সাধক রামকৃষ্ণ বলছেন, 'কালীই ব্রহ্ম এবং ব্রহ্মই কালী। ব্রহ্মকে ছেড়ে শক্তিকে, শক্তিকে ছেড়ে ব্রহ্মকে ভাবা যায় না। তিনিই আদ্যাশক্তি'। অর্থাত্ স্থির, নিষ্ক্রিয় অবস্থায় ব্রহ্ম। ত্রিগুণাতীত। সেই ব্রহ্মই যখন সক্রিয় হচ্ছে, তখন তা কালীর রূপ নিচ্ছে। শক্তি।
কালীর ১১টি রূপ। প্রতিটি রূপেরই আলাদা মাহাত্ম্য রয়েছে। কোনও রূপে মাকালীর খাঁড়া থাকে ডান হাতে। আবার কখনও বাঁ হাতে মুণ্ডমালা। দেখে নেওয়া যাক কালীর সেই ১১ রূপের মাহাত্ম্য।
দক্ষিণাকালী: গোটা পশ্চিমবঙ্গে দক্ষিণাকালী সবচেয়ে বেশি পূজিত হন। এই কালীকে শ্যামা মাও বলা হয়। দেবীর গায়ের রং হয় নীল। গলায় থাকে মুণ্ডমালা। বাঁহাতে নরমুণ্ড ও খাঁড়া। ডান হাতে আশীর্বাদ। কালীর পায়ের নীচে শুয়ে থাকেন শিব।
মহাকালী: সাধারণত তন্ত্র মতে এই কালীর সাধনা করা হয়। মহাকালীর দশ মাথা, দশ হাত এবং দশ পা। দশ হাতেই থাকে অস্ত্র । এই কালীর সঙ্গে শিব থাকেন না। ভূত চতুর্দশীতে এই কালীর পুজো করা হয়ে থাকে।
শ্মশানকালী: এই কালীর সাধনা হয় মূলত শ্মশানে। রণচণ্ডী রূপ হয় এই কালীর। একদা ডাকাতরা এই কালীর পুজো সেরে ডাকাতি করতে যেত। এই কালীপুজোর সঙ্গে নরবলিরও অতীত রয়েছে।
ফলহারিণী কালী: এই কালীর পুজো হয় বছরে একবার। বেশির ভাগ গৃহস্থের বাড়িতেই এই পুজো হয়। কথিত আছে, ওই দিনেই সারদাদেবীকে ঈশ্বর জ্ঞানে পুজো করেছিলেন শ্রীরামকৃষ্ণ। সংসারে শান্তি ও সুস্থতা বজায় রাখতেই কালীর এই রূপের পুজো করা হয় বলে বিশ্বাস।
সিদ্ধকালী: সাধকরা সিদ্ধিলাভের জন্য মূলত এই কালীর পুজো করেন। ঘোর অমাবস্যায় সাধকরা সিদ্ধকালীর পুজো করেন।
শ্রীকালী: এই কালী হলেন দেবী দুর্গা অথবা পার্বতীরই একটি বিশেষ রূপ। দারুক নামে অসুরকে বধ করেছিলেন এই দেবী। মহাদেবের কণ্ঠে ঢুকে বিষ ধারণ করেছিলেন শ্রীকালী।
কাম্যাকালী: এই কালীপুজো সাধারণত অষ্টমী, চতুর্দশী, অমাবস্যা, পূর্ণিমায় হয়ে থাকে। এই কালীর পুজোর রীতি অনেকটা দক্ষিণাকালীর মতোই। এই কালীরও পায়ের তলায় শিবের অধিষ্ঠান।
রক্ষাকালী: দক্ষিণকালী যেমন সবচেয়ে বেশি পূজিত হন, তেমনই পূজিত হন রক্ষাকালীও। জগত্ সংসারকে বিপদে আপদে রক্ষা করেন বলে বিশ্বাস। তাই এই দেবীর নাম রক্ষাকালী। তা ছাড়াও বসতভূমিকে রক্ষার উদ্দেশ্যে এই কালীর পুজো করা হয়ে থাকে নানা গৃহস্থ বাড়িতেও।
চামুণ্ডা কালী: চামুণ্ডা কালী একইসঙ্গে ভগবতী দুর্গা এবং পার্বতী। চণ্ড ও মুণ্ড নামের দুই অসুরকে বধ করেছিলেন তিনি। অশুভ শক্তিকে ধ্বংস করেন এই চামুণ্ডা দেবী। কালীর চামুণ্ডা রূপ।
গুহ্যকালী: এই দেবীর গায়ের রং মিশমিশে কালো। গলায় ৫০টি নরমুণ্ড সহিত মালা থাকে। এই দেবীর রূপ অত্যন্ত ভয়ঙ্কর। ভদ্রকালী: জনসমাজের কল্যাণে এই কালীপুজো করা হয়। মূলত মন্দিরে এই দেবীর পুজো করা হয়।