মাঘ মাসের শুক্লা পঞ্চমী তিথিতে বসন্ত পঞ্চমী (Vasant Panchami) বা সরস্বতী পুজো (Saraswati Puja)। এবছর সরস্বতী পুজো পড়েছে ১৪ ফেব্রুয়ারি। বাগদেবীর আরাধনায় মেতে উঠবেন সকলে। দেবী সরস্বতী সম্পর্কে বেশিরভাগ মানুষই জানেন। তবে দেবী মাতঙ্গীর কথা অজানা প্রায় সকলের। দেশের কিছু অঞ্চলে সরস্বতী পূজিত হন সম্পূর্ণ অন্য রূপে, যার নাম মাতঙ্গী।
দশমহাবিদ্যার নবম রূপ এবং দেবী সরস্বতীর তান্ত্রিক রূপই হলেন দেবী মাতঙ্গী। বাগদেবীর মতো তিনিও বিদ্যা ও সঙ্গীতের দেবী। কিন্তু সরস্বতীর সঙ্গে মাতঙ্গীর রয়েছে বেশ কিছু পার্থক্য। তন্ত্র ধর্ম মতে, মাতঙ্গীর বাহ্যিক রূপ, ভোগ এবং অন্যান্য বৈশিষ্টের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে নানা কাহিনি। দেবী মাতঙ্গীর আরেক নাম উচ্ছিষ্টা চণ্ডালিনী। পুরাণ অনুযায়ী, মাতঙ্গ নামের এক মুনির আশ্রমে দেবতারা যখন সাধনা করছিলেন, তখন দেবী মাতঙ্গী আবির্ভূতা হয়ে শুম্ভ ও নিশুম্ভকে বধ করেন। তাই এই দেবীর মাথায় চাঁদ শোভিত।
শাস্ত্রজ্ঞরা বিশ্লেষণ করেন, যখন দেবী মহাকালীর রুদ্ররূপিণী পাপনাশিনী রূপ এবং দেবী সরস্বতীর অসীম জ্ঞান একইরূপে মিলিত হয়, তখন সৃষ্টি হয় দেবী মাতঙ্গীর। এজন্যে একমাত্র জ্ঞান ও শক্তির মিলিত রূপই পারে পাপকে ধ্বংস করে পৃথিবীতে পুণ্যের আলো ছড়িয়ে দিতে।
দেবী সরস্বতীর ও মাতঙ্গীর মধ্যে কী কী পার্থক্য?
সরস্বতী শ্বেতবর্ণা, একহাতে বীণা এবং অন্যহাতে পুস্তক। মাতঙ্গী শ্যামবর্ণা। তার চার হাতে বীণা, বরাভয় বা অভয় মুদ্রা, নর -করোটি এবং খড়্গ থাকে। এই নর- করোটির উপর আবার বসে থাকে টিয়াপাখি। দেবী সরস্বতী শ্বেতবসনা, অন্যদিকে মাতঙ্গী ঠিক বিপরীত- রক্তবসনা। তবে এক্ষেত্রে রয়েছে একটি বৈশিষ্ট। রক্তবসন এই দেবীর পরিধান নয়। রজঃস্বলা নারীর মাসিক প্রবাহ দ্বারা রঞ্জিত বস্ত্রই মাতঙ্গীর প্রিধান। সরস্বতীর বাহন রাজহংস। দেবী মাতঙ্গীর সহচর টিয়া পাখি। কথিত আছে টিয়া পাখি ভবিষ্যৎদ্রষ্টা এবং মহাজ্ঞানী।
সরস্বতীকে ভোগ হিসাবে নিবেদন করা হয়, ফল, খিচুড়ি, বাসন্তী পোলাও, মিষ্টি এবং অন্যান্য নিরামিষ সুদ্ধ খাবার। তবে শুনলে অবাক হবেন, দেবী মাতঙ্গীর মনুষ্য উচ্ছিষ্ট খাবার ভোগ হিসাবে গ্রহণ করেন। তা সে নিরামিষ হোক কিংবা আমিষ। আর এই ভোগের কারণেই তাঁর আরেক নাম 'উচ্ছিষ্টা চণ্ডালিনী'।
ভারতের কোথায় আছে দেবী মাতঙ্গীর মন্দির?
অসমের কামাখ্যার মূল মন্দিরের ভিতরে তান্ত্রিক দশমহাবিদ্যার দশ দেবীর আলাদা মন্দির রয়েছে। যার মধ্যে নবম মহাবিদ্যা- দেবী মাতঙ্গী কন্যারূপে। কর্ণাটকের বেলেগাওঁ, অন্ধ্রপ্রদেশের মাদানাপাল্লাতে, তামিলনাড়ুর নাঙ্গুর এবং মধ্যপ্রদেশের ঝাবুয়াতে রয়েছে দেবী মাতঙ্গীর মন্দির।
শাস্ত্রজ্ঞরা মনে করেন, দেবী মাতঙ্গী তার ভক্তদের অন্তরের দুর্নীতি, পরশ্রীকাতরতা এবং কুণ্ঠাবোধের সমস্ত ক্লেদ নিজ অঙ্গে গ্রহণ করে মানুষের অন্তর শুদ্ধি করেন। মানুষের মধ্যেই তার উপস্থিতি। তাই মানুষকে অবহেলা করে উৎকৃষ্ট ভোগ তাকে নিবেদন করলেও, তিনি সন্তুষ্ট হবেন না।