তিনি 'গুরু', কয়েক লক্ষ ভক্তের 'ভগবান'। অনুগামীরা তাঁকে এই নামেই ডাকত৷ কিন্তু রজনীশ ওশো'র জীবদ্দশা থেকে মৃত্যু ও পরবর্তী সময়, পুরোটাই সমালোচনা, বিতর্কে মোড়া। ওশোর ভাবনায় মুগ্ধ হয়ে বিদেশে তাঁর ভক্ত সংখ্যা ছিল অগুনিত। কিন্তু যে দর্শন তিনি ছড়িয়ে দিতেন তা নড়িয়ে দিয়েছিল সনাতন ধর্মের ভিত। অনেকেই তাঁকে 'সেক্স গুরু'র তকমাও দেন। মৃত্যুর পরও তিনি বিশ্বের বিতর্কিত গুরু। ফোটো- গেটি ইমেজেস
১৯৩১ সালের ১১ ডিসেম্বর মধ্যপ্রদেশে জন্মগ্রহণ করেছিলেন চন্দ্রমোহন জৈন। ওশোর পূর্বতন নাম ছিল এটাই। জব্বলপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে লেকচারার ও ছিলেন। সেই সময় থেকেই তিনি ধর্ম ও দর্শনের এক ভিন্ন দিক লোকমধ্যে ছড়িয়ে দিতে শুরু করেন। পরবর্তীতে তাঁর নাম হয় আচার্য রজনীশ। ভক্তসংখ্যা বাড়তে শুরু করলে তিনি নিজেই নিজের নাম দেন- 'ওশো'।
সত্তর ও আশির দশকে ওশো আন্দোলন বিতর্ক তৈরি করে। ভারতের চক্ষুশূল হয়ে ওঠেন তিনি। পাড়ি দেন আমেরিকায়। হিন্দু ধর্মের সংস্কৃতিকে ছাড়খাড় করছেন এই অভিযোগে সোভিয়েত রাশিয়া ওশোকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে।
গুরু হওয়ার পর প্রথমে মহারাষ্ট্রে ভোগী জীবন যাপন করেন রজনীশ। সন্ন্যাস ধর্ম বদলে নাম দেন- নিও-সন্ন্যাস। অনেকটা হাল আমলের নিও নর্মালের মত। পুনেতে রজনীশ আশ্রমও প্রতিষ্ঠা করেন তিনি। বিদেশ থেকে ভক্তরা বিপুল সংখ্যায় আসর জমাতে শুরু করেন সেখানে।
তিনি গুরু কিংবা সন্ন্যাসী হলেও, রামায়ণ-মহাভারত আওড়াননি কোনদিনও। কোনও পুজো অর্চনাতেও বিশ্বাস করতেন না। বরং স্বর্গ-মর্ত্যের বিশ্লেষণ করতেন। অনেকের মনে অন্ধবিশ্বাসও ছিল। নেটফ্লিক্সের 'wild wild country'তে দেখান হয় এর অনেকটাই।
১৯৮১ সালে আমেরিকায় যান রজনীশ। সেখানে ওরেগাঁও-তে আশ্রমও বানান। সেখানে ভক্তসংখ্যা প্রায় ৬৫ হাজার ছাড়ায়। সেখানে বিলাসবহুল জীবনযাপন করতেন তিনি। ডিজাইনার জামা-কাপড়, হিরের আংটি, রোলস রয়েস গাড়ি কিছু বাদ যেত না।
ব্রিটিশ মনস্তত্ত্ববিদ গ্যারেট, যিনি রজনীশ ভক্ত, তিনি বিবিসিকে বলেন, "রজনীশপুরমে আমরা সবাই স্বপ্নে বিভোর হয়ে থাকতাম। হাসাহাসি, স্বাধীনতা, স্বার্থহীনতা, যৌনাচার সবই চলত। আমরা দলে ভাগ হয়ে থাকতাম। মেডিটেশন করতাম। কখনই উলঙ্গ হয়েও থাকতাম।"
আশ্রম হিসেবে শুরু হলেও ধীরে ধীরে রজনীশপুরম হয়ে পড়ে কলোনি৷ আরও ভক্তসংখ্যা বাড়তে থাকে। প্রমাদ গোনে ওরেগাঁও সরকার।
১৯৮৫ সালে ওশোর বিরুদ্ধে ভুয়ো ইমিগ্রেশন সহ ৩৫টি আইনভঙ্গের অভিযোগ এনে তাকে গ্রেফতার করে মার্কিন পুলিশ৷ ৪ লক্ষ মার্কিন ডলার জরিমানা করা হয়। এমনকী দেশ ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। জেলে তাঁকে থ্যালিয়াম নামের বিষ দেওয়ার অভিযোগ তোলে রজনীশ ভক্তেরা।
এরপর ভারতে ফিরে এসে ওশো চলে যান নেপালে। গ্রিস, ইটালি, সুইজারল্যান্ড, সুইডেন, গ্রেট ব্রিটেন, জার্মানি, কানাডাতে নিষেধাজ্ঞা জারি হয় রজনীশের উপর।