scorecardresearch
 

পৌরাণিক গল্পে গাঁথা এই সতীপীঠ, জানুন মা বর্গভীমার কাহিনী

ঐতিহাসিক স্মৃতি বিজরীত শহর তাম্রলিপ্ত। বর্তমানে যা তমলুক নামে পরিচিত। স্বাধীনতা সংগ্রামেও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভমিকা ছিল এই শহরের। আবার পুরাণ মতেও বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ এই তমলুক। পৌরাণিক কাহিনী অনুসারে এই শহরেই পড়েছিল সতীর বাম পায়ের গোড়ালি। আর সেখানেই গড়ে উঠেছ তমলুকের প্রধান দেবী মা বর্গভীমার মন্দির (Ma Bargabhima Temple)। এই সতীপীঠের (Sati Pith) প্রধান উৎসব কাত্যায়নী চতুর্দশী তিথিতে বিশেষ পুজো এবং দুর্গাপুজো। সেই উপলক্ষে বছর বছর ভক্তদের ব্যাপক ভিড় হয় মন্দিরে। তবে এবছর করোনা পরিস্থিতির জেরে ছবিটা অন্য। তাই দুর্গাপুজোর মত আসন্ন কালীপুজো ও কাত্যায়নী চতুর্দশী তিথির পুজোয় বেশকিছু সতর্কতা অবলম্বন করছে মন্দির কর্তৃপক্ষ। 

Advertisement
মা বর্গভীমা মা বর্গভীমা
হাইলাইটস
  • সতীর বাম পায়ের গোড়ালি পড়েছিল এখানে
  • রাজা তাম্রধ্বজ মায়ের পুজো শুরু করেন
  • কালাপাহাড়ের ধ্বংসলীলা থমকে গিয়েছিল মা বর্গভীমার কাছে

প্রীতম ব্যানার্জী

ঐতিহাসিক স্মৃতি বিজরীত শহর তাম্রলিপ্ত। বর্তমানে যা তমলুক নামে পরিচিত। স্বাধীনতা সংগ্রামেও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভমিকা ছিল এই শহরের। আবার পুরাণ মতেও বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ এই তমলুক। পৌরাণিক কাহিনী অনুসারে এই শহরেই পড়েছিল সতীর বাম পায়ের গোড়ালি। আর সেখানেই গড়ে উঠেছ তমলুকের প্রধান দেবী মা বর্গভীমার মন্দির (Ma Bargabhima Temple)। এই সতীপীঠের (Sati Pith) প্রধান উৎসব কাত্যায়নী চতুর্দশী তিথিতে বিশেষ পুজো এবং দুর্গাপুজো। সেই উপলক্ষে বছর বছর ভক্তদের ব্যাপক ভিড় হয় মন্দিরে। তবে এবছর করোনা পরিস্থিতির জেরে ছবিটা অন্য। তাই দুর্গাপুজোর মত আসন্ন কালীপুজো ও কাত্যায়নী চতুর্দশী তিথির পুজোয় বেশকিছু সতর্কতা অবলম্বন করছে মন্দির কর্তৃপক্ষ। 

মা বর্গভীমার মন্দিরের ইতিহাস নিয়ে প্রচলিত রয়েছে নানা গল্প। মন্দির কমিটির সম্পাদক শিবাজি অধিকারী জানাচ্ছেন, একসময় এখানে রাজত্ব করতেন ময়ূর বংশীয় রাজা তাম্রধ্বজ। শ্রীকৃষ্ণের অশ্বমেধ যজ্ঞের ঘোড়া তিনি আটকে দিয়েছিলেন। তখন শ্রীকৃষ্ণ নাকি স্বয়ং তাঁকে ঘোড়া ছেড়ে দেওয়ার জন্য অনুরোধ করেন। শোনা যায় সেসময় এক জেলে রাজবাড়িতে রোজ শোল মাছ দিতেন। কিন্তু রোজ জ্যান্ত শোল মাছ সরবরাহ করা ছিল কঠিন কাজ। একদিন শোল মাছ মরে যাওয়ায় কান্নাকাটি করছিলেন জেলে। সেসময় একটি অল্পবয়সী মেয়ে ওই জেলেকে বলে, পাশে একটি কুণ্ড আছে, যার জল শোল মাছের ওপর ছিটিয়ে দিলে তা ফের জীবন্ত হয়ে উঠবে। সেই মতো কাজ করেন জেলে এবং দেখেন মাছ জীবন্ত হয়ে উঠেছে। এরপর সেভাবেই রোজ জ্যান্ত শোল মাছ সরবরাহ করতেন তিনি। কিন্তু তাতে রাজার মনে কৌতুহল জাগে। একদিন তিনি জানতে চান কীভাবে রোজ জ্যান্ত শোল মাছ সরবরাব করেন জেলে। তখন আসল ঘটনা খুলে বলেন ওই জেলে। এরপর রাজা সেখানে গিয়ে দেখেন কোনও কুণ্ড নেই, বরং রয়েছে এক প্রস্তর মূর্তি। সেই মূর্তিকেই পুজোর ব্যবস্থা করেন রাজা। সেই রীতি মেনে আজও দুর্গাপুজর সময় প্রথম পুজো আসে রাজবাড়ি থেকেই। 

Advertisement
মা বর্গভীমার মন্দির
মা বর্গভীমার মন্দির

কাহিনী অবশ্য এখানেই শেষ নয়, রয়েছে আরও গল্প। শিবাজিবাবুর কথা অনুযায়ী, বঙ্গে বর্গী আক্রমণের সময় সেনাপতি কালাপাহাড় বিভিন্ন মন্দিরে ধ্বংসলীলা চালাচ্ছিলেন। কিন্তু এই মন্দিরে এসে থমকে যান তিনি। ধ্বংস তো দূরস্ত উল্টে মায়ের পুজো করে সেখান থেকে ফিরে যান কালাপাহাড়। এমনকি এই মন্দিরের সঙ্গে চিনা পরিব্রাজক ফা হিয়েন, হিউয়েন সাং এবং অশোক পুত্রের সিংহল যাত্রার কাহিনীও জড়িয়ে রয়েছে বলে জানাচ্ছেন মন্দির কমিটির সম্পাদক। 

তমলুকবাসীর বিশ্বাস শহরের যেখানেই শক্তি পুজো হোক না কেন, আগে পুজো দিতে হবে মা বর্গভীমাকে। আর সেই বিশ্বাসেই বিভিন্ন উৎসব পার্বনে তো বটেই, বছরের অন্যান্য দিনেও ভিড় লেগে থাকে মা বর্গভীমার দ্বারে। তবে করোনা পরিস্থিতিতে সেই ছবিটা অবশ্য বদলেছে। আর সংক্রমণ রুখতে বেশকিছু ব্যবস্থা নিয়েছে মন্দির কর্তৃপক্ষও। শিবাজিবাবু জানাচ্ছেন, মন্দিরের বড় চাতালে দূরত্ব বিধি মেনে ভক্তদের পুজো দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। মন্দিরে ঢুকতে গেলে মাস্ক ব্যবহার আবশ্যিক করা হয়েছে। রয়েছে হ্যান্ড স্যানিটাইজারের ব্যবস্থা। এছাড়া এই পরিস্থিতিতে এবার ভোগ বিতরণের ব্যবস্থা বন্ধ রাখা হয়েছে বলে জানালেন তিনি।  

 

Advertisement