বর্ষা বিদায়ের ঠিক প্রাক মুহুর্তে মুষলধারা বৃষ্টি কলকাতায়। ঘনঘন বিদ্যুতের ঝলকানির সঙ্গেই হল মুহুর্মুহু বজ্রপাত। কানফাঁটা বাজ পড়ার আওয়াজে আতঙ্কিত হয়ে পড়ে শহরবাসী। আর তাতেই শহরের নানা প্রান্তে ঘরে ঘরে শঙ্খ বাজার আওয়াজ শোনা যায়। জানেন কেন বাজ পড়লে শাঁখ বাজানো হয়? কোথায় থেকে এসেছে এই রীতি?
প্রাগৈতিহাসিক কারণ: আদিম মানুষ প্রতিদিন প্রতি মুহূর্ত কাটাত আতঙ্কে। প্রথমত খাবার সংগ্রহের সময়ে হিংস্র পশুর আক্রমণের ভয় সর্বদা তাদের তাড়া করে বেড়াত। দ্বিতীয়ত, ঝড়বৃষ্টি, ঝঞ্ঝা, বজ্রপাতকে অজানা হামলা ভেবে আতঙ্কে দিন কাটত আদিম মানুষের।
ভূমিকম্প, অগ্ন্যুৎপাত এবং দাবানলের ভয় তাড়া করে বেড়াতে আদিম মানুষকে। তবে এগুলো প্রতিনিয়ত না হলেও বাজ পড়া এবং মেঘ ডাকাকে খুবই ভয় পেত তারা। মনে করত এগুলি ভগবানের আক্রোশের ফলে হচ্ছে।
দক্ষিণ পশ্চিম আমেরিকায় নাভাজো এমন এক ধরনের আদিবাসী সম্প্রদায় ছিল, যারা মনে করত 'বজ্রপাখি' নামে এক বিশালাকৃতির পাখি রয়েছে। সে আকাশে উড়লেই বজ্রপাত হয়, বিদ্যুৎ চমকায়।
আদিম থেকে সভ্য হওয়া মানুষ ধীরে ধীরে প্রকৃতির লীলা বুঝতে শুরু করল। তা সত্ত্বেও বজ্রপাতকে বলা হত ভীষণ শক্তিশালী কোনও দেবতার অস্ত্র। সেই দেবতার নামকরণ ভিন্ন ধর্মে হয় ভিন্ন নামে।
উত্তর জার্মানির নর্স গোত্রে কাছে বজ্রবিদ্যুৎ হল থর দেবতা। এই দেবতার হাতে থাকে 'জলনর' নামে একটি বিশাল হাতুড়ি। যা দিয়ে পাহাড় গুঁড়িয়ে দেওয়া যায়। বাজ পড়লে তাঁকেই স্মরণ করত স্থানীয় বাসিন্দারা।
পূরাণ হাতড়ালে দেখা যাবে বাজ পড়লে শঙ্খ বাজানোর রীতি এসে গ্রিক পূরাণ থেকে। বৃষ্টির দেবতার নাম সেখানে 'জিউস'। আবার রোমান পূরাণ অনুযায়ী এই দেবতার নামই পাল্টে যায় জুপিটার।
হিন্দু পূরাণে এই জুপিটার দেবতার নাম বদলে হয়ে যায় ইন্দ্র। গ্রিক বা রোমান ধর্মের মতো ইন্দ্রকেও রাজা মনে করা হয়। যার প্রধান অস্ত্র ছিল বজ্র যা বিদ্যুৎ চমক হিসেবে পরিচিত। ইন্দ্রকেই পূরাণ ঝড়, বৃষ্টি, বজ্রপাতের দেবতা হিসেবে উল্লেখ করা হয়।
এই কারণেই প্রবল বাজ পড়লে আজও হিন্দু পরিবারে ঘরে ঘরে মা ঠাকুরমারা শাঁক বাজান। যেহেতু ইন্দ্রকে হিন্দু পূরাণে ঝড়বৃষ্টির দেবতা বলা হয়, সে কারণে ইন্দ্র যখন প্রচণ্ড ক্ষিপ্ত হন, তখনই পৃথিবীতে বজ্রপাত হয় বলে বিশ্বাস হিন্দুদের। সেই বিশ্বাস থেকেই ইন্দ্রদেবকে শঙ্খ বাজিয়ে সন্তুষ্ট রাখা হয়।
শুক্রবার দুপুর থেকে কলকাতা শহরে মুষলধারে বৃষ্টিপাত শুরু হয়। সঙ্গে চলে বিদ্যুতের ঝলকানি আর বাজ পড়া। কানাফাটা বজ্রপাতের শব্দে আতঙ্কিত হয়ে পড়ে শহরবাসী। সেই সময়েই কলকাতার একাধিক এলাকায় ঘরে ঘরে শঙ্খধ্বনি শোনা যায়। ধর্মীয় বিশ্বাস থেকেই আজও মহিলারা বাজ পড়লে শাঁখ বাজাতে থাকেন।