হিন্দুধর্মের এক গুরুত্বপূর্ণ বাৎসরিক উৎসব অম্বুবাচী (Ambubachi)। এই অম্বুবাচী বিভিন্ন আঞ্চলিক ভাষায় অমাবতী বলেও পরিচিত। এই উৎসবের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে শাস্ত্রের নানা কাহিনী। হিন্দু শাস্ত্রে ও বেদে পৃথিবীকে মা বলা হয়ে থাকে।
পৌরাণিক যুগেও পৃথিবীকে ধরিত্রী মাতা বলে সম্বোধন করা হয়েছে। মনে করা হয়, আষাঢ় মাসে মৃগশিরা নক্ষত্রের চতুর্থ পদে ঋতুমতী হন ধরিত্রী। পূর্ণ বয়স্কা ঋতুমতী নারীরাই কেবল সন্তান ধারণে সক্ষম হন। তাই অম্বুবাচীর পর ধরিত্রীও শস্য শ্যামলা হয়ে ওঠেন।
অম্বুবাচীর দিনক্ষণ (Ambubachi 2022 Date & Time)
অম্বুবাচী শুরুর পর তিন দিন চলে এই উৎসব। চলতি বছরে অম্বুবাচী শুরু হবে ২২ জুন অর্থাৎ ৭ আষাঢ় রাত ১২.৫২ মিনিট নাগাদ এবং ২৬ জুন অর্থাৎ ১১ আষাঢ় রাত ৩.২৭ মিনিট নাগাদ এর সমাপ্তি হবে।
কামাক্ষ্যা মন্দিরে মহামেলা (Kamakhya Mandir Mela)
সতীপিঠের অন্যতম এই অসমের কামাক্ষ্যা মন্দিরে সতীর গর্ভ এবং যোনি পড়েছিল। তন্ত্র সাধনার অন্যতম পীঠ এই মন্দির। প্রতি বছর অম্বুবাচীর তিন দিন কামাক্ষ্যা মন্দিরে বিশেষ উৎসব এবং মহামেলার আয়োজন হয়। সেই সময় মন্দির বন্ধ থাকে। তবে চতুর্থ দিনে সর্বসাধারণের ভক্তকুলের জন্য মন্দিরের দ্বার খুলে দেওয়া হয়। দেশ- বিদেশ থেকে ভক্তেরা ভিড় জমান মন্দিরে। গত দু' বছর করোনা অতিমারীর জন্য সেই উৎসব বন্ধ ছিল। তবে এবছর কামাক্ষ্যার মন্দির চত্বরে মেলা হবে বলে জানা যাচ্ছে।
অম্বুবাচীর আচার- অনুষ্ঠান (Ambubachi's Significance)
অম্বুবাচীর সঙ্গে জড়িয়ে আছে বহু আচার অনুষ্ঠান। এই তিনদিন সন্ন্যাসী এবং বিধবারা বিশেষ ভাবে পালন করেন। কোনও শুভ কাজও এই কয়েকদিন নিষিদ্ধ থাকে। শুধু তাই নয়, অম্বুবাচী চলাকালীন কৃষিকাজ বন্ধ রাখা হয়। তিনদিন পর অম্বুবাচী ফের কোনও মাঙ্গলিক অনুষ্ঠান ও চাষাবাদ শুরু হয়।
রজঃউৎসব পালন (Ambubachi Rajo Utsav)
ভারতের একাধিক স্থানে অম্বুবাচী উৎসব, 'রজঃউৎসব' নামেও পালিত হয়। প্রচলিত বিশ্বাস অনুযায়ী, ঋতুকালে মেয়েরা অশুচি থাকেন।
অম্বুবাচীর নিয়মকানুন (Ambubachi Rituals)
একই ভাবে মনে করা হয় পৃথিবীও সময়কালে অশুচি থাকেন। সেজন্যেই এই তিন দিন ব্রহ্মচারী, সাধু, সন্ন্যাসী,যোগীপুরুষ এবং বিধবা মহিলারা 'অশুচি' পৃথিবীর উপর আগুনের রান্না করে কিছু খান না। বিভিন্ন ফলমূল খেয়ে এই তিন দিন কাটাতে হয়। এখনও বিভিন্ন পরিবারের বয়স্ক বিধবা মহিলারা তিন দিন ধরে অম্বুবাচী উপলক্ষ্যে ব্রত পালন করেন৷ তিনদিন পরে জামাকাপড়, বিছানা সাবান দিয়ে ধুয়ে, নিজেরা সাবান- শ্যাম্পুতে স্নান করে সবকিছুতে হাত দেন। শুধু কামাখ্যা নয়, অম্বুবাচী চলাকালীন বিভিন্ন মন্দির ও বাড়ির ঠাকুর ঘরের মাতৃ শক্তির প্রতিমা বা ছবি কাপড় দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়।