শিব হলেন হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সর্বোচ্চ দেবতা। সনাতন ধর্মের শাস্ত্রসমূহে তিনি পরমসত্ত্বা রূপে ঘোষিত। শিব সৃষ্টি-স্থিতি-প্রলয়রূপ তিন কারণের কারণ। তিনি সমসাময়িক হিন্দু ধর্মের তিনটি সর্বাধিক প্রাচীন সম্প্রদায়ের অন্যতম শৈব সম্প্রদায়ের প্রধান দেবতা। এছাড়া শিব স্মার্ত সম্প্রদায়ে পূজিত ঈশ্বরের পাঁচটি প্রধান রূপের (গণেশ, শিব, সূর্য, বিষ্ণু ও দুর্গা) একটি রূপ। তার বিশেষ রুদ্ররূপ ধ্বংস, সংহার ও প্রলয়ের দেবতা। সর্বোচ্চ স্তরে শিবকে অপরিবর্তনশীল পরম ব্রহ্ম মনে করা হয়।
সোমবার, দেবাদিদেব মহাদেবের দিন। প্রতি সোমবার মন্ত্রোচ্চারণ করুন মহাদেবের। এতে অশান্ত পরিস্থিতি থেকে কিছুটা শান্তি মিলবে। মনের শান্তির পাশাপাশি, সমস্ত বিপদ থেকে মুক্ত হবেন। শিব মন্দিরগুলিতেও সোমবার বিশেষ পুজোর আয়োজন হয়। বহু ভক্ত এদিন উপবাসে করে শিবের মাথায় জল ঢেলে, পায়ে ফুল- বেলপাতা দেন। বহু বাড়িতে সোমবার নিরামিষ খাওয়ার চলও আছে।
বিশ্বাস অনুযায়ী, প্রতি সোমবার ভক্তি মনে মহাদেবের পায়ে ফুল, বেলপাতা অর্পণ করে আরতি করলে বিপদ-আপদ আসে না পরিবারে৷ শিবের পুজোর সময় কিছু মন্ত্রোচ্চার করলে দ্বিগুণ ফল মেলে৷ শিব পুজোর সময় পাঠ করতে পারেন - শিব গায়ত্রী মন্ত্র,পঞ্চকেশরী শিব মন্ত্র, রুদ্র মন্ত্র, ধ্যান মন্ত্র, একাদশা রুদ্র মন্ত্র। তবে সব মন্ত্রের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, মহামৃত্যুঞ্জয় মন্ত্র।
মহাদেবের মহামৃত্যুঞ্জয় মন্ত্র
ওঁ ত্রম্বকং য্জামহে সুগন্ধিং পুষ্টিবর্ধনম্ ।
উর্বারূপমিব বন্ধনান মৃতৌমোক্ষীয় মামৃতাত !!
মৃত্যুকে জয় করার মন্ত্র হল মৃত্যুঞ্জয় মন্ত্র। পুরাণের কাহিনি অনুযায়ী, একবার যমরাজ, মৃকান্দা ঋষির মাত্র ১২ বছর বয়সী পুত্রকে নিয়ে যেতে এসেছিলেন। কিন্তু তখন সেই বালক মৃত্যুঞ্জয় মন্ত্র জপ করে। তখন যমরাজ এই মন্ত্র উপেক্ষা করে ঋষি পুত্রকে নিয়ে যেতে পারেননি। কারণ তিনি জানতেন, নয়তো তাকে মহাকালের রোষানলে পড়তে হবে। বালক মার্কণ্ড নিজের প্রাণের ভয়ে মৃত্যুঞ্জয় মন্ত্রের রচনা করেছিলেন। এরপর মহাকালের আশির্বাদে সে নতুন জীবন পায়। আর এইভাবেই শুরু হয় মৃত্যুঞ্জয় মন্ত্র।
মহামৃত্যুঞ্জয় মন্ত্র পাঠের নিয়ম কী কী?
শাস্ত্র মতে, সোমবার এই মন্ত্র জপ করলে, মহাদেব সন্তুষ্ট হন এবং পরিবারে জরা ব্যাধি থাকে না। এই মন্ত্র ১০৮ বার পাঠ করতে হয়। বেলপাতা, ধুতুরা, আকন্দ, অপরাজিতা, কলকে- শিবের প্রিয় বলে জানা যায়। এর মধ্যে অনন্ত একটি ফুল শিবকে উৎসর্গ করুন। তবে মহাদেব বেলপাতাতেই সবচেয়ে বেশি তুষ্ট হন। তবে শুধুমাত্র নিষ্ঠা করে পুজো করলেই সন্তুষ্ট হন ভোলেনাথ।