ভারতের প্রাচীন ইতিহাসে যাঁদের নাম শ্রদ্ধার সঙ্গে উচ্চারিত হয়, তাঁদের মধ্যে অন্যতম আচার্য চাণক্য। তিনি ছিলেন একাধারে দার্শনিক, অর্থনীতিবিদ, রাষ্ট্রনীতি বিশারদ ও কূটনীতিবিদ। শুধু মগধ সাম্রাজ্যের রাজনীতিতেই নয়, পরবর্তী প্রজন্মের জীবনবোধেও তাঁর চিন্তা-চেতনার ছাপ গভীরভাবে রয়ে গেছে। তাঁর রচিত ‘চাণক্য নীতি’ গ্রন্থে জীবনের নানা দিক নিয়ে যে নির্দেশনা দিয়েছেন, তা আজও সমানভাবে প্রাসঙ্গিক।
চাণক্যের মতে, জীবনে সাফল্য ও সম্মান অর্জনের জন্য শুধুমাত্র জ্ঞান বা পরিশ্রমই যথেষ্ট নয়, প্রয়োজন সঠিক দিশা ও বিচক্ষণতা। তিনি বলেছেন, মানুষের সঙ্গ, পরিবেশ এবং চিন্তাভাবনার ওপরই নির্ভর করে জীবনের গতি। তাই তিনি সতর্ক করেছেন কিছু স্থান ও মানুষের সংস্পর্শ থেকে দূরে থাকতে।
প্রথমত, যেখানে সম্মান নেই, সেখানে কখনও থাকা উচিত নয়। চাণক্যের মতে, যে পরিবেশে পারস্পরিক শ্রদ্ধা নেই, সেখানে প্রতিভা বিকশিত হয় না। এমন স্থানে থেকে শুধু মানসিক ক্লান্তি বাড়ে, আত্মসম্মান নষ্ট হয়।
দ্বিতীয়ত, যে মানুষ বা স্থানে চাটুকারিতা বা তোষামোদ চলে, তা থেকেও দূরে থাকা উচিত। কারণ, চাণক্য বিশ্বাস করতেন—চাটুকারিতা কখনও সৎ বন্ধুত্ব বা প্রকৃত সম্পর্ক তৈরি করতে পারে না। এমন মানুষের সঙ্গ আপনার বিচারবোধকে দুর্বল করে দেয়, আত্মবিশ্বাসও কমিয়ে দেয়।
তৃতীয়ত, যে মানুষ অবাস্তব ও অযৌক্তিক চিন্তাভাবনা করে, তাদের কাছ থেকেও দূরে থাকা জরুরি। চাণক্য বলেছিলেন, “যে ব্যক্তি বাস্তবতাকে অস্বীকার করে, সে নিজের জীবনেরও ক্ষতি করে।” তাঁর মতে, যুক্তি ও বাস্তবতাই সফল জীবনের মূল ভিত্তি।
চাণক্য নিজের জীবনের মাধ্যমে দেখিয়েছিলেন, একাগ্রতা, অধ্যবসায় এবং আত্মবিশ্বাস থাকলে অসম্ভবকেও জয় করা যায়। তিনি শেখান, লক্ষ্য একবার স্থির করলে কোনও বাধা যেন সেই পথ আটকাতে না পারে।
তাঁর আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ উপদেশ, সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ। চাণক্যের মতে, জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে বিচক্ষণ সিদ্ধান্তই মানুষকে সাফল্যের দিকে নিয়ে যায়। ভুল সিদ্ধান্ত শুধু নিজের নয়, আশেপাশের মানুষকেও প্রভাবিত করে। সবশেষে, তিনি বলেছেন ভালো সঙ্গী নির্বাচনের কথা। কারণ, যেমন সঙ্গ তেমন গতি। যে মানুষ আপনার জীবনে আলো আনে, উন্নতির পথে এগিয়ে নিয়ে যায়, তার সঙ্গেই থাকা উচিত।
চাণক্যের এই চিরন্তন নীতিগুলি আজও জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে সমান প্রযোজ্য। কর্মজীবন থেকে ব্যক্তিজীবন, যেখানেই হোক না কেন, তাঁর উপদেশ মেনে চললে আত্মসম্মান, সাফল্য ও স্থিতি, সবই পাওয়া সম্ভব। তাই যুগ পাল্টালেও চাণক্যের দর্শন আজও পথ দেখায় নতুন প্রজন্মকে।