরঞ্জনের আগে নীলকণ্ঠ পাখি উড়ানো হয়। এই পাখিই কৈলাসে গিয়ে শিবকে বার্তা দেয় যে উমা শ্বশুরবাড়ি ফিরছে।
অনেক জায়গাতেই দশমী বা দশহরার দিন নীলকণ্ঠ পাখি ওড়ানোর রীতি রয়েছে। তবে এই পাখি এখন প্রায় অবলুপ্তির পথে। তাই অনেকেই পাখি কেনা -বেচা প্রায় বন্ধ বললেই চলে। অনেকে প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়েও নিয়ে আসেন নীলকণ্ঠ। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই আজকাল নিয়ম রক্ষার স্বার্থে অনেকে নকল পাখি কিনে আনেন।