হিন্দু পঞ্চাঙ্গ অনুসারে, রাখি পূর্ণিমা শ্রাবণ মাসের পূর্ণিমা তিথিতে পালন করা হয়ে থাকে। রাখি বন্ধন উৎসব হিন্দুদের কাছে খুবই পবিত্র এক উৎসব। দেশ ছাড়াও গোটা বিশ্বে ছড়িয়ে থাকা হিন্দুরা এই রাখি উৎসবে অংশ নিয়ে থাকেন। ভাই-বোনের মধ্যেকার এই উৎসব খুবই শুভ। ভাই-বোনের ভালোবাসার প্রতীক হিসাবে মানা হয়ে থাকে এই রাখি উৎসবকে। এইদিন বোন বা দিদিরা তাঁর ভাই বা দাদার হাতে রাখি বাঁধেন। এই বছর রাখি উৎসব পালন করা হবে ৩০ ও ৩১ অগাস্ট। এর পাশাপাশি রাখি পূর্ণিমা উৎসবে পূর্ণিমার যোগও তৈরি হতে চলেছে যার কারণে এই শুভ উৎসব আরও বিশেষ হবে। আসুন জেনে নিই যে রাখি উৎসবের শুভ মুহূর্ত, ভদ্রের সংযোগ ও শুভ যোগ কখন।
রাখি উৎসবের শুভ মুহূর্ত
শাস্ত্র মতে, রাখি উৎসব কখনই ভদ্র কালে পালন করা উচিত নয়। এটা খুবই অশুভ বলে মনে করা হয়। রাখি উৎসবের ওপর ভদ্রের ছায়া ৩০ অগাস্ট রাত ৯টা বেজে ২ মিনিট র্যন্ত থাকবে। এরপর রাখি বাঁধার জন্য উপযুক্ত সময় শুরু হবে। ৩১ অগাস্টে সকাল ৭টা বেজে ৫ মিনিটের আগে পর্যন্ত রাখি বাঁধা যাবে। এর অর্থ, রাখী বাঁধার জন্য ৩০ অগাস্ট রাত ৯টা ২মিনিটের পর থেকে শুভ সময় পাচ্ছেন অথবা ৩১ অগাস্ট সকাল ৭টা ৫ মিনিটের আগেই রাখি পরাতে হবে।
শ্রাবণ পূর্ণিমা তিথি শুরু-৩০ অগাস্ট সকাল ১০টা ৫৯ মিনিট থেকে
পূর্ণিমা তিথি শেষ-৩১ অগাস্ট সকাল ৭টা ৫ মিনিট পর্যন্ত
রাখি উৎসবের পুজোর থালা
রাখির পুজোর থালায় ধূপ, ঘি-এর প্রদীপ রাখুন। এছাড়াও থালায় রোলি ও চন্দনও রাখুন, এতে অক্ষত বা চাল রাখুন। তবে মনে রাখবেন তা যেন ভাঙা না হয়। ভাইয়ের জন্য রাখিও এতে রেখে দিন। এই থালায় ভাইয়ের প্রিয় মিষ্টি রাখুন। আপনার বাড়িতে যদি নাড়ু গোপাল থাকে তবে আগে রাখি পরান তাঁকে।
রাখি পূর্ণিমার পুজোর নিয়ম
রাখির দিন সকাল সকাল স্নান করে নিয়ে পরিষ্কার পোশাক পরে সূর্যদেবকে জল অর্পণ করুন। এরপর বাড়ির কাছে কোনও মন্দির থাকলে পুজো করে আসুন সেখানে। এরপর রূপো, পিতল, তামা বা স্টিলের কোনও পরিষ্কার থালায় সুন্দর কাপড় বিছিয়ে নিন। ওই থালায় একটি ছোট ঘটি, নারকেল, সুপারি, লাল ধাগা, রোলি, চন্দন, অক্ষত, দই ও মিঠাই রাখুন। সব জিনিস থালায় সাজানোর পর ঘিয়ের প্রদীপ জ্বালান। এই থালা প্রথমে ভগবানকে সমর্পিত করার পর প্রথম রাখি পরান কৃষ্ণ ও গণেশ ভগবানকে।
ভাইয়ের হাতে রাখি পরানোর নিয়ম
এরপর শুভ মুহূ্র্ত দেখে ভাইকে উত্তর বা পূর্ব দিকে মুখ করে বসান। এরপর ভাইকে তিলক পরিয়ে দিন। ভাইয়ের হাতে এরপর রাখি পরিয়ে দিন এবং তাঁর আরতি করুন, দীর্ঘায়ু কামনা করুন। ভাইকে মিষ্টি খাওয়ান। রাখি পরানোর সময় ভাই-বোন উভয়ই এটা মনে রাখবেন যে তাঁদের মাথা যেন কোনও কাপড় দিয়ে ঢাকা থাকে। রাখি বাঁধার পর মা-বাবা ও বাড়ির বড়দের আশীর্বাদ নিতে ভুলবেন না।
রাখির পৌরাণিক মাহাত্ম্য
ভাইয়ের দীর্ঘায়ু ও রক্ষার জন্য যেটা ধাগা বাঁধা হয় তা রক্ষাসূত্র হিসাবে পরিচিত। কথিত আছে যে, রাজসূর্য যজ্ঞের সময় ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে দ্রৌপদী রক্ষাসূত্র রূপে নিজের শাড়ির আঁচলের টুকরো বেঁধে দিয়েছিলেন। এরপরই বোনের দ্বারা ভাইয়ের হাতে রাখি পরানোর পরম্পরা শুরু হয়ে যায়।