scorecardresearch
 
Advertisement
ধর্ম

করোনা আবহে বন্ধ মালদার ৫০০ বছরের পুরনো ঐতিহ্যবাহী রামকেলি মেলা

Ramkeli Mandir Malda রামকেলি মেলা
  • 1/8

করোনা আবহে বন্ধ মালদার ৫০০ বছরের ও বেশি পুরনো ঐতিহ্যবাহী রামকেলি মেলা (Ramkeli Mela)। এই মেলার সঙ্গে জড়িয়ে আছে বহু ইতিহাস। ১৫১৫ খ্রিস্টাব্দের ১৫ জুন, জৈষ্ঠ সংক্রান্তিতে এই রামকেলি এসেছিলেন স্বয়ং চৈতন্যদেব (Sri Chaitanya Mahaprabhu)। তাঁর এই রামকেলি ধামে পদার্পণকে কেন্দ্র করেই ৫০৬ বছর ধরে মালদা রামকেলি গ্রামে জ্যৈষ্ঠ সংক্রান্তির দিন হয়ে আসছে এই মেলা। বিভিন্ন মত থাকলেও কথিত আছে মহাপ্রভু এই রামকেলিতে কাটিয়েছিলেন তিনদিন। তাই এই মেলার মেয়াদও হত তিন দিনের। তবে এবারে কোভিড অতিমারীর কারণে বন্ধ থাকছে মেলা। দীর্ঘদিনের ঐতিহ্যবাহী এই মেলা না হওয়ায়, এবারে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত ছাড়াও বিদেশি পর্যটকদের মন ভার। দুঃখিত ধর্মপ্রাণ মানুষরাও। রামকেলি মেলা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, মেলা না হলেও এবারে পুজো পাঠ হবে যথারীতি বিধি মেনেই।

Ramkeli Mandir Malda রামকেলি মেলা
  • 2/8

অষ্টম-দ্বাদশ শতাব্দীতে বৌদ্ধ যুগে পাল বংশের রাজাদের সময় থেকে বাংলার রাজধানী ছিল গৌড়। ১১৯৮ খ্রিস্টাব্দে মুসলমান শাসকেরা গৌড় অধিকার করার পরেও গৌড়ই বাংলার রাজধানী থেকে যায়। ১৩৫০ খ্রিস্টাব্দে রাজধানী কিছুদিনের জন্য পান্ডুয়ায় স্থানান্তরিত হলেও ১৩৫৩ খ্রিস্টাব্দে আবার রাজধানী ফিরে আসে গৌড়ে। কথিত আছে তৎকালীন গৌড়ের বাদশা হোসেন শাহের আমলে মন্ত্রিসভায় ছিলেন মহাবৈষ্ণব বলে পরিচিত রূপ ও সনাতন গোস্বামী। রাজ দরবারে অবশ্য রূপ, সাগর মল্লিক ও সনাতন দাবির খাস হিসাবেই পরিচিত ছিলেন। তাঁরাই ১৫০৮ খ্রিস্টাব্দে গৌড়ের রামকেলিতে মদনমোহন মন্দির প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।
 

Ramkeli Mandir Malda রামকেলি মেলা
  • 3/8

এই মন্দিরে রয়েছে মদনমোহন ও শ্রীরাধার মূর্তি ছাড়াও রয়েছে বলরাম ও রেবতীর প্রতিমূর্তি। রয়েছে গোপাল মূর্তিও। অন্যপাশে গৌরাঙ্গ, নিত্যানন্দ এবং অদ্বিতীয়। এছাড়াও আছে দুটি তৈলচিত্র রূপ সনাতন গোস্বামীর। মন্দিরের সামনে রয়েছে বিশাল নাট্যমঞ্চ। মূলত নাম সংকীর্তনের জন্যই তৈরি করা হয়েছিল এই মঞ্চটি। রূপ ও সনাতন বৃন্দাবনের আদলে রামকেলিতে আটটি কুণ্ড পুকুর খনন করেছিলেন। তাঁরা রামকেলিকে বৃন্দাবনের রূপ দিতে চেয়েছিলেন। পরবর্তীকালে রামকেলি 'গুপ্ত বৃন্দাবন' বলেও বৈষ্ণব সমাজে পরিচিতি লাভ করেছিল।

Advertisement
Ramkeli Mandir Malda রামকেলি মেলা
  • 4/8

গৌড়ের তৎকালীন বাদশা হোসেন শাহের আমলে মহাবৈষ্ণব ও সন্তানের সঙ্গে দেখা করতে এবং গৌড়ে ভক্তি আন্দোলনকে ছড়িয়ে দিতে ১৫১৫ খ্রিস্টাব্দের ১৫ জুন সংক্রান্তিতে এসেছিলেন চৈতন্যদেব। তাঁদের মিলন হয়েছিল মদনমোহন মন্দিরের সামনে থাকা ৫০০ বছরের পুরনো কেলিকদম ও তমাল গাছের নীচে। সেখানেই উপবেশন করেছিলেন গৌড়ীয় বৈষ্ণব আন্দোলনের পুরোধা শ্রীচৈতন্য।
 

