Ratanti Kali Puja: রটন্তী কালীপুজোর ইতিহাস, তিথি, পুজোর পদ্ধতি কী? জানুন সবিস্তারে

রটন্তী কালী পুজো হিন্দু ধর্মে একটি বিশেষ উৎসব। এদিন কৃষ্ণ ও কালীর একসঙ্গে পুজো করা হয়। এই পুজোর পেছনে রয়েছে একটি ঐতিহাসিক ও পৌরাণিক প্রেক্ষাপট।

Advertisement
রটন্তী কালীপুজোর ইতিহাস, তিথি, পুজোর পদ্ধতি কী? জানুন সবিস্তারেরটন্তী কালীপুজোর ইতিহাস

রটন্তী কালী পুজো হিন্দু ধর্মে একটি বিশেষ উৎসব। এদিন কৃষ্ণ ও কালীর একসঙ্গে পুজো করা হয়। এই পুজোর পেছনে রয়েছে একটি ঐতিহাসিক ও পৌরাণিক প্রেক্ষাপট। 'রটন্তী' শব্দের অর্থ হল প্রচারিত বা শোনা গিয়েছে এমন কিছু। জনশ্রুতি অনুযায়ী, এই পুজোর সূচনা হয়েছিল এক বিশেষ ঘটনার মধ্য দিয়ে, যা ধীরে ধীরে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।

রটন্তী কালী পুজোর সময়

২৭ জানুয়ারি, রাত্রি ৭ টা ৪৪ থেকে ২৮ জানুয়ারি রাত্রি ৭টা ৩১ পর্যন্ত চতুর্দশী তিথি থাকবে।

উৎপত্তি 

মাঘের কৃষ্ণ পক্ষের চতুর্দশীতে রটন্তী কালীপুজো হয়। কথিত, একবার শ্রীরাধা তাঁর স্বামীকে লুকিয়ে মাঘের কৃষ্ণ পক্ষের চতুর্দশীর রাতে শ্রীকৃষ্ণের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন। এদিকে তাঁর দুই ননদিনী জটিলা-কুটিলা বিষয়টি বুঝে ফেলেন। এরপর তাঁরা তাঁদের দাদাকে সেটা জানান। এই কথা শুনে একেবারেই বিশ্বাস করেননি রাধার স্বামী। তিনি তখন স্বচক্ষে দেখার জন্য বের হন। গিয়ে দেখেন দেবী কালীর পদতলে সেবা করছেন শ্রীরাধিকা। এই দেখে তিনি আবেগে আপ্লুত হয়ে ওঠেন। এই ঘটনার দ্বারা কৃষ্ণ বুঝিয়ে দিয়েছিলেন কৃষ্ণ আর কালিতে কোনও ভেদ নেই। কৃষ্ণ ও কালীর যোগসূত্র স্থাপন করে দেয় এই ঘটনা। আর তারপর থেকেই এই দিনে একত্রে কৃষ্ণ ও কালীর পুজো করা হয়।   

কৃষ্ণ পক্ষের অমাবস্যা বা চতুর্দশীতে যখন প্রকৃতি শান্ত-শীতল স্নিগ্ধতায় আবৃত, তখনই দেবী কালীর আহ্বান করা হয়। শোনা যায়, এই পুজো প্রথমে বাংলার গ্রামাঞ্চলে শুরু হয়। উল্লেখ্য, এটাই একমাত্র কালীপুজো যা অমাবস্যা তিথিতে হয় না। 

রামকৃষ্ণ পরমহংস দেব
৯০ শতাংশ লোক জানে না, দক্ষিণেশ্বরের মা কালীর মূর্তি কে গড়েছিলেন?

কথিত আছে, রামকৃষ্ণ পরমহংস বলেছিলেন, রটন্তীকালীপুজোর দিন দক্ষিণেশ্বরের গঙ্গায় স্বর্গ থেকে দেবতাদের স্নান করতে নেমে আসতে দেখেছেন। তাই আজও বহু মানুষ দক্ষিণেশ্বরের গঙ্গার ঘাটে রটন্তীর ভোরে পুণ্যস্নান করেন। 

আবার, কথিত যে, এই বিশেষ দিনেই দেবীর মহিমা চতুর্দিকে রটে যায়। মুক্তকেশী মায়ের মহিমা এই তিথিতেই সর্বস্তরে রটিত হয়ে থাকে। আবার লোক কথা অনুসারে শোনা যায়, এদিনই দেবী ছিন্নমস্তার আবির্ভাব হয়েছিল। দেবী পার্বতী তার সহচরীদের ক্ষিদে মেটানোর জন্যে নিজ মুণ্ডুচ্ছেদ করে ত্রিধারায় রক্তবারি প্রকট করেছিলেন।

Advertisement

ইতিহাস এবং সামাজিক গুরুত্ব

বাংলার প্রাচীন জমিদার বাড়ি ও মঠ-মন্দিরগুলোতে রটন্তী কালী পুজোর বিশেষ প্রচলন ছিল। জমিদাররা ধন-সম্পদ এবং প্রভাব বাড়ানোর জন্য এই পুজোতে অংশ নিতেন। তাঁরা বিশ্বাস করতেন যে, এই পুজো করলে দেবীর আশীর্বাদে তাঁদের ক্ষমতা ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখবে। সেই সঙ্গে দাম্পত্য জীবনও সুখের হবে।

সময়ের সঙ্গে সঙ্গে রটন্তী কালী পুজো শহর এবং গ্রামাঞ্চলে সমানভাবে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। এটি কেবল দেবী কালী ও কৃষ্ণের আরাধনা করার উৎসব নয়, বরং সামাজিক মেলবন্ধনের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিকও হয়ে দাঁড়ায়। এই দিন দক্ষিণেশ্বরেও কৃষ্ণ ও কালীর পুজো করা হয়।

রীতি

রটন্তী কালী পুজোর দিন ভক্তরা উপোস করে দেবীর আরাধনা করেন। মাটির প্রদীপ, ধূপ, বাতি এবং নৈবেদ্য দিয়ে পুজোর আয়োজন করা হয়। ভোগ হিসেবে মূলত নারকেল, লাল চাল, খিচুড়ি, ফল এবং মিষ্টি নিবেদন করা হয়। কিছু স্থানে পশু বলির প্রথাও ছিল, যদিও বর্তমানে অনেক জায়গায় তা বন্ধ হয়েছে।

POST A COMMENT
Advertisement