পুরাণে যাজ্ঞিকা উপনিষদ এবং বেদ থেকে শ্রী শ্রী চণ্ডীর উপাখ্যান পাওয়া যায়। মহিষাসুর বধ ও দেবী দূর্গার বিজয় ব্যাখা নিয়েই তৈরি হয়েছে বেদস্বরূপ এই কাব্যগ্রন্থ। বৌদ্ধধর্ম, জৈনধর্ম, রামায়ণ, মহাভারতেও কাত্যায়নীর স্তুতির ইতিহাস দেখতে পাওয়া যায়। অনেকে শ্রী শ্রী চণ্ডীকে দুর্গা স্তোস্ত্রও বলে থাকে। সম্প্রতি নন্দীগ্রামে নির্বাচনী মঞ্চ থেকে মুখ্যমন্ত্রী মমতার গলায় চণ্ডীপাঠ সেই পুরাণ মাহাত্ম্যে এনেছে রাজনৈতিক তথা ধর্মীয় রঙ।
পুরাণমতে চণ্ডীপাঠের বিধি অত্যন্ত কঠিন। গীতাপাঠের মত সহজসাধ্য নয়। এতে শ্লোকের সংখ্যা মোট ৭০০টি। জেনে নেওয়া যাক চণ্ডীপাঠের গুরুত্ব ও তাৎপর্যগুলি ঠিক কী কী?
চণ্ডী পাঠের গুরুত্বের থেকেও এই মন্ত্রোচ্চারণকে হিন্দু ধর্মে অত্যন্ত পবিত্র ও শুদ্ধ বিচার করা হয়ে থাকে। বিশ্বাস করা হয় এই মন্ত্র জপ করলে জীবনের সমস্যা সাধন হয়ে থাকে। ভয় ও পাপ ধ্বংস, সঙ্কট, আসুরিক শক্তি জয় করে সৌভাগ্য ও কল্যাণ সাধন হয়। রামায়নে যেমন দেখা যায়, পরাক্রম রাবণের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার আগে অকালবোধনে দেবী দুর্গার বাসন্তী মূর্তিকে পুজো করেন রাম। বিজয়সূত্র লাভ করতে নবরাত্রির দিন চণ্ডীপাঠ করেছিলেন তিনি। কাশীদাসী রামায়ণেও এর উল্লেখ রয়েছে। ফলস্বরূপ লঙ্কাপতি রাবণকে বধ করে বিজয়ী হন রাম, এমনটাই বলা হয়েছে ধর্মগ্রন্থে।
পশ্চিমবঙ্গ-সহ অনেক রাজ্যে মহালয়ার দিন থেকে চণ্ডীপাঠ আরম্ভ হতে দেখা যায়। তবে, প্রায় সবস্থানেই দুর্গাপূজার আগের দিন ষষ্ঠী থেকে অথবা দুর্গাপূজার প্রথম দিন সপ্তমী থেকে আরম্ভ হয়। এবং, নবমী পর্যন্ত চণ্ডীপাঠ হয়ে থাকে।
মনে করা হয় এই স্তোস্ত্র দেহ ও মনকে পবিত্র করে তোলে। এই চণ্ডীতেই আছে দুর্গা কীভাবে মধুকৈটভকে মহিষাসুরের সেনাপতি চিক্ষুর ও চামর, ষাট হাজার রথারোহী সৈন্যসহ উদগ্র, এক কোটি রথারোহী সৈন্যসহ মহামনু, পাঁচ কোটি সৈন্যসহ অসিলোমা, ষাট লক্ষ সৈন্যসহ বহু সহস্র অশ্বারোহী, গজারোহী ও রথারোহীসহ বিড়ালাক্ষ এবং কয়েক কোটি অশ্ব, হস্তী ও রথারোহীসহ মহিষাসুরকে হত্যা করেন সেই কাহিনীও। এই গ্রন্থে একদিকে যেমন দেবীর কাছে প্রার্থনা করা হয়—‘রূপং দেহি জয়ং দেহি যশো দেহি দ্বিষো জহি’ বলে এবং সেইসঙ্গে নানা বিঘ্নশান্তির জন্যও প্রার্থনা করা হয়। দেবী মাহাত্ম্য শ্রীশ্রীচণ্ডীপাঠের এই হল বৈশিষ্ট্য। অর্গলা স্তোস্ত্র, কীলক স্তোস্ত্র, কবচ স্তোস্ত্র পাঠ করার পর দেবীসূক্ত পড়া হয়ে থাকে।