
হিন্দু স্থাপত্য দেবতা বিশ্বকর্মার সন্তুষ্টি লাভের আশায় এই পুজো করা হয়। তাকে স্বয়ম্ভু এবং বিশ্বের স্রষ্টা হিসাবে বিবেচনা করা হয়। বিভিন্ন পেশার মানুষ বিশ্বকর্মা পুজো করেন। উন্নত ভবিষ্যৎ, নিরাপদ কাজের পরিস্থিতি এবং নিজেদের দক্ষতা বৃদ্ধির মাধ্যমে সর্বোপরি নিজ নিজ ক্ষেত্রে সাফল্যের জন্য প্রার্থনা করেই এই পুজো হয়।
মূলত কারাখানা, শিল্প প্রতিষ্ঠান, দোকান এবং যন্ত্রপাতি আছে এরকম সব স্থানেই বিশ্বকর্মা পুজো হয়। পুরাণ মতে ব্রহ্মাপুত্র বিশ্বকর্মা, গোটা বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের নকশা তৈরি করেছিলেন।
বিশ্বকর্মার জন্ম
ভাদ্র মাসের সংক্রান্তি তিথিকে 'কন্যা সংক্রান্তি' বলা হয়। পুরাণ মতে এই তিথিতেই বিশ্বকর্মার জন্ম হয়। হিন্দু ধর্মে সব দেব -দেবীর পুজোর তিথি স্থির হয় চন্দ্রের গতি প্রকৃতির উপর ভিত্তি করে। কিন্তু শুধুমাত্র বিশ্বকর্মা পুজোর তিথি স্থির করা হয়, সূর্যের গতি প্রকৃতির উপর নির্ভর করে।
দেবশিল্পী বিশ্বকর্মা
বিশ্বকর্মা, কৃষ্ণের রাজধানী দ্বারকা শহরটি নির্মাণ করেছিলেন। এছাড়াও তিনি রামায়ণে বর্ণিত লঙ্কা নগরী, পাণ্ডবদের মায়া সভা, রামায়ণে উল্লিখিত ব্রহ্মার পুষ্পক রথ, দেবতাদের বিভিন্ন গমনাগমনের জন্য বিভিন্ন বাহন, দেবপুরী এবং বিষ্ণুর সুদর্শন চক্র, শিবের ত্রিশূল, কুবেরের অস্ত্র, ইন্দ্রের বজ্র, কার্তিকের শক্তি সহ দেবতাদের জন্য বহু কল্পিত অস্ত্রের স্রষ্টা। বিশ্বকর্মার ভক্তরা বিশ্বাস করেন যে তিনি এই বিশ্বের সব কর্মের সম্পাদক। তিনি সব ধরনের শিল্পের প্রকাশক। শিল্পবিদ্যায় বিশ্বকর্মার রয়েছে একচ্ছত্র অধিকার। তিনি নিজেই চতুঃষষ্টিকলা, স্থাপত্যবেদ এবং উপবেদ এর প্রকাশক। কথিত আছে, পুরীর বিখ্যাত জগন্নাথমূর্তিও তিনিই নির্মাণ করেন। তাকে স্বর্গীয় সূত্রধরও বলা হয়।
সূর্যর উত্তরায়ণ
হিন্দুদের অন্যান্য পুজোর সময় চাঁদের গতি-প্রকৃতির উপর নির্ধারিত হলেও বিশ্বকর্মার পুজোর সময় সূর্যের গতি প্রকৃতির উপর নির্ভর করে নির্ধারিত হয়। যখন সূর্য সিংহ রাশি থেকে কন্যা রাশিতে গমন করে, তখন সময় আসে এই উত্তরায়ণের। মনে করা হয়, সেই সময়ই দেবতারা নিদ্রা থেকে জেগে ওঠেন এবং বিশ্বকর্মা পুজোর আয়োজন করা হয়। শুধু তাই নয়, হিন্দু পঞ্জিকার দুই শাখ- সূর্য সিদ্ধান্ত এবং বিশুদ্ধ সিদ্ধান্ত উভয়ই এই পুজোর ক্ষেত্রে একমত।
বিশ্বকর্মা পুজো ২০২৫ -র দিনক্ষণ
* এই বছর বিশ্বকর্মা পুজো পড়েছে ১৭ সেপ্টেম্বর (বাংলায় ৩১ ভাদ্র), মঙ্গলবার।
* অমৃত যোগ - দিবা ঘ ৭।২ মধ্যে ও ৯। ৩১ গতে ১১। ১০ মধ্যে ও ৩। ১৮ গতে ৪।৫৭ মধ্যে এবং রাত্রি ঘ ৬।৩৩ গতে ৮।৫৩ মধ্যে ও ১। ৩১ গতে ৫। ২৭ মধ্যে।
* মাহেন্দ্রযোগ- দিবা ঘ ১।৩৯ গতে ৩। ১৮ মধ্যে এবং রাত্রি ঘ ৮।৫৩ গতে ১০। ২৫ মধ্যে।
বিশ্বকর্মা পুজোর মন্ত্র
দংশপালঃ মহাবীরঃ সুচিত্রঃ কর্মকারকঃ। বিশ্বকৃৎ বিশ্বধৃকতঞ্চ বাসনামানো দণ্ডধৃক। ওঁ বিশ্বকর্মণে নমঃ।
শুধু কলকারাখানা, শিল্পক্ষেত্র নয়, অনেক বাড়িতেও বিশ্বকর্মা পুজো করা হয়। এই বিশেষ দিন পুজোর পর রকমারি খাওয়া দাওয়ায় মেতে ওঠেন সকলে। বিশ্বকর্মা পুজোর দিন সমবেতভাবে ঘুড়ি ওড়ানো রীতি রয়েছে। এছাড়াও এই পুজোর আগের দিন পশ্চিমবাংলার আদি বাসিন্দারা অর্থাৎ এদেশীয়রা সারা রাত জেগে রান্না পুজো করেন। এটিও বাঙালিদের একটি জনপ্রিয় পার্বণ।