বাংলা সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উৎসব পৌষ পার্বণ বা মকর সংক্রান্তি, যা পৌষ মাসের শেষ দিন পালন করা হয়। হিন্দু ধর্মে এই উৎসবকে ঘিরে শোনা যায় নানা লোককথা। তবে জানেন কেন পালন করা হয় এই উৎসব? রইল পুরাণের কাহিনি।
মকর/ পৌষ সংক্রান্তি ২০২৩ -এর দিনক্ষণ (Makar/ Poush Sankranti 2023 Date)
বেশিরভাগ বছর মকর সংক্রান্তির দিন অপরিবর্তিত থাকে। সাধারণত ১৪ জানুয়ারই পড়ে মকর সংক্রান্তির দিন। এবছরও এই বিশেষ দিনটি পড়েছে ১৫ জানুয়ারি, রবিবার।
মকর সংক্রান্তির গুরুত্ব (Makar Sankranti Importance & Significance)
'সংক্রান্তি' কথাটির অর্থ গমন করা। নিজ কক্ষপথ থেকে সূর্যের মকর রাশিতে প্রবেশ করাকে সংক্রান্তি বলা হয়। শুভ কাজগুলি এদিন থেকেই শুরু হয়। আবার নতুন ফসল তোলার উৎসবই মকর সংক্রান্তি। এদিনে দক্ষিণায়ন শেষে সূর্যের উত্তরায়ণ পালিত হয়।
মকর সংক্রান্তিতে মহাভারতে পিতামহ ভীষ্ম শরশয্যা ইচ্ছামৃত্যু গ্রহণ করেছিলেন। আবার শোনা যায় সূর্য এদিন নিজের ছেলে মকর রাশির অধিপতি শনির বাড়ি এক মাসের জন্য ঘুরতে গিয়েছিলেন। এছাড়াও শোনা যায়, এই বিশেষ দিনে দেবতাদের সঙ্গে অসুরের যুদ্ধ শেষ হয়েছিল। অসুরদের বধ করে তাদের কাটা মুন্ডু পুঁতে দেওয়া হয়েছিল মন্দিরা পর্বতে। সেজন্যেই অশুভ শক্তির বিনাশ হয়ে শুভ শক্তির প্রতিষ্ঠা হয় এইদিনে, বলেই বিশ্বাস করেন সকলে।
মকর/ পৌষ সংক্রান্তির নিয়মকানুন (Makar/ Poush Sankranti Rituals)
মনে করা হয়, মকর সংক্রান্তিই মরসুমের নতুন ফসল ওঠার প্রথম দিন ও শীতকালের শেষ দিন। সংক্রান্তির সঙ্গে জড়িয়ে আছে বাঙালিদের বেশ কয়েকটি নিয়ম -আচার। এই বিশেষ দিন দূরে কোথাও যাত্রা করা ঠিক না এবং অন্য কোথাও গেলেও রাতে বাড়ি ফিরে আসার নিয়ম। সংক্রান্তির আগে বাঙালিরা ঘরবাড়ি, রান্নার বাসন পরিষ্কার করেন এবং অশুভ শক্তিকে বিদিয় জানান।
মকর/ পৌষ সংক্রান্তির উৎসব (Makar/ Poush Sankranti Festival)
দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার সাগরদ্বীপে প্রত্যেক বছর আয়োজন হয় গঙ্গাসাগর মেলার। কপিল মুনির আশ্রমকে কেন্দ্র করে পুণ্যস্নান ও বিরাট মেলা অনুষ্ঠিত হয়। গঙ্গায় পবিত্র স্থান করতে সেখানে দূর দূর থেকে আসেন লক্ষ লক্ষ পুণ্যার্থী। করোনা পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে গত বছর থেকে জোড় দেওয়া হচ্ছে 'ই-স্নান' -এর উপর।
এছাড়াও পৌষ সংক্রান্তি উপলক্ষে পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জায়গায় মেলা হয়। বীরভূমের কেন্দুলি গ্রামে এদিনটি জয়দেবের মেলা হয়। বাউল গান এই মেলার অন্যতম আকর্ষণ। এদিনই টুসু উৎসব বা মকর পরবে মেতে ওঠেন বাঁকুড়া, পুরুলিয়া ও সংলগ্ন এলাকার মানুষ। নাচে গানে মাতোয়ারা হয়ে ওঠেন তারা। টুসু বা মকর উপলক্ষ্যে এলাকায় একাধিক মেলাও বসে। যার অন্যতম পোরকুলের মেলা।
পৌষ পার্বণ উৎসব (Poush Parbon Utsav)
পশ্চিমবাংলায় এই বিশেষ দিনটিকে পৌষ সংক্রান্তি বা পৌষ পার্বণ নামে পরিচিত। গ্ৰাম বাংলার বিভিন্ন বাড়িতে আলপনা দেওয়া হয়। তাছাড়াও ঘরে ঘরে পিঠে- পুলি-পায়েস তৈরি করে নতুন মাসকে স্বাগত জানানো হয়। সপ্তাহ খানেক আগে থেকেই চলে তার প্রস্তুতি। এই পৌষ সংক্রান্তিতে মূলত চালের গুড়ো, ময়দা, নারকেল, দুধ, গুড় দিয়ে বিভিন্ন পিঠে তৈরি হয়। তার সঙ্গে তিল, কদমা এইসব খাওয়ার রীতিও রয়েছে।
দেশের বিভিন্ন স্থানে মকর সংক্রান্তি উৎসব (Makar Sankranti In India)
গ্ৰেগরিয়ান ক্যালেন্ডার অনুযায়ী হিন্দুদের প্রধান উৎসবগুলির মধ্যে মকর সংক্রান্তি বছরের সর্বপ্রথম উৎসব। এটি দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পালিত হয়। অঞ্চল ও জায়গা ভেদে মকর সংক্রান্তির নিয়মকানুন হয়তো আলাদা কিন্তু এর মাহাত্ম্য হিন্দুদের কাছে সব জায়গায় এক। ঘুড়ি ওড়ানোর জন্যে মানুষ এক জায়গায় একত্রিত হয় এই সময়।