আমাদের জীবনে শনিদেব বিভিন্নভাবে প্রভাব ফেলেন। প্রায়ই তাঁর শক্তি না জানতে পেরে আমরা তার বক্রদৃষ্টির শিকার হই। শনিদেবের নজর তাদের উপর পড়ে, যাঁরা খারাপ যাঁরা খারাপ কাজে লিপ্ত থাকেন বা জেনে বা না জেনে খারাপ কাজের মধ্যে জড়িয়ে পড়েন।
আসুন জেনে নিই শনিদেবের বক্রদৃষ্টি প্রভাব
শনিদেবের দৃষ্টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শনিদেব ভারসাম্য এবং ন্যায়ের গ্রহ। ভুল এবং বেইমান লোকেদের বিরাগভাজনের কারণ হন তিনি। পাশাপাশি ন্যায়নিষ্ঠ, নীতিনিষ্ঠ পরিশ্রমী লোকেদের পুরস্কৃত করেন শনিদেব। বলা হয়, যেখানে সূর্যের প্রভাব শেষ হয়, সেখান থেকে শনিদেবের প্রভাব শুরু হতে থাকে। মনে করা হয় যে শনিদেবের নজর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
শনিদেবের আছে সবচেয়ে শক্তিশালী দৃষ্টি
সমস্ত গ্রহের কাছে একটি দৃষ্টি থাকে। যাকে সপ্তম দৃষ্টি নামে ডাকা হয়। কিন্তু বৃহস্পতি মঙ্গল এবং শনির কাছে এছাড়াও অতিরিক্ত দৃষ্টিও থাকে।সমস্ত গ্রহের মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী দৃষ্টি হল শনিদেবের দৃষ্টি। তাঁর কাছে সপ্তম দৃষ্টি ছাড়াও তৃতীয় এবং দশম দৃষ্টিও থাকে। এই দৃষ্টি যেই গ্রহ, ভাব বা ব্যক্তির ওপর পড়ে, তাঁর সর্বনাশ অবশ্যম্ভাবী। শনিদেবের দৃষ্টি আলাদা আলাদা গ্রহের উপর পড়ে। আলাদা আলাদা দুষ্পরিণাম তৈরি করে।...
খারাপ কাজের সাজা দেন শনিদেব
খারাপ কাজের সাজা দেন শনিদেব। নিন্দনীয় কাজ করলে তাঁর দুর্ভাগ্য ডেকে আনেন শনিদেব। খারাপ কাজের পর শনিদেব কাঙাল করে দেন।খারাপ কাজ যারা করেন, তাদের বিবেক শেষ করে দেন। শনিদেবের কুপ্রভাব এত তীব্র, যে কোনও নির্ণয় শক্তি কাজ করে না, অর্থাৎ বুধ্দ লোপ পায়। শনিদেবের বাঁকা নজর কোনও কাজে সাফল্য আসে না। মন সবসময় খিটখিটে থাকে।
ভালো কাজ এর ফল দেন শনিদেব
শনিদেব ভাল কাজ যারা করেন, তাদের ভাগ্যেদয়ের পথ পরিষ্কার করেন। শনিদেব শুভ কাজের ব্যক্তিদের ধনসম্পত্তি উপযোগ দিতে থাকেন, শনিদেব গৃহস্থের জীবনে সুখ সমৃদ্ধি তৈরি করেন। ধর্মের রাস্তায় যাঁরা চলেন, তাঁদের প্রেরণা দিয়ে তপস্যার পথ প্রশস্ত করেন।
শনিদেবের নজর গ্রহের প্রভাব
এ সমস্ত বিষয় জেনে আপনি এখন একটা জিনিস বুঝে গিয়েছেন যে শনিদেব শুধুমাত্র খারাপ ব্যক্তিদের বা খারাপ কাজ করা ব্যক্তিদের ওপর কু-প্রভাব এবং নজর ফেলেন এবং ভালো লোকেদের সঙ্গে সর্বদাই বিরাজমান থাকেন। জ্যোতিষের তথ্য অনুযায়ী মনে করা হয়েছে শনিদেবের গ্রহ অনুসারে আলাদা আলাদা দুষ্পরিণাম দেয়।
কার উপর কী প্রভাব?
