উৎসবপ্রেমী বাঙালির সবচেয়ে বড় পার্বণ এই দুর্গা পুজো। বছরের নতুন পঞ্জিকা বা ক্যালেন্ডার হাতে পেলেই বাঙালিরা যেই দিনগুলিতে সবার আগে চোখ বোলায়, তার মধ্যে দুর্গা পুজো (Durga Puja) একটি। পশ্চিমবঙ্গ তো বটেই, এমনকি গোটা বিশ্বের বাঙালিরা জাকজমকপূর্ণ ভাবে উদযাপন করেন এই পুজোর।
আসাম, ত্রিপুরা, ওড়িশা এবং বিহার রাজ্যেও ব্যাপক উৎসাহ এবং উদ্দীপনার সঙ্গে পালিত হয় দুর্গা পুজো। আশ্বিন মাসে প্রায় দশ দিন ধরে দুর্গা পুজো উৎসব পালিত হয়। যদিও প্রকৃত অর্থে, উৎসব শুরু হয় ষষ্ঠি দিন থেকে।
যুগ যুগ ধরে বিশ্বাস করা হয় যে, এদিনই দেবী দুর্গা মর্ত্যে এসেছিলেন। মহালয়ার দিন পিতৃপক্ষের অবসান হয়ে, মাতৃপক্ষের সূচনা হয়। সেদিনই আক্ষরিক অর্থে দুর্গা পুজোর সূচনা। কথিত আছে মহালয়ার দিন অসুর ও দেবতাদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছিল। দেবী দুর্গা, মহিষাসুরকে বধ করেছিলেন। এজন্যেই এই উৎসব খারাপ শক্তির বিনাশ করে শুভশক্তির বিজয় ঘটায়।
পৌরাণিক কাহিনি অনুসারে, দেবী দুর্গা মহাঅষ্টমীতে মহিষাসুরকে বধ করেছিলেন। অসুর বধের জন্য স্বর্গের দেবতারা দেবীর দশ হাতে তুলে দিয়েছিলেন মোট দশটি অস্ত্র। জেনে নিন কে কোন অস্ত্র প্রদান করেছিলেন এবং সেই অস্ত্রের কী মাহাত্ম্য।
* পদ্ম
ব্রহ্মা, পদ্ম তুলে দিয়েছিলেন দেবী দুর্গার হাতে। পদ্ম জ্ঞানকে প্রতিনিধিত্ব করে এবং এর অর্থ জ্ঞানের মাধ্যমে মুক্তি। দেবীও অন্ধকারের মধ্যে থেকে আলোর দিশা দেখিয়েছিলেন এভাবেই।
* ত্রিশূল
দেবী দুর্গার হাতে ত্রিশূল তুলে দিয়েছিলেন মহাদেব। ত্রিশূলের তিনটি ফলা তিন মানব গুণকে ব্যাখ্যা করে - তমঃ, রজঃ এবং সত্য।
* গদা
যমরাজ প্রদান করেছিলেন গদা বা কালদণ্ড। এটিকে মূলত ভক্তি, আনুগত্য ও ভালোবাসার প্রতীক হিসাবে মনে করা হয়।
* সুদর্শন চক্র
মহামায়ার হাতে সুদর্শন চক্র তুলে দিয়েছিলেন বিষ্ণু। চক্র অর্থাৎ আবর্তন। তাই তাঁকে এই চক্র প্রদান করার অর্থ দেবীকে কেন্দ্র করেই আবর্তিত হয়ে চলেছে গোটা বিশ্ব।
* শঙ্খ
বরুণ, দেবী দুর্গার হাতে শঙ্খ তুলে দিয়েছিলেন। শঙ্খকে সৃষ্টির প্রতীক হিসাবে মনে করা হয়। পুরাণ অনুযায়ী শঙ্খ থেকে উৎপন্ন শব্দ থেকেই প্রাণের সৃষ্টি হয়েছে। সেজন্যেই দুর্গাকে পৃথিবীর সৃষ্টিকর্তা বলে মনে করা হয়।
* খড়্গ
খড়্গ বুদ্ধি এবং প্রজ্ঞার প্রতীক। এই অস্ত্রটি সাধারণত এমন ব্যক্তিরা বহন করেন, যাদের দায়িত্বজ্ঞান এবং বোঝার ক্ষমতা রয়েছে।
* বজ্রাস্ত্র বা অশনি
মহামায়ার হাতে বজ্র তুলে দিয়েছিলেন দেবরাজ ইন্দ্র। এটি অশনি দৃঢ়তা ও সংহতির প্রতীক। নিজেদের লক্ষ্যে পৌঁছাতে সক্ষম হন মানুষ, এই দুই গুণের মাধ্যমেই।
* তির ও ধনুক
পবনদেব দিয়েছিলেন তিরও ধনুক। উভয়ই ইতিবাচক শক্তির প্রতীক।
* অগ্নি
অগ্নি বিদ্যা ও জ্ঞানের প্রতীক। অগ্নিদেব এটি দেবীর হাতে তুলে দিয়েছিলেন।
* সাপ
দেবী দুর্গাকে শেষ নাগ প্রদান করেছিলেন নাগ। যদিও দুর্গার অনেক ছবিতে আশীর্বাদরত অবস্থায় একটি হাত খালি দেখায়। অথবা মহিষাসুরকে বধ করার জন্য ত্রিশূল ধরে থাকেন তিনি। দশম হাতে আসলে একটি সাপ ধরার কথা। এটি চেতনা এবং শিবের পুরুষালী শক্তির প্রতীক।
* এছাড়াও দেবীর বাম হাতে থাকে ঘণ্টা। কথিত আছে, দেবরাজ ইন্দ্রের বাহন ঐরাবত দেবী দুর্গাকে এই ঘণ্টা দিয়েছিলেন। ঘণ্টা ধ্বনি অসুরদের তেজকে দুর্বল করে। প্রজাপতি প্রদান করেছিলেন অক্ষমালা। ব্রহ্মা, কমণ্ডলুও দিয়েছিলেন দেবীকে। বিশ্বকর্মা দেবীকে, নির্মল পরশু, নানাবিধ অস্ত্রসমূহ এবং অভেদ্য বর্ম প্রদান করেন।
দুর্গার বাহন সিংহ
দুর্গার বাহন সিংহকে অস্ত্র হিসেবে বিবেচনা করা হয় না সাধারণত। তবে সিংহ শক্তির প্রতীক। তাই অনেকে মনে করেন সিংহ আসলে দুর্গার শক্তিশালী এক অস্ত্রের চেয়ে কম কিছু নয়।