
সনাতন ধর্মের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উৎসব হল রথযাত্রা। ভারতের ওড়িশা ও পশ্চিমবঙ্গে মূলত এই উৎসব বিশেষ উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে পালন করা হয়। বিশেষ তিথিতে ধুমধাম করে রথযাত্রার উৎসব পালিত হয় পুরী, মাহেশ, ইস্কনের মন্দিরে। শুধু তাই নয়, যে সমস্ত মন্দিরে ও বনেদি বাড়িতে জগন্নাথ দেব আছে, সেখানেও ঘটা করে পালন করা হয় এই উৎসব।
রথযাত্রার সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে আরও একটি রীতি। প্রতি বছর রথযাত্রার দিন দুর্গাপুজো প্যান্ডেলের খুঁটি পুজো হয়। খুঁটি পুজোর মাধ্যমেই দুর্গা পুজোর ঢাকে কাঠি পড়ে। এদিন পুজো করতে না পারলে, পরের অন্যান্য শুভ দিনগুলিকে বেছে নিতে হয়। কত কয়েক বছর ধরে জাকজমক করে খুঁটি পুজো উৎসব পালন করা একটা ট্রেন্ড। তবে এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে নানা ঐতিহ্য- কাহিনি।
খুঁটি পুজো হল দুর্গাপুজোর একটি আচার যা রথযাত্রার দিন বা তার কাছাকাছি সময়ে অনুষ্ঠিত হয়। এটি মূলত দুর্গাপুজোর সূচনা হিসেবে ধরা হয় এবং প্যান্ডেল তৈরির জন্য খুঁটি পোঁতার আগে এই পুজো করা হয়। এই দিনটিকে দুর্গাপুজোর আনুষ্ঠানিক সূচনা হিসাবেও ধরা হয়। এই পুজো দেবীর মূর্ত প্রতীককে মণ্ডপে আসার জন্য আমন্ত্রণ জানায়। খুঁটি পুজোর মাধ্যমে মণ্ডপ এবং দেবী মূর্তিকে সুরক্ষা প্রদান করা হয়, যাতে কোনও অশুভ শক্তি তাদের ক্ষতি করতে না পারে।
খুঁটি পুজোর ধারনাটি এসেছে প্রায় শত বছর পুরনো এক রীতি থেকে। আগে এত ক্লাব, থিম, প্রতিযোগীতার পিছনে ছোটাছুটি ছিল না। পুজো মানেই ছিল বনেদি বাড়ির সাবেকি প্রতিমা। আর সেই সময় মূলত বাড়ির ঠাকুর দালানে গড়া হত প্রতিমা। অনেকেই রথযাত্রার শুভ দিনে, মাটির প্রতিমার কাঠের ফ্রেমকে পুজো করতেন। যেটি কাঠামো পুজো বলেই পরিচিত। এরপর একটু একটু করে গড়ে উঠত দুর্গা প্রতিমা।
এক সময় পুজো প্যান্ডেল মানে ছিল বাঁশ ও রঙিন কাপড়ের তৈরি। ধীরে ধীরে সেই বাঁশের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে থার্মোকল, চট, প্লাস্টিক, কাঠ, পাট প্লাস্টার অফ প্যারিস, সিমেন্ট আরও কত রকমারি সামগ্রী। কলকাতার হেভিওয়েট পুজো প্যান্ডেলগুলোর পাশাপাশি, ছোটখাটো প্যান্ডেলেও থাকে থিমের নয়া চমক৷
যত দিন যাচ্ছে বেড়ে চলেছে খুঁটি পুজোর চাকচিক্য। আগের পুজো প্যান্ডেলের উদ্বোধনে দেখা যেত তারকা বা রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের। কিন্তু যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে খুঁটি পুজোর দিন থেকে বিভিন্ন তাবড় পুজো প্যান্ডেলগুলিতে বসে আমন্ত্রিত তারকাদের হাট।
রথযাত্রা ২০২৫-র দিনক্ষণ
এবছর রথযাত্রা পড়েছে ২৭ জুন (১২ আষাঢ়), শুক্রবার এবং উল্টো রথযাত্রা (পুনর্যাত্রা) - ৫ জুলাই (২০ আষাঢ়), শনিবার। ২৬ জুন বেলা ২/৩৯/৫৮ থেকে ২৭ জুন বেলা ১/১৮/২৩ পর্যন্ত থাকবে দ্বিতীয়া তিথি।