মাঙ্গলিক, খবরের কাগজে পাত্র-পাত্রীর বিজ্ঞাপন থেকে শুরু করে জ্যোতিষ সংক্রান্ত নানা আলোচনায় বার বার শোনা যায় এই শব্দটি। জাতক-জাতিকার বিবাহের যোগ নির্ধারণের ক্ষেত্রে এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসাবে বিবেচিত হয়। কিন্তু কী এই মাঙ্গলিক! কেন এই শব্দটির প্রতি পাত্র-পাত্রীর পরিবারের এত ভীতি? আসুন এ সম্পর্কে জ্যোতিষশাস্ত্রের সঠিক ব্যাখ্যা জেনে নেওয়া যাক...
দক্ষিণ ভারতীয় জ্যোতিষশাস্ত্র মতে, রাশিচক্রের দ্বিতীয় ঘরে মঙ্গলের অবস্থান মাঙ্গলিক নির্দেশ করে। এ ছাড়াও জাতক-জাতিকার লগ্নে প্রথম, চতুর্থ, সপ্তম, অষ্টম, দশম ও দ্বাদশ স্থানে মঙ্গলের অবস্থানও মাঙ্গলিক নির্দেশ করে।
‘মাঙ্গলিক’ (দোষবিশেষ) শব্দটা জ্যোতিষশাস্ত্রে ভৌমদোষ (ভৌম শব্দে ভূমিপুত্র মঙ্গল গ্রহকে বোঝায়) কথাটার উল্লেখ আছে। ভৌম অর্থাৎ মঙ্গল, আর মঙ্গল থেকেই মাঙ্গলিক কথাটার উৎপত্তি। এই ভৌমদোষ পাত্রের ক্ষেত্রে বিবাহোত্তর জীবনে বিপত্নীক এবং পাত্রীর ক্ষেত্রে বিবাহোত্তর জীবনে স্বামীর অকালপ্রয়াণের অশুভ যোগ নির্দেশ করে।
জাতক-জাতিকার জন্মকুণ্ডলীতে বৃহস্পতি কিংবা শুক্র যদি লগ্ন, চতুর্থ, সপ্তম, দশম-এর কোনও এক স্থানে অবস্থান করে, সে ক্ষেত্রে ভৌমদোষ খণ্ডন হয়ে যায়। বৃহস্পতি কিংবা শুক্র যদি ওই ভাবে অবস্থান না করে মঙ্গলের সঙ্গে এক রাশিতে অবস্থান করে, সে ক্ষেত্রেও জাতক-জাতিকার ভৌমদোষ খণ্ডিত হয়।
কাশী-কঙ্কালীতলা সুড়ঙ্গ যোগ, জানুন সতীপীঠের ইতিহাস
যদি দেখা যায়, পাত্রের জন্মকুণ্ডলীতে ভৌমদোষের যোগ আছে, অথচ পাত্রীর নেই অথবা পাত্রীর আছে, তবে পাত্রের নেই, এ ক্ষেত্রে পাত্র-পাত্রী উভয়ের দীর্ঘায়ুযোগ থাকলে কারওই অকালপ্রয়াণ হবে না। পাত্র-পাত্রী উভয়েই দীর্ঘজীবন লাভ করবে, তবে এঁদের সারা জীবন মতবিরোধ, অশান্তি এমনকি বিচ্ছেদ পর্যন্ত হতে পারে।
কোনও পাত্র-পাত্রীর উভয়েরই জন্মকুণ্ডলীতে ভৌমদোষ থাকে, সে ক্ষেত্রে এঁদের বিবাহ হলে উভয়েই দীর্ঘ জীবন লাভ করেন। এ ক্ষেত্রে তাঁদের দাম্পত্য জীবনের সুখ-দুঃখটা নির্ভর করবে তাঁদের জন্মকুণ্ডলীতে অন্যান্য গ্রহের অবস্থানের ওপর।
জন্মকুণ্ডলীতে ভৌমদোষ থাকার ফলে স্বামী বা স্ত্রীর অকালপ্রয়াণ অথবা বিবাহবিচ্ছেদ হবেই, এমনটা নিশ্চিত ভাবে বলা যায় না। তবে তাঁদের দাম্পত্য জীবন খুব একটা সুখকর হবে না, এ কথা সুনিশ্চিত ভাবে বলা যায়। অনেকেই এই সমস্যার প্রতিকার বা বিধান দিতে পারেন বলে দাবি করলেও প্রকৃতপক্ষে জ্যোতিষ বা তন্ত্রশাস্ত্রে এর তেমন কোনও সুনিশ্চিত সমাধান নেই।