Ramkeli Mandir Malda রামকেলি মেলা
  • 5/8

মহাপ্রভুর আগমনকে কেন্দ্র করে সেদিন ভক্তিরসে প্লাবিত হয়েছিল এই জনপদ। প্রচুর মানুষের সমাগম হয়েছিল চৈতন্যদেবকে দেখার জন্য। তিন দিন এখানে থেকে শ্রীচৈতন্য ১৭ তারিখ নীলাচলে ফিরে যান। তাঁর এই পদার্পণ এবং রূপ সনাতনের সঙ্গে মিলন খানকে স্মরণ করে পরের বছর থেকেই জ্যৈষ্ঠ সংক্রান্তির দিনে এই রামকেলি মেলা মুখর হয়ে উঠতে শুরু করে ভক্ত সমাগমে। পরবর্তীতে এই ভক্ত সমাগমই মেলা রূপে রূপান্তরিত হয়। রামকেলিতে যে কেলি কদম্ব ও তমাল তরুর তলে চৈতন্যদেব এসেছিলেন তার পাশে চৈতন্যদেবের পদচিহ্ন বিশিষ্ট একটি শিলাখণ্ড কে ঘিরে তৈরি হয় মন্দির। রামকেলি মেলার মূল উৎসব হয় এই মদনমোহন মন্দিরে।
 

Ramkeli Mandir Malda রামকেলি মেলা
  • 6/8

মালদা থেকে রামকেলির দূরত্ব প্রায় ১৩ কিলোমিটার। আগে ভক্তরা বেশিরভাগই পায়ে হেঁটে এই মেলায় আসতেন। মালদা থেকে রামকেলি মধ্যবর্তী বাধা পুকুর বলে একটি জায়গায় তাঁরা বিশ্রাম নিতেন, পরে সেই জায়গাটার নাম হয় 'সুস্তানি মোড়'। গরুর গাড়ি করে লন্ঠন জ্বালিয়ে বর্তমান বাংলাদেশের চাঁপাইনবাবগঞ্জ, গোমস্তাপুর সহ বিভিন্ন জায়গা থেকে ভক্তরা তখন মেলায় আসতেন। যারা মেলায় দোকান করতেন বেশিরভাগ মানুষ গরুর গাড়িতে আনতেন তাঁদের পসরা। সন্ধ্যেবেলা লন্ঠনের আলোয় জমে উঠত মেলা। তবে এখন সময় বদলেছে। যোগাযোগ ব্যবস্থাও অনেক ভাল। মেলার সময় মালদা থেকে টোটো, অটো, ট্রেকার, বাস সহ বিভিন্ন বেসরকারী সরকারি পরিবহন চলে সারারাত। কিন্তু এখনও মেলার চরিত্রের খুব একটা বদল হয়নি। ভক্তি রসের নিমজ্জিত এখনও বহু ভক্ত পায়ে হেঁটেই পৌঁছে যান এই মিলন তীর্থে।
 

Ramkeli Mandir Malda রামকেলি মেলা
  • 7/8

শুরু থেকেই এই মেলায় মেলে কাঠের নানা জিনিসপত্র, পাথরের থালা বাটি বাসন, তালপাখা, খোল- করতাল, বাশ ও বেতের তৈরি নানা ধরনের জিনিস। এছাড়াও থাকে মাটি ও লোহার বাসনপত্র, কম্বল, নানা ধরনের মিষ্টি, রকমারি আমের পশরা। তবে মেলার মূল আকর্ষণ থাকে হাতির পায়ের আকারের মত 'হাতিপায়া লুচি' এবং তার সঙ্গে বোদে। থাকে ৫০০ বছরেরও বেশি সময় পার হয়ে গেলেও এই মেলার ট্র্যাডিশন আজও একই রকম ভাবে বয়ে চলেছে।

Advertisement
Ramkeli Mandir Malda রামকেলি মেলা
  • 8/8

রামকেলি মেলা দুটি অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল, মেয়েদের মাতৃ পিন্ডদান। কথিত আছে সতীর ৫১ পীঠের একটি গৌড়ের গয়েশ্বরী মন্দির। বাংলার রাজধানী যখন গৌড়, তখন থেকেই গয়েশ্বরী মন্দিরে মেয়েদের মাতৃ পিন্ডদানের ছিল। নদীতে স্নান করে মেয়েরা তাদের মায়ের স্মৃতিতে পিন্ডদান করতেন। কিন্তু জনশ্রুতি, নবাব বক্তিয়ার খলজির আমলে সেই মন্দির ধ্বংস হয়ে যায়। ভেঙে ফেলা হয় মূর্তি ও। পরবর্তীকালে আবার সেই মন্দির গড়ে তোলা হয়।


এছাড়া মেলার দ্বিতীয় বৈশিষ্ট্য হল বৈষ্ণব বৈষ্ণবীদের বিয়ে। এই বিয়ে হত দু'ভাবে। কখনও সাধকেরা মেলায় আসা স্বাধিকারের দেখেই বিয়ে করে নিতেন। কখনও বা সারান আশিকি দিয়ে কোনটি বদল করে ও অনুষ্ঠিত হত বিয়ে। কথিত আছে বৈষ্ণব সম্প্রদায় ভুক্ত যে কোন মেয়ে, কুমারী, বিধবা, সধবা মুখ ঢেকে তাঁদের কনিষ্ঠ আঙ্গুল এগিয়ে দিতেন বৈষ্ণবদের দিকে। মুখ দেখার সময় পেতেন না বৈষ্ণবেরা। বিয়েতে শামিল হয়ে বলতেন, 'হে বৈষ্ণবী, আমি সাদিকা ও উপাসিকা স্ত্রী হিসেবে গ্রহণ করলাম'। এরপর কোন্ঠী দান করে ব্রাহ্মণ কে, চার আনা, সিকি দান করতে হত। পরবর্তীকালে অবশ্য রামকেলি মেলা এই বিয়ের প্রথা বন্ধ হয়ে যায়।

Advertisement