আর কিছুদিন পরেই দীপান্বিতা অমাবস্যা, অর্থাৎ কালীপুজো (Kali Puja 2022)। আর শ্যামাসঙ্গীত ছাড়া কালীপুজো ভাবাই যায় না। এক্ষেত্রে বঙ্গদেশে শ্যামাসঙ্গীত রচনায় যে দুই কালীসাধক জোয়ার এনেছিলেন তাঁরা হলেন রামপ্রসাদ সেন (Ramprasad Sen) ও কমলাকান্ত ভট্টাচার্য (Kamalakanta Bhattacharya)। এই প্রতিবেদনে অবশ্য আলোচনা হবে কমলাকান্ত ভট্টাচার্যকে নিয়েই।
রামপ্রসাদ সেন প্রয়াত হন আনুমানিক ১৭৭৫ খৃষ্টাব্দে। আর তার বছর পাঁচেক আগে, অর্থাৎ ১৭৭০ খৃষ্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন কমলাকান্ত ভট্টাচার্য। যদিও সেই সালটিও অনুমান নির্ভর। কমলাকান্ত ভট্টাচার্যের জন্ম অম্বিকা কালনার বিদ্যাবাগীশ পাড়ার বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবারে। অর্থাৎ কমলাকান্তের আসল পদবী ছিল বন্দ্যোপাধ্যায়। ভট্টাচার্য ছিল তাঁদের প্রাপ্ত উপাধি। তাঁর বাবা ছিলেন মহেশ্বর ভট্টাচার্য এবং মা ছিলেন মহামায়াদেবী।
শ্মশানে দীক্ষা দেন তান্ত্রিক
শৈশবেই বাবাকে হারান কমলাকান্ত। স্বামীর মৃত্যুর পর দুই ছেলেকে নিয়ে বর্ধমানের খানা জংশনের নিকটবর্তী চান্না গ্রামে নিজের বাপের বাড়িতে চলে যান মহামায়াদেবী। টোলে শুরু হয় কমলাকান্তের পড়াশোনা। তবে ছোট থেকেই গানের প্রতি বিশেষ আকর্ষণ ছিল কমলাকান্তের। এক্ষেত্রে কমলাকান্ত সেনের গান তাঁকে বিশেষভাবে প্রভাবিত করেছিল বলেই জানা যায়। তবে কমলাকান্ত শুধুমাত্র শাক্ত-পদ রচনায় খ্যাতি অর্জন করেছিলেন। কিন্তু কমলাকান্ত শ্যামাসঙ্গীতের (Shyama Sangeet) পাশাপাশি আগমনী ও বিজয়ার পদ রচনাতেও বিশেষ খ্যাতি অর্জন করেছিলেন। আপন মনে মাঠে ঘাটে গান গেয়ে বেড়াতেন কমলাকান্ত। শোনা যায়, কোনও এক রাতে একটি শ্মশানে অন্ধকারে বসে আত্মমগ্ন হয়ে গান গাইবার সময় এক অশরীরী তান্ত্রিক কাপালিক তাঁকে কালীনামে দীক্ষা দেন এবং সেই মন্ত্র জপ করতে করতে সেখানেই আনন্দময়ী নৃত্যরতা শ্যামা মায়ের দর্শন পান কমলাকান্ত।
চিতার পাশেই নেচে উঠলেন কমলাকান্ত
কালীসাধক কমলাকান্তের দেবী দর্শনের আরও কাহিনি রয়েছ। অল্প সময়ের ব্যবধানেই পত্নী ও মাতৃবিয়োগ হয়েছিল কমলাকান্তের। শোনা যায়, সেই সময় চিতার আগুনের মধ্যেই মা জগদম্বাকে আবির্ভূতা হতে দেখেন তিনি। আর তা দেখেই চিতার চারপাশে নৃত্য করতে করতে গেয়ে উঠেছিলেন, 'কালী! সব ঘুচালি লেঠা, তোমার যারে কৃপা হয়, তার সৃষ্টিছাড়া রূপের ছটা।'
একসময় কমলাকান্তর কালীসাধনার কথা জানতে পেরে তাঁকে বর্ধমানে নিয়ে আসেন সেখানকার তত্কালীন মহারাজ তেজচন্দ্র মহাতাব। সেখানে কমলাকান্তকে মা কালীর নিত্যসেবার দায়িত্ব দেন তিনি। পাশাপাশি নিজের উশৃঙ্খল পুত্র প্রতাপচাঁদকে সুপথে ফেরানোর জন্যও কমলাকান্তের দ্বারস্থ হন মহারাজ। কমলাকান্তকে বর্ধমানের বোরহাটের লাকুড্ডিতে একটি বাড়ি এবং কোটালহাটে একটি মন্দিরের জমিও দান করেছিলেন তেজচন্দ্র। সে জমিতেই মন্দির স্থাপনা করে সিদ্ধিলাভ করেন কমলাকান্ত। বর্তমানে সেই মন্দির 'সাধক কমলাকান্ত কালীবাড়ি' নামেই পরিচিত।
মন্দির ঘিরে অলৌকিক কাহিনি
এই মন্দিরকে ঘিরেও অনেক কাহিনি রয়েছে। শোনা যায়, মা কালী মন্দিরে জীবিত অবস্থায় রয়েছেন তা প্রমাণ করতে মহারাজ তেজচন্দ্রেরর সামনেই কালীমূর্তির পায়ে বেলকাঁটা ফুটিয়ে রক্ত বের করে দেখান কমলাকান্ত। এমনকি, অমবস্যায় মহারাজকে কমলাকান্তকে পূর্ণিমার চাঁদও দেখিয়েছিলেন বলেও লোকমুখে শোনা যায়। প্রসঙ্গত, কমলাকান্তের সময় থেকেই মন্দিরে দেবীকে দেওয়া হত মাগুর মাছের ভোগ, যা আজও বর্তমান।