বাঙালির বারো মাসে তের পার্বণ (Festivals)। আর তার মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎসব অক্ষয় তৃতীয়া (Akshay Tritiya)। তবে শুধু বাঙালি নয়, গোটা দেশের হিন্দুদের জন্যেই এই উৎসব অত্যন্ত শুভ। বৈশাখ মাসের শুক্লপক্ষের তৃতীয়া তিথিতে 'অক্ষয় তৃতীয়া'র পুজো হয়। যে কোনও কাজ সম্পন্ন করার জন্য এদিন অত্যন্ত শুভ বলে মনে করা হয়।
সংস্কৃত অনুসারে 'অক্ষয়' শব্দের অর্থ হল 'যার কোনও ক্ষয়' নেই অর্থাৎ যা কখনোও শেষ হয় না। তাই মনে করা হয় অক্ষয় তৃতীয়ায় করা যে কোনও কাজ অক্ষয় থাকে। সেই সঙ্গে শাস্ত্র মতে, অক্ষয় তৃতীয়া সুখ প্রদানকারী এবং পাপ নাশকারী তিথি।
'অক্ষয় তৃতীয়া'-র দিনক্ষণ (Akshay Tritiya 2022 Date & Time)
* আগামী ৩ মে (বাংলায় ১৯ বৈশাখ) অক্ষয় তৃতীয়ার শুভ তিথি পড়েছে।
* ২ মে রাত ৩:১৭ মিনিট থেকে ৩ মে ভোর ৫: ২৫ মিনিট পর্যন্ত তৃতীয়া থাকবে। এই বছর দীর্ঘক্ষণ থাকছে তৃতীয়া।
আরও পড়ুন: সন্তানের মঙ্গল কামনায় পালন হয় শিবের ব্রত! জানুন এবছরের নীলষষ্ঠীর দিনক্ষণ
'অক্ষয় তৃতীয়া'-র মাহাত্ম্য (Akshay Tritiya significance)
* এই পুজোর সঙ্গে জড়িয়ে আছে কয়েকটি পুরাণের কথা। শোনা যায় মহাভারতে কৌরবদের কাছে পাশা খেলায় হেরে বারো বছরের জন্য বনবাস ও এক বছরের জন্য অজ্ঞাতবাসে যেতে বাধ্য হয়েছিলেন পাণ্ডবরা। তাঁদের বনবাসে থাকার সময়ে ফের কৌরবদের চক্রান্তে মুনি দুর্বাসা তাঁর শিষ্যদের নিয়ে এক রাতে পাণ্ডবদের আশ্রয় গ্রহণ করতে যান। কিন্তু সেই সময় তাঁদের ঘরে কোনও অন্ন ছিল না। ক্ষুধার্ত মুনি দুর্বাসা অভিশাপ দেবেন ভেবে ভয় পান পাণ্ডব ও দ্রৌপদী। ঠিক সেই সময়ে শ্রীকৃষ্ণ এসে হাঁড়ির তলায় লেগে থাকা একটিমাত্র চালের দানা খেয়ে নেন। আর অবাক করা বিষয়, তাতেই পেট ভরে যায় দুর্বাসা ও তাঁর শিষ্যদের। দুর্বাসার অভিশাপ থেকে এই অক্ষয় তৃতীয়ার দিনই পাণ্ডবদের রক্ষা করেছিলেন শ্রীকৃষ্ণ। তাই এই দিন্টিকে শুভ বলে মনে করা হয়।
আরও পড়ুন: বছরের প্রথম সূর্যগ্রহণে, সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত হবে এই রাশির জাতকরা
* আবার অন্য একটি চলতি পৌরণিক কথা অনুসারে, বিষ্ণুর নবম অবতার কৃষ্ণ দ্বাপর যুগে জন্মগ্রহণ করেন মর্ত্যে । তাঁর সুদামা নামে এক দরিদ্র ব্রাহ্মণ বন্ধু ছিলেন। সুদামা একদিনব ভুলবশত কৃষ্ণের সব খাবার খেয়ে ফেলেছিলেন। এরপর তিনি শ্রীকৃষ্ণকে খাবার দিতে একমুঠো চাল নিয়ে তাঁর ঘরে আসেন। তাঁকে খাওয়ানোর জন্য বন্ধু সুদামার এই আচরণ মুগ্ধ করেছিল শ্রীকৃষ্ণকে। এরপর শ্রীকৃষ্ণের আশীর্বাদে সুদামার সমস্ত দারিদ্র্য ঘুচে যায়। মনে করা হয় যেদিন এই ঘটনা ঘটেছিল। সেদিন ছিল বৈশাখ মাসের শুক্লপক্ষের তৃতীয়া তিথি। তাই দিনটি বিশেষ শুভ।
* এছাড়াও শোনা যায়,অক্ষয় তৃতীয়ার দিনেই পরশুরাম জন্মগ্রহণ করেছিলেন। সেজন্যেও এই দিনটি শুভ।
আরও পড়ুন: চৈত্র মাসে কেন বিয়ে -শুভ কাজ হয় না বাঙালি হিন্দুদের? জানুন আসল কারণ...
অক্ষয় তৃতীয়ার দিন ব্যবসায়ী লক্ষ্মী- গণেশ পুজোর আয়োজন করেন। অনেকে দোকানে এদিন হালখাতাও হয়। শুধু দোকান নয়, অনেকে বাড়িতেও পুজো করেন। এছাড়া বিভিন্ন মন্দিরে ভক্তেরা ভিড় জমান। বিশ্বাস করা হয় যে, এদিন সোনা কিনলে পরিবারে সুখ-সমৃদ্ধি ঘটে।