পৃথিবীর সর্ববৃহৎ ধর্মীয় সমাবেশ হল কুম্ভ। সুমুদ্রমন্থনে প্রাপ্ত অমৃত দেবতাদের কাছে রাখার দায়িত্ব পড়ে দেবরাজ ইন্দ্রের পুত্র জয়ন্তের উপর। এই কাজ সম্পন্ন করার সময় চার স্থানে কয়েক ফোঁটা অমৃত পড়ে। সেই চার স্থানের নাম হল প্রয়াগরাজ, হরিদ্বার, নাসিক এবং উজ্জয়িনী। এই চার স্থানেই পালিত হয় মহাকুম্ভের স্নানযাত্রা। কিন্তু ১৪৪ বছর পর মহাকুম্ভ নিয়ে যে মাতামাতি শুরু হয়েছে তা আদৌও কতটা ঠিক? bangla.aajtak.in-কে এই বিষয়ে ভারতীয় মহাকাব্য ও পুরাণ বিশেষজ্ঞ নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ী সুন্দরভাবে ব্যাখ্যা করলেন।
১৪৪ বছর পর মহাকুম্ভ?
নৃসিংহপ্রসাদ এ প্রসঙ্গে বলেন, 'দেখো আমি সত্যিই এটা জানি না যে ১৪৪ বছর পর কী হচ্ছে, ১৪৪ বছর আগে আসলে কী হয়েছিল। ১৪৪ বছর পর যে ঘটনা ঘটেছে, সেটার রেকর্ড কোথাও আছে কিনা। সূর্য-চন্দ্র-নক্ষত্র একসঙ্গে আসাটা, গ্রহের সংযোগটা ১৪৪ বছর পর হয়েছিল, ১৪৪ বছর আগে কুম্ভমেলাটা কি আদৌও হয়েছিল, এত আড়ম্বর সহকারে হয়েছিল, এটা জিজ্ঞাসা রয়েছে আমার। তাই ১৪৪ বছর আগে না পরে কোনটা মহাকুম্ভ তা জানা নেই। এটা খানিকটা এরকম যে আগে মহাষ্টমী, মহানবমী ছিল, এখন মহাসপ্তমীও হয়েছে, মহাষষ্ঠীও হয়েছে। এখন আমি মহাজামাই ষষ্ঠীর জন্য অপেক্ষা করছি। এই মহাকুম্ভটাও খানিকটা সেরকমই। যার উল্লেখ কোনও শাস্ত্র-পুরাণে নেই।'
কুম্ভের তাৎপর্য
নৃসিংহপ্রসাদ এ প্রসঙ্গে বলেন, 'কুম্ভের তাৎপর্য যেটা অমৃত মন্থন থেকে এসেছে, কুম্ভ মানে অমৃতের কলস। সমুদ্র মন্থন করে যে অমৃত পাওয়া যায় সেটা চার জায়গায় পড়েছিল, প্রয়াগরাজ, হরিদ্বার, নাসিক ও উজ্জয়িনি। এই চার জায়গায় কুম্ভ হয়। গঙ্গার ধার মানে হরিদ্বার। এটাই পর পর হয়, ১২ বছরে একটা হয়, সেটাই হয়তো মহাকুম্ভ। এর সঙ্গে যে কুম্ভের সুধা পতন, অর্থাৎ অমৃত ছলকে পড়, এই কুম্ভের সঙ্গে তার কোনও সম্পর্ক নেই। কুম্ভ মেলা অনেক পরে চালু হয়েছে, কোনও পুরাণে উল্লেখ নেই। একমাত্র ভবিষ্য পুরাণ, এই পুরাণের মধ্যে কিন্তু আকবরের কথাও আছে, সেখানে কুম্ভে একটা বড় সমাগম হচ্ছে এটুকু দেখতে পাচ্ছি। সেখানে কোথাও অমৃত ছলকে পড়ার উল্লেখ কোথাও নেই। কুম্ভ অর্থাৎ সেই কলসি যেখান থেকে অমৃত ছলকে পড়েছে। এইসব জ্যোতিষশাস্ত্রীয় মতে এখন কুম্ভ-মহাকুম্ভ এইসব হচ্ছে। রামায়ণ, মহাভারত প্রতিটি পৌরাণিক গ্রন্থে অমৃত মন্থনের কথা রয়েছে, কিন্তু কুম্ভ মেলার কথা কোথাও নেই।'
কুম্ভ-মহাকুম্ভ আসলে কী?
