
ভারতীয়দের অনেক উৎসবের মধ্যে সকলের পছন্দের তালিকায় প্রথমের দিকেই থাকে দোল (Dol Yatra) বা হোলি (Holi)। প্রায় গোটা দেশ জুড়ে সাড়ম্বরে পালন করা হয় এই উৎসব। দোলযাত্রা হিন্দুদের একটি ধর্মীয় উৎসব। উত্তর ভারতে এই উৎসবের নাম হোলি, অনেক জায়গায় একে হোরি-ও বলা হয়। এই উৎসব বসন্ত, প্রেম এবং রঙের উৎসব নামেও পরিচিত ৷ দোল পূর্ণিমা হিন্দু ধর্মের জন্যে খুব শুভ বলে মনে করা হয়। সাধারণত ফাল্গুন মাসেই হয় দোল উৎসব। এই বিশেষ দিন উপলক্ষে বিভিন্ন জায়গায় পুজো হয়।
দোলযাত্রা উৎসবে রাধা ও কৃষ্ণের শাশ্বত ও ঐশ্বরিক প্রেম উদযাপন করা হয়। এদিন রাধা-কৃষ্ণের পুজো করা হয় বিশেষত। বৈষ্ণব বিশ্বাস অনুযায়ী, দোল পূর্ণিমার দিন বৃন্দাবনে শ্রীকৃষ্ণ আবির নিয়ে রাধিকা ও অন্যান্য গোপীনীদের সঙ্গে রং খেলায় মেতেছিলেন। আবার শান্তিনিকেতনে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বসন্ত উৎসব চালু করেছিলেন। তাই রঙিন এই উৎসবের দিকে মুখিয়ে থাকেন অনেকেই।
ভারতের ব্রজ অঞ্চলে, যেখানে কৃষ্ণ ছোট থেকে বড় হয়, সেখানে রাধা ও কৃষ্ণের স্বর্গীয় ভালোবাসার স্মৃতি হিসেবে দিনটি রাঙা পঞ্চমী হিসেবে উদযাপিত হয়। বসন্তের সূচনার সঙ্গে হোলি প্রেমের উৎসব হিসেবে দিনটি পালিত হয়। ঋষি গর্গের রচিত গর্গ সংহিতায় ছিল সাহিত্যের প্রথম কাজ যেখানে রাধা ও কৃষ্ণের হোলি খেলার বর্ণনা উল্লেখ করা হয়েছে। জেনে নিন এবছরের দোলযাত্রার দিনক্ষণ।
দোল ও হোলির দিনক্ষণ
এই বছর দোলযাত্রা পড়েছে ১৪ মার্চ (বাংলায় ২৯ ফাল্গুন)। এই দিনটিকে বসন্ত উৎসবও বলা হয়। হোলি সাধারণত দোলের পরের দিন পালিত হয়। তবে এবছর হোলি উৎসব পড়েছে ১৪ মার্চ। ১৩ মার্চ সকাল ১০/২৪ মিনিট থেকে ১৪ মার্চ সকাল ১১/৩৫ মিনিট পর্যন্ত এই বছর পূর্ণিমা থাকবে।
অমৃতযোগ
দিবা ঘ ৭।৬ মধ্যে ও ৭।৫৬ গতে ১০।২৪ মধ্যে ও ১২।৫২ গতে ২।৩১ মধ্যে ও ৪।১০ গতে ৫।৪২ মধ্যে এবং রাত্রি ঘ ৭।২২ গতে ৮।৫৫ মধ্যে ও ৩।৮ গতে ৩।৫৪ মধ্যে।
মাহেন্দ্রযোগ
রাত্রি ঘ ১০।২৮ গতে ১১।১৫ মধ্যে ও ৩।৫৪ গতে ৫।৫১মধ্যে।
হোলিকা দহন কবে?
