Durga Puja 2022: 'চিন্ময়ীকে মৃন্ময়ীতে আবাহন'। দুর্গা ঠাকুর তৈরির সময় যৌনপল্লির মাটি লাগে, এই তথ্যটি বিশেষ নতুন নয়। পুরনো রীতি। যৌনপল্লি থেকে মাটি এনে তা মিশিয়ে দুর্গা প্রতিমা (Durga Idol) তৈরি করা হয়। অনেকেরই জানা। এখন প্রশ্ন হল, চণ্ডী পুরাণেও কি এই রীতি আছে?
যৌনপল্লির মাটি কেন ব্যবহার হয়, বা এই রীতির পিছনে যুক্তি কী, তা নিয়ে নানা মত রয়েছে। রীতিটির যৌক্তিকতা 'আজতক বাংলা'-কে জানালেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, পুরানবিদ ও ইতিহাসবিদ নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ি (Nrisingha Prasad Bhaduri)।
শুয়োরের খাত বা হাতির দাঁতে কাটা মাটিরও রীতি রয়েছে
'Custom has the force of Law'। নৃসিংহপ্রসাদের কথায়, 'অনেক কিছুই পরে তৈরি হয়েছে, যা পুরাণে নেই। মহাভারতে নেই, রামায়ণে নেই। আসলে মানুষ তো নিয়ম তৈরি করবেই।' তা হলে এই রীতির পিছনে যুক্তি কী? তিনি জানালেন, দুর্গাপ্রতিমা তৈরিতে শুধু যৌনপল্লির মাটি ব্যবহার-ই রীতি, এমনটা নয়। আরও অনেক রকম মাটির কথা বলা হয়েছে। যেমন, শুয়োরের খাত, অর্থাত্ শুয়োর যে মাটি কেটেছে। সেখান থেকে মাটি নিয়ে আসা। হাতি দাঁত দিয়ে যে মাটি কেটেছে, সেই মাটি। যদিও হাতি যে দাঁত দিয়ে মাটি কাটে না, কে বোঝাবে?
নৃসিংপ্রসাদ বলছেন, 'এই সব ভাবনা-চিন্তা অনেক পরে তৈরি হয়েছে। জমিদারবাড়ির লোকেরা যখন পুজো শুরু করেন, তখন তাঁরাই তৈরি করেছেন। পুরানে এরকম কোথাও নেই যে, যৌনপল্লির মাটি দিয়েই দুর্গাপুজো হবে।'
'সব স্ত্রী-ই আমি, অন্য কেউ নেই'
কেন তৈরি হল এই রীতি? নৃসিংহপ্রসাদের কথায়, 'দুর্গাপুজো যেহেতু মহোত্সব, তাই ওই সময় সমাজে জাতিভেদ, অন্তজ শ্রেণি ইত্যাদি মনে রাখা হয় না। এটা হল সবচেয়ে বড় যুক্তি। যেমন, সমাজে নানা অস্পৃশ্যতা রয়েছে, ব্রাহ্মণ নিম্নজাতিকে ছোঁবে না, আবার ডোম যে মাদুর তৈরি করত, তার উপর পেতেই লোকে বসেছে। সেরকমই যৌনপল্লি থেকে মাটি এই কারণেই নিয়ে এসো, যাতে আমরা যৌনকর্মীদের ঘৃণা না করি। তাঁরাও তো সমাজের একপ্রকার উপকার করছেন। চণ্ডীর মধ্যে একটা শ্লোক আছে, স্ত্রেয়ঃ সমত্সা সকলা জগত্সু। অর্থাত্, সব স্ত্রী-ই আমি, অন্য কেউ নেই। দেবী বলছেন, এই যে ব্রাহ্মবাদী ভক্তি, এই যে ব্যপ্তি, সর্বত্র তিনি-ই আছেন। তাই যৌনপল্লির মাটি মিশিয়ে নেওয়া হয় দুর্গাপ্রতিমা তৈরির মাটির সঙ্গে।'