লালবাগচা রাজা। নাম শুনলেই চোখের সামনে ভাসে বিশালাকৃতির গণেশর মূর্তি। অলংঙ্কারে সজ্জিত সেই গণেশ মূর্তির দর্শন করতে প্রতি বছর গণেশ চতুর্থীর সময়ে মুম্বইয়ে লক্ষ লক্ষ মানুষে ভিড় হয়। বাদ পড়েন না সেলেবরাও। নেতা-মন্ত্রীদেরও দেখা যায় মুম্বইয়ের এই বিখ্যাত গণেশ পুজোয়। কিন্তু জানেন কি প্রতি বছর কেন এত ভিড় হয় এই গণেশ মণ্ডপে? কী মাহাত্ম্য রয়েছে লালবাগচা রাজার?
লালবাগচা রাজা মুম্বইয়ের অন্যতম বিখ্যাত গণেশ পুজো। ১৯৩৪ সালে এই মণ্ডপে প্রথম পুজো শুরু হয়েছিল সিদ্ধিদাতা গণেশের। তারপর থেকে প্রতি বছরই নিষ্ঠাভরে উদযাপিত হয় গণেশ পুজো। এবছরও সুসজ্জিত মণ্ডপে বিরাজমান গণপতি বাপ্পাকে দেখতে দূর-দূরান্ত ছুটে আসেন ভক্তরা।
প্রতি বছরের মতো এবারও মুম্বইয়ের লালবাগচা রাজার মণ্ডপ তৈরি হয়েছে বিশেষ একটি থিমের উপর ভিত্তি করে। এবছরের থিম রামেশ্বরম মন্দির। তিরুপতি বালাজির ধাঁচে তৈরি করা হয়েছে গণেশের মূর্তি। ১৪ ফুট উঁচু গণেশের মূর্তির পরনে রয়েছে ভেলভেট কাপড়ের রানি-পিঙ্ক রংয়ের ধুতি। ঝলমল করছে সেই ধুতির পার। মূর্তিটি তৈরি করেছেন শিল্পী সন্তোষ রত্নাকর কামলি। এক হাতে শঙ্ক, অপর হাতে চক্র। যা পবিত্রতা এবং সুরক্ষার প্রতীক।
শোনা যায়, ১৯৩২ সালে লালবাগচার এই স্থানে একটি মাছের বাজার ছিল। যা গা জোয়ারি করে বন্ধ করে দেয় একদল। এরপর থেকেই মাছ বিক্রেতারা সিদ্ধান্ত নেন নিজেরাই নতুন করে মাছের বাজার তৈরি করবেন। তারা কসমাসি বা কামাতু চাউল নামে একটি নতুন গোষ্ঠী তৈরি করেন।
এরপর ১৯৩৪ সালে নতুন বাজারের সূচনার আগে লালবাগচার মাছ বিক্রেতারা একটি গণেশ মূর্তি স্থাপন করে পুজো শুরু করেন। তাদের বিশ্বাস ছিল, সিদ্ধিদাতা গণেশ তাদের ব্যবসায় উন্নতির আশীর্বাদ করবেন। মনোস্কামনা পূর্ণ হলে পুজো আরও বড় করে হবে বলেও শপথ নেন মাছ বিক্রেতারা।
উল্লেখ্য, লালবাগচা রাজার গণেশ মূর্তিটির অন্যরকম বিশেষত্ব রয়েছে। এই গণেশকে 'নবসাচা গণপতি' নামে রাখা হয়। অর্থাৎ যে গণেশ মনস্কামনা পূরণ করে। ফলে মনে করা হয়, দূর-দূরান্ত থেকে ভক্তরা লালবাগচার পুজো দিতে আসেন মনস্কামনা পূরণের ইচ্ছেয়।
এবছর ৯২ তম বর্ষে পদার্পণ করল লালবাগচা রাজা। এই ৯২ বছরের হরেক রূপে পূজিত হয়েছেন গণপতি বাপ্পা। প্রতি বছরই নানারকমের থিমের প্যান্ডেল তৈরি হয় মুম্বইয়ের এই বিখ্যাত পুজোয়।
প্রথমবার লালবাগচার পুজোয় একটি পদ্ম ফুলের উপর গদা হাতে গণেশকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গিয়েছিল ৯২ বছর আগে। ১৯৪৭ সালে স্বাধীনতার বছরে দুই বলদ দ্বারা গাড়িতে চেপে এসেছিলেন মণ্ডপে। ১৯৪৮ সালে লালবাগচা গণেশের মূর্তি তৈরি হয়েছিল মহাত্মা গান্ধীর রূপে।
১৯৬৪ সালে লালবাগচা রাজা গণেশের মূর্তির সামনে তৈরি করা হয় জওহরলাল নেহরু এবং লালবাহাদুর শাস্ত্রীর মূর্তি। ১৯৭২ সালে এই মণ্ডপের থিম ছিল রাবণ বধ। ২০১৯ সালে চন্দ্রযান-২ থিমে সুসজ্জিত হয়েছিল মুম্বইয়ের এই মণ্ডপ। ২০২০ সালে কোভিড অতিমারী পর্বে লালবাগচা রাজার পুজো বন্ধ রাখা হয়। তবে ২০২১ সালে আবার সাড়ম্বরে পুজো শুরু হয়।
এবছরও লালবাগচা রাজা প্রথম ঝলকেই যেন প্রমাণ করে দিয়েছেন কেন তাকে মুম্বইয়ের সবচেয়ে জনপ্রিয় গণেশ প্যান্ডেল বলা হয়। সোনালি আভা আর রাজকীয় সাজে বাপ্পাকে দেখে অনেকেই চোখ ফেরাতে পারেননি। লালবাগচা রাজা কেবল একটি প্রতিমা নয়, মুম্বইয়ের মানুষের কাছে আবেগ।