হোলিকা দহন উৎসব হয় গোটা উত্তর ভারত জুড়ে। মনের কালিমাকে দূরে সরিয়ে আলোর উজ্জ্বলতায় জীবনকে ভরিয়ে তোলার প্রতিশ্রুতির জন্যে বিভিন্ন জায়গায় পালিত হয়। এবছর হোলিকা দহন হবে ১৩ মার্চ।
কোথায়- কীভাবে শুরু হয়েছিল হোলি উৎসব?
প্রায় গোটা দেশের মানুষ হোলির উৎসব উদযাপন করেন। প্রায় এক মাস আগে থেকে চলে তার প্রস্তুতি। তবে অনেকেরই অজানা এই উৎসবের শুরু কোথা থেকে হয়েছে। রঙের এই উৎসব প্রথম শুরু হয় ঝাঁসির বুন্দেলখন্ডের আর্চ শহর থেকে। এক সময় এটি রাজা হিরণ্যকশ্যপের রাজত্ব ছিল। দৈত্যরাজের ছেলে প্রহ্লাদ ও তার বোন হোলিকার বিশেষ একটি ঘটনার থেকেই হোলির উৎসবটি শুরু হয়। ঝাঁসির সদর দফতর থেকে আর্চ শহরটি প্রায় ৭০ কিমি দূরে। এখানেই হোলির সূচনা হয়। পুরাণ অনুযায়ী, দৈত্যরাজ হিরণ্যকশ্যপের রাজধানী ছিল এই আর্চ। তিনি একটি বর পেয়েছিলেন যে, কোনও পশু বা মানুষ তাকে মারতে পারবে না কখনও এবং দিনে বা রাতে তার মৃত্যু হবে না। নিজেকে অমর মনে করে প্রচণ্ডভাবে দৃপ্ত ও উজ্জীবিত হয়ে সে।
হিরণ্যকাশ্যপ স্বৈরাচার নিয়ম-কানুন করে রাজ্য শাসন করতে শুরু করেন। তার ছেলে প্রহ্লাদ পরম বিষ্ণুভক্ত ছিলেন। কিন্তু তিনি ছিলেনঘোর বিষ্ণুদ্বেষী। ফলস্বরুপ হিরণ্যকশ্যপ বিভিন্ন ভাবে চেষ্টা করেন প্রহ্লাদের প্রাণনাশের। কিন্তু বিষ্ণুর আশীর্বাদে তার কোনও ক্ষতি হয় না। এরপর এই প্রহ্লাদকে আগুনে পুড়িয়ে মারতে চেয়েছিলেন হিরণ্যকাশ্যপের বোন হোলিকা। সেই উদ্দেশে প্রহ্লাদকে কোলে নিয়ে আগুনে ঝাঁপ দেয় সে। হোলিকা ভেবেছিলেন, তিনি তার মায়াবী ক্ষমতাবলে বেঁচে যাবেন এবং পুড়ে ছাই হয়ে যাবে প্রহ্লাদ। কিন্তু আসলে হয়েছে তার উল্টোটাই।
বিষ্ণুভক্ত প্রহ্লাদের গায়ে এতটুকু আঁচ লাগেনি এবং আগুনে পুড়ে মৃত্যু হয় কাশ্যপ কন্যার। প্রহ্লাদকে বাঁচাতে বিষ্ণুর হোলিকা বধকে উদযাপন করা হয় এভাবেই। এরপরই ভগবান বিষ্ণু নরসিংহ অবতার ধারণ করে হিরণ্যকাশ্যপকে দিন ও রাতের সন্ধিকালে নখ দিয়ে রক্তাক্ত করে ধ্বংস করেন। বর্তমানে শুধু বুন্দেলখন্ড নয়, সমগ্র দেশেই হোলিকা দহনের রীতি পালিত হয়। প্রতি বছর আর্চের লোকেরা নাচে-গানে আনন্দের সঙ্গে উদযাপন করেন এই উৎসব। মনে করা হয় সেখান থেকেই উৎপত্তি এই উৎসবের।