Shiv Shakti Rekha: সামনেই শ্রাবণের প্রথম সোমবার। শিবের মাথায় জল ঢালবেন মহাদেবের কোটি-কোটি ভক্তরা। ভারত তথা বিশ্বের তাবড় শিবমন্দিরে ভক্তদের ঢল নামবে। কিন্তু আপনি কি জানেন, ভারতের উত্তর থেকে দক্ষিণে, এই শিবমন্দিরকে কেন্দ্র করেই এক আশ্চর্য যোগসূত্র রয়েছে। উত্তরে কেদারনাথ থেকে দক্ষিণে রামেশ্বরম পর্যন্ত রয়েছে এক বিশেষ রেখা। এই রেখাকে বলা হয় ‘শিব শক্তি রেখা’।
বিষয়টি নিঃসন্দেহে বেশ রহস্যময়। কেন? কারণ এই রেখাতেই দেশের সাতটি গুরুত্বপূর্ণ শিব মন্দির অবস্থিত। শুধু ভৌগোলিক নয়, এই যোগের পেছনে রয়েছে গভীর আধ্যাত্মিক তাৎপর্যও।
কেদারনাথ থেকে রামেশ্বরম, সাত শিব মন্দির একই রেখায়
উত্তরাখণ্ডের কেদারনাথ থেকে শুরু। দক্ষিণ ভারতের রামেশ্বরমে গিয়ে শেষ। দুই জায়গার দূরত্ব প্রায় ২,৩৮২ কিলোমিটার। তবুও আশ্চর্যের বিষয়টি হল, এই দুই মন্দির প্রায় একই দ্রাঘিমা রেখায় (৭৯ ডিগ্রি) অবস্থিত। এত বছর আগের এমনটা কীভাবে সম্ভব হল? নাকি পুরোটাই কাকতালীয়? বিষয়টি যে ভীষণই রহস্যময়, তা বলাই বাহুল্য।
আরও আশ্চর্যের বিষয়টি হল, এই রেখার ওপরেই পর পর সাতটি গুরুত্বপূর্ণ শিব মন্দির রয়েছে। যাদের মধ্যে পাঁচটি ‘পঞ্চভূত মন্দির’ নামেও পরিচিত। এই পঞ্চভূত মন্দিরে সৃষ্টির পাঁচটি মূল উপাদানের মেলবন্ধন করেছেন মহাদেব। সেগুলি হল জল, বায়ু, অগ্নি, পৃথিবী এবং আকাশ। এই মন্দিরগুলিতে প্রতিটি উপাদানকেই আলাদা করে উপাসনা করা হয়।
কোন কোন মন্দির রয়েছে এই রেখায়?
১. কেদারনাথ মন্দির (উত্তরাখণ্ড)
রুদ্রপ্রয়াগ জেলার কেদারনাথ মন্দির ১২টি জ্যোতির্লিঙ্গের একটি। অর্ধজ্যোতির্লিঙ্গ হিসেবেও এটি পরিচিত। কেদারনাথ মন্দিরের অবস্থান ৭৯.০৬৬৯ ডিগ্রি দেশান্তরে।
২. কালাহস্তী মন্দির (আন্ধ্রপ্রদেশ)
চিত্তুর জেলার এই মন্দির ‘বায়ু লিঙ্গম্’ হিসাবে পূজিত। বলা হয়, এখানে সশরীরে শিবলিঙ্গ বিরাজমান। তিরুপতি থেকে মাত্র ৩০-৪০ কিলোমিটার দূরে এই মন্দির অবস্থিত।
৩. একাম্বেশ্বর মন্দির (কাঞ্চিপুরম, তামিলনাড়ু)
এখানে শিবের মূর্তি পৃথিবী তত্ত্বের প্রতীক। কांचीপুরমের এই মন্দির দক্ষিণ ভারতের অন্যতম প্রধান শিব মন্দির।
৪. অরুণাচলেশ্বর মন্দির (তিরুবন্নামালাই, তামিলনাড়ু)
এই মন্দিরে শিবের অগ্নি রূপে উপাসনা করা হয়। অরুণাচল পর্বতের পাদদেশে অবস্থিত এই মন্দিরের মাহাত্ম্য আলাদা।
৫. থিল্লাই নটরাজ মন্দির (চিদম্বরম, তামিলনাড়ু)
শিবের নৃত্যরূপ ‘নটরাজ’ হিসেবে পূজিত হন এখানে। প্রায় ২০০০ বছরের পুরনো এই মন্দিরে রয়েছে শিবের ১০৮টি নৃত্যভঙ্গিমার অনুপম ভাস্কর্য।
৬. জাম্বুকেেশ্বর মন্দির (তিরুচিরাপল্লি, তামিলনাড়ু)
জলতত্ত্বের প্রতীক এই মন্দির। প্রায় ১৮০০ বছরের পুরনো জাম্বুকেেশ্বর মন্দির তামিলনাড়ুর বিখ্যাত শিবক্ষেত্র।
৭. রামেশ্বরম মন্দির (তামিলনাড়ু)
দক্ষিণ ভারতের একমাত্র জ্যোতির্লিঙ্গ। এই মন্দিরের বিশেষত্ব হল— রামেশ্বরমে ভগবান রাম শিবলিঙ্গ স্থাপন করেছিলেন। এটি রামলিঙ্গম নামেও পরিচিত।
এই সাত মন্দির এক রেখায় কেন?
এই প্রশ্নের উত্তর আজও রহস্যে ঢাকা। তবে বহু বিশেষজ্ঞরা বলেন, এই রেখা ভারতবর্ষের আধ্যাত্মিক শক্তির কেন্দ্রবিন্দু। ‘শিব শক্তি রেখা’ তাই যুগ-যুগ ধরে বিজ্ঞানীদেরও চর্চার বিষয়।
ভারতের প্রাচীন স্থাপত্যবিদ্যা কি এতটাই নিখুঁত ছিল? নাকি এর পিছনে রয়েছে কোনও অলৌকিক শক্তি? রয়েছে হাজারো প্রশ্নে। তবে এই শিব শক্তি রেখার মাহাত্ম্য যে একেবারেই অস্বীকার করা যায় না, তা বলাই বাহুল্য।