
রত্নাবলী মায়ের মন্দির
৫১ সতীপীঠের (Sati Pith) অন্যতম হুগলির খানাকুলের রত্নাবলী কালীমন্দির (Ratnabali Temple)। পৌরাণিক কাহিনী অনুসারে এখানে মায়ের দক্ষিণ স্কন্ধ বা ডান কাঁধ পড়েছিল। রত্নাকর নদীর নামানুসারে মায়ের নাম রত্নাবলী। ঘণ্টেশ্বর মন্দির (Ghanteshwar Temple) এবং সংলগ্ন এই সতীপীঠ ভক্তদের কাছে বরাবরই প্রিয়। বাবা ঘণ্টেশ্বর ও মা রত্নবলীর টানে সারাবছরই কমবেশি ভক্ত সমাগম হয় মন্দিরে। যদিও করোনা পরিস্থিতে এবারের কালীপুজোয় ভক্তদের জমায়েত খুব একটা বেশি হবে না বলেই মনে করছেন মন্দিরের পুরোহিত শিশির বটব্যাল।
মন্দিরের ইতিহাস নিয়ে ঘাঁটলে জানা যায়, আগে এখানে বাবা ঘণ্টেশ্বর প্রতিষ্ঠিত হন, পরে আসেন মা রত্নাবলী। এপ্রসঙ্গে মন্দিরের পুরোহিত শিশির বটব্যাল জানাচ্ছেন, "অনেককাল আগে খানাকুলের পার্শ্ববর্তী গ্রামের বাসিন্দা বটুক কারকের একটি গরু এই অঞ্চলে একটি শিমূল গাছের পাশে এসে দুধ দিত। কিন্তু কোনওভাবেই বাড়িতে দুধ দিত না গরুটি। রোজ রোজ এই ঘটনা ঘটতে দেখে মনে প্রশ্ন জাগে বটুকবাবুর। একদিন তিনি শিমূল গাছের পাশে ওই নির্দিষ্ট জায়গাটি চিহ্নিত করে সেখানে খনন কার্য শুরু করেন। কিছুটা খোঁড়ার পরেই দেখা মেলে ভগবান শিবের, বা বলা ভাল বাবা ঘণ্টেশ্বররের। এরপর ওই এলাকায় আসেন বর্ধমানের জমিদার বংশের সন্তান স্বরূপ নারায়ণ ব্রহ্মচারী। তিনি ধ্যানে বসে জানতে পারেন ওই অঞ্চলের পাশেই পড়েছে সতীর দক্ষিণ স্কন্ধ বা ডান কাঁধ। একদিন গভীর রাতে শিমূল গাছের পাশে যেখান থেকে বাবাকে পাওয়া গিয়েছিল সেই একই জায়গা থেকে একটি স্ফুলিঙ্গকে সংলগ্ন একটি জায়গায় পড়তে দেখেন স্বরূপ নারায়ণ। এরপর সেই স্থানে গিয়ে একটি প্রস্তর খণ্ড পান স্বরূপ নারায়ণ ব্রহ্মচারী। সেখানেই ধ্যানে বসেন তিনি। এরপর মায়ের আদেশে তিনি মূর্তি গড়ে সাধান শুরু করেন। এমনকি মায়ের আদেশেই শবদেবের ওপর আসন বানিয়ে ধ্যানে বসেন স্বরূপ নায়ারণ এবং সেখানেই দেহ রাখেন। তবে সেই প্রস্তর খণ্ডটি তিনি কোথায় রেখে গিয়েছেন তা আজও জানা যায়নি। স্বরূপ নারায়ণের নির্দেশ মতো আজও মায়ের পুজোয় প্রথম সংকল্প হয় তাঁর নামেই।" মন্দিরের পুরোহিত আরও জানাচ্ছেন,"প্রথম দিকে তালপাতা এবং মাটির ঘরেই থাকতেন বাবা ঘণ্টেশ্বর ও মা রত্নাবলী। পরবর্তী কালে গ্রামবাসীরা এই জমি দান করেন এংব মন্দির নির্মাণ করেন।" মন্দিরের বয়স প্রায় ৭০০ বছর বলেই জানাচ্ছেন তিনি।

শিশির বটব্যালের কথায়,"নিত্যসেবা ও বিশেষ বিশেষ তিথিতে উৎসব অনুষ্ঠান হলেও মায়ের প্রধান আরাধনা হয় কার্তিক মাসের কালীপুজো এবং মাঘ মাসের রটন্তি কালীপুজোতে। সন্ধ্যায় আগে মায়ের আরতি হয় এবং শেষে বাবার আরতি হয়।" তিনি জানাচ্ছেন "এখনও গাজনে মূল সন্ন্যাসী হন বটুক কারকের পরিবারের সদস্যরা।"
কার্তিক মাসের কালীপুজো এবং মাঘ মাসের রটন্তি কালীপুজো তো বটেই, এছাড়াও দীপান্বিতা অমাবস্যা বা অন্যান্য বিশেষ তিথিতেও ভালোই ভক্ত সমাগম হয় মন্দিরে। তবে শিশিরবাবু জানাচ্ছেন, "করোনার কারণে এই কালীপুজোয় হয়ত ভক্তদের খুব বেশি জমায়েত হবে না। আর যাঁরা আসবেন তাঁদেরকেও ব্যবহার করতে হবে মাস্ক এবং স্যানিটাইজার, মানতে হবে দূরত্ব বিধি।" এছাড়া ভোগ বিতরণও দূরত্ব বিধি মেনেই বলে জানাচ্ছেন তিনি।