প্রীতম ব্যানার্জী
সতীপীঠের (Sati Pith) অন্যতম বীরভূমের নলাটেশ্বরী মন্দির (Nalateshwari Temple)। মা এখানে ত্রিনয়নী, কালিকা রূপে পূজিতা। পুরাণ মতে সতীর কণ্ঠনালী এখানে পড়েছিল। সেই কাহিনী অনুসারেই মন্দিরে মা নলাটেশ্বরীর অধিষ্ঠান। মায়ের নামানুসারেই জায়গার নাম নলহাটি (Nalhati)। সামনেই কালীপুজো। ইতিমধ্যেই কমবেশি শুরু হয়ে গিয়েছে পুজোর প্রস্তুতি। তবে করোনা পরিস্থিতিতে সমস্ত কিছুই চলছে সরকারি নিয়মাবলি মেনে।
বীরভূমের নলহাটি অঞ্চলে একটি ছোট টিলার ওপরে গড়ে উঠেছ মা নলাটেশ্বরীর মন্দির। একসময় ঘন জঙ্গলে ঢাকা ছিল এই এলাকা। সাধারণ মানুষের খুব একটা আনাগোনা ছিল না। সেসময় এই স্থান ছিল শুধুই তান্ত্রিকদের সাধন ক্ষেত্রে। যদিও পরবর্তী সময়ে পরিবেশের পরিবর্তন হয়। এপ্রসঙ্গে মন্দিরের ট্রাস্টি বোর্ডের সম্পাদক শুভব্রত সিনহা জানাচ্ছেন, মন্দিরের বর্তমান রূপ রানি রাসমনীর হাত ধরে। বিভিন্ন সময় এখানে হরিদ্বার, কাশি থেকে অনেক সাধুসন্তরা এসে সিদ্ধিলাভ করেছেন। তাঁদের মধ্যে অন্যতম কুশলানন্দ ব্রহ্মচারি। এমনকি গুজরাটের জয় অম্বে মন্দির থেকেও পুরোহিতরা এখানে এসে পূজার পদ্ধতি শিখে গিয়েছেন। বর্তমানে সেই জয় অম্বে মন্দিরে প্রতিকৃতী রয়েছে নলাটেশ্বরী মন্দিরের। শুভব্রতবাবু আরও জানাচ্ছেন, মা এখানে আমিষাশী। বছরের ৩৬৫ দিনই এখানে মাকে অন্নভোগ দেওয়া হয়। তবে শুধু মাত্র কালীপুজোর দিনই মায়ের ভোগ হয় রাত্রে। এছাড়া এখানে বলিপ্রথা এখনও চালু রয়েছে বলেও জানান তিনি। প্রথা মেনে দুর্গাপুজোর নবমী ও কালীপুজোর দিন নিশ্চিত ভাবেই বলি হয় মন্দিরে।
বছর ভর রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত, এমনকি ভিন রাজ্য থেকেও বহু ভক্ত ভিড় জমান মায়ের দ্বারে। মানত করে বিয়ে পৈতের মত শুভ অনুষ্ঠান সারেন মায়ের সামনেই। এক্ষেত্রে ট্রাস্টি বোর্ডের সম্পাদক জানাচ্ছেন, মূল মন্দিরের কোনও পরিবর্তন না হলেও যাত্রীদের সুবিধার্থে বিভিন্ন ব্যবস্থা এখানে করা হয়েছে। দর্শনার্থীদের জন্য বর্তমানে ৩০টি যাত্রীনিবাস তৈরি করা হয়েছে। সাধু সন্ন্যাসীদের জন্য পৃথক থাকার ব্যবস্থা রয়েছে। এছাড়াও রয়েছে সুলভ শৌচালয় সহ বিভিন্ন ব্যবস্থা।
সামনেই তো কালীপুজো। করোনা পরিস্থিতিতে সংক্রমণ এড়িয়ে পুজোর আয়োজনের জন্য কী কী ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে? এপ্রসঙ্গে শুভব্রতবাবু জানাচ্ছেন, সরকারি সমস্ত বিধি মেনেই নিত্যপুজো চলছে মন্দিরে। নির্দিষ্ট সময় অন্তর স্যানিটাইজ করা হচ্ছে মন্দির চত্বর। মাস্ক ছাড়া মন্দিরে প্রবেশ না করার অনুরোধ জানানো হচ্ছে ভক্তদের। একইসঙ্গে কারও মাস্ক না থাকলে তাঁকে বিনামূল্যে দেওয়া হচ্ছে মাস্ক। মন্দিরে প্রধান ফটকের সামনে দর্শনার্থীদের হাতে দেওয়া হচ্ছে স্যানিটাইজার। এছাড়া অন্যান্যবার কালীপুজোয় এখানে বসিয়ে খাওয়ানোর আয়োজন থাকলেও এবার হাতে হাতে প্রসাদ বিতরণের ব্যবস্থা করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।