সূর্যের উপর দৃষ্টি থাকলে ব্যক্তি দাম্পত্য জীবন খারাপ হয়। এতে পিতা-পুত্রের মধ্যে সম্বন্ধ ভালো থাকে না। যদি চাঁদের উপর দৃষ্টি পড়ে, তাহলে তীব্র বৈরাগ্য তৈরি হয় সাংসারিক জীবনে। এতে ব্যক্তি, সন্ন্যাসী বা মানসিক রোগীতে পরিণত হন। যদি এর প্রভাব মঙ্গলের উপর পড়ে, তাহলে বিস্ফোরক পরিস্থিতি তৈরি হয়।
এর প্রভাবে প্রচণ্ড দুর্ঘটনা যোগ তৈরি হয়ে যায়। বুধ গ্রহের উপর শনির দৃষ্টি পড়লে ব্যক্তি চালাক ও চতুর হন। কিন্তু এতে ত্বকের সমস্যা বেড়ে যায়।শনিদেবের দৃষ্টি যদি বৃহস্পতির উপর পড়ে তাহলে ব্যক্তির পেটের রোগ বাড়তে থাকে। এতে ওই ব্যক্তি জ্ঞানী এবং অহংকারীও হন। রাহুর ওপর শনির দৃষ্টি পড়লে ব্যক্তি নেশাগ্রস্ত হতে থাকেন। কিন্তু কখনও কখনও রাজনীতিতে সাফল্য পেয়ে যান।
আসুন জেনে নিই কিভাবে শনিদেব কৃপা করেন
যখন কোনও ব্যক্তি সত্য কথা বলেন এবং যখন ব্যক্তি কমজোর এবং দুর্বল লোকের ওপর সেবা করেন, যখন ব্যক্তি নিজের বরিষ্ঠ প্রবীণদের সেবা করেন যখন, ফলন্ত এবং লম্বা সময় অবধি পর্যন্ত বেঁচে থাকা গাছ লাগান। যখন ব্যক্তি ভগবান শিবের, কৃষ্ণের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করেন।
কিছু সরল উপায়, যা আপনাকে শনিদেব থেকে বক্রদৃষ্টি থেকে বাঁচাবে
১. কখনও শনিদেবের কোনও এমন মূর্তি দর্শন করবেন না যাতে শনিদেবের চোখ রয়েছে।
২. প্রত্যেক শনিবারের দিন লাল বস্ত্র ধারণ করে হনুমানজির সামনে দাড়ান।
৩. হনুমান চালিশা পাঠ করুন।
৪. রোজ সন্ধ্যায় পশ্চিম দিকে দাঁড়িয়ে প্রদীপ জ্বালিয়ে শনিদেবের মন্ত্র পাঠ করুন।
৫. ঘরের ছোটদের এবং বাড়ির কাজের লোকের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করুন।
৬. নীল রং ঘরে বেশি করে প্রয়োগ করুন।
এছাড়া আপনি আরও কয়েকটি উপায়ে শনিদেবকে প্রসন্ন রাখতে পারেন। যেমন, জীবনে ন্যায়-নিষ্ঠ হন, সত্য কথা বলুন এবং প্রবীনদের সম্মান করুন। তুলসী গাছ এবং অশ্বত্থ গাছে জল দিন। শনিবার সন্ধ্যায় সর্ষের তেল দিয়ে বাতি দিন অশ্বত্থতলায়। কখনও কাঁচা এবং সমর্থ গাছ কাটবেন না। গর্ভপাত করাবেন না। উদয়ের আগে ঘুম ঘুম থেকে উঠুন এবং শিবের উপাসনা করুন।
শনিদেবের মূল মন্ত্র "ঔঁ শঁ শনিশ্চরায় নম" জপ করুন।