এই নিয়ে নৃসিংহপ্রসাদ বলেন, 'এটা হাইপ তৈরি হয়েছে এছাড়া আর কিছু নয়, শাস্ত্রীয় মতে অমৃত মন্থন এটা সমুদ্র মন্থনের ব্যাপার, সেই শাস্ত্রীয় ভাবেই, আর সবচেয়ে বড় শাস্ত্র হচ্ছে গীতা, সেখানে একটা কথা বলা হচ্ছে যে আমি কারো পাপও গ্রহণ করি না, পুণ্য গ্রহণ করি না, আমি কারো পাপ-পুণ্যের জন্য দায়ি নই। ভগবান কাউকে পাপ দেয় না ভগবান কাউকে পুণ্য দেয় না। পাপ ও পুণ্য কর্মের দ্বারা সৃষ্টি হয়, তা শত গঙ্গাস্নান ও তীর্থস্নান করলেও যাবে না। তাই মহাকুম্ভে গিয়ে পাপ ধোওয়ার বিষয়টি একটা হাইপ ছাড়া আর কিছুই নয়। পুরাণ বিশেষজ্ঞ বলেন, 'সরস্বতী, গঙ্গা, যমুনার সঙ্গম তৈরি হয়েছ প্রয়াগরাজে। প্রয়াগের তীর্থ মাহাত্ম্য প্রচুর। তবে কোনও পুরাণে কিন্তু কুম্ভ শব্দের উল্লেখ নেই। সমুদ্র মন্থনের ফলে যে অমৃত ভরা কুম্ভ উঠে এসেছিল, তার সঙ্গে এই কুম্ভের কোনও যোগ নেই। কিন্তু এই যে কুম্ভের যে অমৃত যার সঙ্গে প্রধান যোগ কুম্ভের বলা হচ্ছে, তার কিন্তু কোনও উল্লেখ নেই। শাস্ত্রে বলা হয়েছে চার জায়গায় অমৃত পড়েছে, কিন্তু তা নিয়ে কুম্ভ মেলা করতে হবে তা বলা হয়নি।'
সম্প্রতি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ১৪৪ বছর পর মহাকুম্ভ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন। যদিও তিনি বলেন, 'আমি এব্যাপারে অজ্ঞ। যাঁরা বিশেষজ্ঞ তাঁরা সঠিক তথ্যটা জানান।' মুখ্যমন্ত্রী বলেন, 'যাঁরা বলছেন ১৪৪ বছর কুম্ভ হচ্ছে, সেটা ঠিক নয়। একতরফা প্রচার করা হচ্ছে। যদি ভুল থাকে সংশোধন করে দেবেন। ১৪৪ বছর পর কুম্ভ হচ্ছে বা ১৪৪ বছর আগে কুম্ভ হয়েছিল, আমি এব্যাপারে অজ্ঞ। বিশেষজ্ঞরা যাঁরা আছেন, তাঁদের অনুরোধ, আপনারা গবেষণা করে আমাদের সঠিক তথ্যটা জানান।' মুখ্যমন্ত্রীর এই বিতর্কিত বক্তব্য নিয়ে মুখ খোলেন উত্তরাখণ্ডের জ্যোতিষ পিঠের ৪৬তম শঙ্করাচার্য স্বামী অভিমুক্তেশ্বরনন্দ সরস্বতী। তিনি মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যকে সমর্থন করেন। তিনি বলেন, 'মিথ্যা প্রচার চালানো হচ্ছে, ১৪৪ বছরের তথ্যটাই মিথ্যে। এটা শুধুমাত্র একটা প্রোপোগান্ডা।'