প্রীতম ব্যানার্জী
মুর্শিদাবাদ(Mursidabad), নাম শুনলেই যেন চোখের সামনে ভেসে ওঠে প্রাচীন বাংলার নবাবী আমল। তবে শুধু ঐতিহাসিক দিক থেকেই নয়, পৌরাণিক দিক থেকে থেকেও এই জেলার গুরুত্ব অসীম। এই জেলাতেই রয়েছে ৫১ সতীপীঠের (Sati Pith) অন্যতম কিরীটেশ্বরী মন্দির। মা কিরীটেশ্বরী (Kiriteswari) এখানে দক্ষিণাকালী ধ্যানে পূজিতা। প্রত্যেক নিশি রাতেই মায়ের পুজো হয়। সেই মতো আসন্ন দীপাবলিতেও হবে মায়ের আরাধনা। তবে করোনা পরিস্থিতিতে অবশ্য ভক্তদের জমায়েতের ক্ষেত্রে বেশকিছু সতর্কতা অবলম্বন করছে মন্দির কর্তৃপক্ষ।
কিরীটেশ্বরী মন্দিরের ইতিহাস নিয়ে অবশ্য বহু মত প্রচলিত আছে। প্রাচীন ইতিহাস অনুসারে এর নাম ছিল কিরীটকণা। তাই কেউ বলেন এখনে সতীর মুকুটের কণা পড়েছিল, আবার কেউ বলেন ললাট বা কপাল। কিন্তু মন্দিরের সেবাইত দিলীপকুমার ভট্টাচার্য জানাচ্ছেন,"কিরীট কথাটি এসেছে করোটি বা মাথার খুলি থেকে। আর সেই করোটির টুকরো আছে বলেই নাম হয়েছে কিরীটী। সেখান থেকে নামকরণ কিরীটেশ্বরী।" মন্দিরের প্রতিষ্ঠা ও পরবর্তী সময়ে সংস্কারের বিষয়েও নানা তথ্য উঠে এল দিলীপবাবুর কথা থেকে। তিনি জানান, ১১০৪ বঙ্গাব্দে মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন নাটোরের রানি ভবানী। পরবর্তী সময়ে মহারাজা রাও যোগেন্দ্রনারায়ণ রাই ১৩৩৭ বঙ্গাব্দে এই মন্দিরের সংস্কার করেন। তবে দিলীপবাবু জানাচ্ছেন যোগেন্দ্রনারায়ণ রাইয়ের সময়ের যে তথ্য পাওয়া গেছে তাতে পুনঃ সংস্কারের কথা উল্লেখ রয়েছে। সেক্ষেত্রে তার আগে আরও কেউ এই মন্দিরের সংস্কার করেছেন বলেই মনে করা হয়।
তিন ধর্মের স্থাপত্যের মিশেল রয়েছে এই মন্দিরে। এক্ষেত্রে মন্দিরের সেবাইত দিলীপকুমার ভট্টাচার্য জানাচ্ছেন, হিন্দু, বৌদ্ধ ও ইসলাম ধর্মের স্থাপত্যের নিদর্শন পাওয়া যায় এই মন্দিরে। এমনকি শোনা যায় একসময় এই মন্দিরের চরণামৃত গ্রহণ করে কুষ্ঠ রোগ থেকে মুক্তি পান নবাব মীর জাফর। পরবর্তী সময়ে কিরীটেশ্বরীতে একটি পুস্করিণী খনন করে দেন মীর জাফর। পূর্ব-পশ্চিমে খনন করা ওই পুষ্করিণী কালী সাগর নামে পরিচিত।
বছরের বিশেষ বিশেষ দিনে মন্দিরে ঢল নামে ভক্তদের। আর দূর দূরান্ত থেকে আসা ভক্ত থাকার জন্য পান্থশালাও রয়েছে মন্দিরে। তবে করোনা কালে পরিস্থিতিটা অন্য। সংক্রমণ ঠেকাতে ইতিমধ্যেই বেশকিছু সতর্কতা অবলম্বন করেছে মন্দির কর্তৃপক্ষ। সেবাইত দিলীপবাবু জানাচ্ছেন, সম্প্রতি কৌশিকী অমাবস্যাতেও ভক্তদের ভিড় হয়েছিল মন্দিরে। তবে যাতে একসঙ্গে বেশি ভিড় না হয় সেজন্য আগাম সচেতনতামূলক প্রচার চালানো হয়েছিল। আসন্ন দীপাবলির ক্ষেত্রেও সেই ধরনেরই পরিকল্পনা করা হয়েছে। এক্ষেত্রে একসঙ্গে ১০ থেকে ২০ জন করে ভক্তকে নিয়ে পুজো ও স্তব পাঠ করিয়ে ছেড়ে দেওয়া হবে ঠিক হয়েছে। পাশাপাশি এবছর ভোগের ব্যবস্থাও সেভাবে থাকছে না বলে জানা যাচ্ছে।