সনাতন ধর্মে ভগবান গণেশের গুরুত্ব অনেক। সব দেব-দেবীর পুজো শুরু হয় গণেশের মন্ত্রোচ্চারণ করেই। শিব ও পার্বতী পুত্র গণেশকে, হিন্দুদের সমৃদ্ধি ও সৌভাগ্যের দেবতা মনে করা হয়। সিদ্ধিদাতা গণেশের জন্মোৎসব গণেশ চতুর্থী নামে পরিচিত। ভাদ্রপদ মাসের চতুর্থী তিথির শুক্লপক্ষে সাধারণত পালিত হয় এই উৎসব।
গণেশ চতুর্থী ২০২৪ দিনক্ষণ
* এই বছর গণেশ চতুর্থী পড়েছে ৭ সেপ্টেম্বর (বাংলায় ২১ ভাদ্র), শনিবার।
* ৬ সেপ্টেম্বর ঘ ১২/১৬/৪৫ মিনিট থেকে ৭ সেপ্টেম্বর ঘ ২/১২/৪৯ মিনিট পর্যন্ত থাকবে চতুর্থী তিথি।
* অমৃতযোগ- দিবা ঘ ৯/২৯ গতে ১২/৪২ মধ্যে এবং রাত্রি ঘ ৭/৫৪ গতে ১০/১৮ মধ্যে ও ১১/৫৩ গতে ১/২৯ মধ্যে ও ২/১৭ গতে ৩/৫৩ মধ্যে।
গণেশ চতুর্থী উৎসব
প্রায় দশ দিন ধরে চলে গণেশ চতুর্থী উৎসব। এগারোতম দিনে গণেশ মূর্তির নিরঞ্জন করা হয়। পুজোর এই শেষ দিনকে বলা হয় 'অনন্ত চতুর্দশী'।
গণেশ চতুর্থী উদযাপন
গণেশ চতুর্থীতে প্রায় সারা দেশজুড়ে মহাসমারোহে চলে উৎযাপন। মহারাষ্ট্রের গণেশ চতুর্থী উদযাপন, পশ্চিমবাংলার দুর্গাপুজোর মতোই বড়। এছাড়াও গোয়া, কর্ণাটক, রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ, তামিলনাড়ু, অন্ধ্রপ্রদেশ, তেলেঙ্গানা, ওড়িশা, গুজরাট, ছত্তিশগড়, পশ্চিমবঙ্গের মতো রাজ্যগুলিতেও বিশেষ উৎসাহ ও উদ্দীপনার সঙ্গে পালিত হয়। এমনকী শ্রীলঙ্কায় তামিল হিন্দুরাও এই উৎসব পালন করেন। কন্নড়, তামিল, তেলেগু ও সংস্কৃত ভাষায় গণেশ চতুর্থী উৎসব বিনায়ক চতুর্থী বা বিনায়ক চবিথি নামে পরিচিত। কোঙ্কণি ভাষায় চবথ এবং নেপালিতে এই উৎসবকে বলে চথা। এই বিশেষ উৎসবকে গণেশ মহোৎসবও বলা হয়। আগে মূলত ব্যবসায়ীরা গণেশ চতুর্থী পালন করতেন। তবে বর্তমানে বেশিরভাগ বাড়িতেও আয়োজন করা হয় গণেশ বন্দনার।
গণেশ মূর্তি স্থাপনের নিয়মকানুন
* পূর্ব অথবা উত্তর -পূর্ব কোণে গণেশ মূর্তি স্থাপনের নিয়ম। ভুল করেও দক্ষিণ বা দক্ষিণ - পশ্চিমে মূর্তি স্থাপন করবেন না।
* দরজার দিকে মুখ করে গণেশের মূর্তি স্থাপন করা শুভ। কারণ মনে করা হয়, তিনি মঙ্গলমুখী। সংসারে সুখ, শান্তি, সমৃদ্ধি ও সৌভাগ্য নিয়ে আসে গণপতি।
* তবে খেয়াল রাখতে হবে, গণেশ মূর্তি যেই জায়গায় স্থাপন করবেন, সেখানটা জেন ফাঁকা না থাকে। অর্থাৎ মূর্তির পিছনে দেওয়াল থাকা বাঞ্চনীয়।
* কিছু স্থানে গণেশ মূর্তি রাখা একেবারেই শুভ নয়। বেডরুম, গ্যারেজ, সিঁড়ির নীচে, বার্থরুম বা লন্ড্রি অঞ্চল এই জায়গাগুলোতে গণেশ মূর্তি রাখলে হিতে বিপরীত হয়। সিঁড়ির নীচে, বার্থরুমে নেতিবাচক শক্তি থাকে। সেইজন্যেই এর আশেপাশেও মূর্তি রাখলে তা অশুভ।
* কখনই একই স্থানে দুটি গণেশ মূর্তি রাখবেন না। বাস্তু মতে, এতে দুই শক্তির নিজেদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। তাই বাড়িতে আলাদা আলাদা স্থানে গণেশ মূর্তি রাখাই শ্রেয়।
* মনে করা হয়, বাম দিকে শুঁড় রয়েছে, এরকম গণেশের মূর্তি বাড়িতে রাখা সবচেয়ে শুভ। ডান দিকে শুঁড় রয়েছে এরকম মূর্তির থেকে বাম দিকে শুঁড় থাকা গণেশ, শীঘ্র প্রসন্ন হন।
শাস্ত্র মতে গণপতি সবচেয়ে সন্তুষ্ট হন সিঁদুর, লাল চন্দন, লাল ফুল ও দূর্বাতে। গণেশ চতুর্থীতে তো বটেই, এছাড়াও প্রতি মঙ্গলবার, এই সামগ্রীগুলি দিয়ে নিষ্ঠা করে গণেশ পুজো করলে ভক্তের মনোবাঞ্ছা পূরণ হয়। বাড়িতে বিরাজ করে সুখ, শান্তি, সমৃদ্ধি।