scorecardresearch
 

ভূতের সঙ্গে চতুর্দশী, ১৪ শাক, ১৪ প্রদীপ এবং ১৪ পুরুষ, এর কাহিনি জানেন?

পূর্ব ভারতে এর নাম ভূত চতুর্দশী হলেও, দেশের বিভিন্ন প্রান্তে একে নরক চতুর্দশীও বলা হয়ে থাকে। দক্ষিণ ভারতে বিশেষ করে গোয়া, তামিলনাড়ু এবং কর্ণাটকে যখন নরক চতুর্দশী সাড়ম্বরে পালিত হয় বাংলায় তখন ভূত চতুর্দশী পালন হয়। পূরাণ অনুযায়ী মনে করা হয়, এই দিন স্বর্গ ও নরকের দ্বার কিছু ক্ষণের জন্য উন্মোচিত হয়। একই সঙ্গে বিদেহী আত্মা এবং স্বর্গত ব্যক্তিরা নেমে আসেন পৃথিবীতে।

Advertisement
ভূত চতুর্দশী ভূত চতুর্দশী
হাইলাইটস
  • ভূত মানে প্রাক্তন বা পূর্ব বোঝায়।
  • অর্থাৎ যা অতীতে ছিল, বর্তমানে নেই।
  • এ ক্ষেত্রে ভূত বলতে পূর্ব পুরুষদের কথা বোঝানো হয়।
  • একই সঙ্গে ১৪ শাক এবং ১৪ প্রদীপেরও মাহাত্ম্য রয়েছে এই রীতির সঙ্গে।

ভূত বলতেই সাধারণত সকলের মনে ভয় উদ্রেককারী কোনও অজানা অশরীরির কথাই আগে মাথায় আসে। বাংলায় ভূত চতুর্দশীর সঙ্গে কিন্তু এর সম্পর্ক নেই। তবে অন্য দিক থেকে দেখতে গেলে সম্পর্ক রয়েছেও। ভূত মানে প্রাক্তন বা পূর্ব বোঝায়। অর্থাৎ যা অতীতে ছিল, বর্তমানে নেই। এ ক্ষেত্রে ভূত বলতে পূর্ব পুরুষদের কথা বোঝানো হয়। একই সঙ্গে ১৪ শাক এবং ১৪ প্রদীপেরও মাহাত্ম্য রয়েছে এই রীতির সঙ্গে।

পূর্ব ভারতে এর নাম ভূত চতুর্দশী হলেও, দেশের বিভিন্ন প্রান্তে একে নরক চতুর্দশীও বলা হয়ে থাকে। দক্ষিণ ভারতে বিশেষ করে গোয়া, তামিলনাড়ু এবং কর্ণাটকে যখন নরক চতুর্দশী সাড়ম্বরে পালিত হয় বাংলায় তখন ভূত চতুর্দশী পালন হয়। পূরাণ অনুযায়ী মনে করা হয়, এই দিন স্বর্গ ও নরকের দ্বার কিছু ক্ষণের জন্য উন্মোচিত হয়। একই সঙ্গে বিদেহী আত্মা এবং স্বর্গত ব্যক্তিরা নেমে আসেন পৃথিবীতে। প্রদীপের চিহ্ন দেখে নিজেদের উত্তর পুরুষের ভিটেয় পৌঁছে যান। তাঁদের আশীর্বাদ করেন। একই সঙ্গে ভূত-প্রেত ও সাঙ্গপাঙ্গ নিয়ে মর্ত্যে আসেন রাজা বলি।

এই ঘটনার সঙ্গে বিষ্ণু পুরাণের যোগ রয়েছে। বলি রাজা স্বর্গ, মর্ত্য ও পাতালের অধীশ্বর ছিলেন। দেবরাজ ইন্দ্রও তাঁর সঙ্গে যুদ্ধে পরাজিত হয়েছেন। শিবভক্ত, দানশীল মহারাজ চক্রবর্তী বলি বিষ্ণুর আরাধনা করতেন না। দেবতারা শিবভক্ত বলির পরাক্রমে অস্থির হয়ে বিষ্ণুর শরণাপন্ন হলেন। বিষ্ণু বামন অবতার রূপে বলির কাছে তিন পাদ জমি চাইলেন। সব জেনেবুঝেও বলি তা দিতে সম্মত হলেন।

বিষ্ণু দুটি পায়ের একটি মর্ত্যে, একটি স্বর্গে রাখলেন। আর আরেকটি পা তাঁর নাভি থেকে বেরিয়ে এল। সেটি তিনি রাখলেন বলির মাথায়। তার পর দৈত্যরাজ বলির পাতাল প্রবেশ ঘটে। মহাবলি মৃত্যুহীন প্রাণ। তিনি সপ্ত চিরজীবীর অন্যতম। বাকি ছয় জন হলেন ব্যাসদেব, অশ্বত্থামা, কৃপাচার্য, পরশুরাম, হনুমান ও বিভীষণ। এমন ছলনার পর বলিকে কিছুটা করুণা দেখিয়ে বিষ্ণু বলেন, প্রতি বছর রাক্ষস রাজ ও তার সাক্ষপাঙ্গের পুজো হবে পৃথিবীতে। আর সেই পুজোর তিথিই হল ভূত চতুর্দশী।

Advertisement

এইদিন বাঙালিরা চোদ্দরকম শাকের (ওল, কেও, বেতো কালকাসুন্দা, নিম, সরিষা  শালিঞ্চা বা শাঞ্চে, জয়ন্তী, গুলঞ্চ, পটুক পত্র বা পলতা, ভন্টাকি(ঘেঁটু) বা ভাঁট , হিলমোচিকা বা হিঞ্চে ,সুনিষন্নক বা শুষুনী বা শুষনি, শেলু বা শুলকা) মিলিত একটি পদ খেয়ে থাকে, যা চোদ্দ শাক নামে পরিচিত। তবে আয়ুর্বেদ মতে প্রাচীন বাংলায় চোদ্দো শাকগুলি ছিল - পালং শাক, লাল শাক, সুষণি শাক, পাট শাক, ধনে শাক, পুঁই শাক, কুমড়ো শাক, গিমে শাক, মূলো শাক, কলমি শাক, সরষে শাক, নোটে শাক, মেথি শাক, লাউ শাক অথবা হিঞ্চে শাক। আযুর্বেদ বলছে, এই ১৪টি শাকে নানা রোগ নাশক শক্তি থাকে। ঋতু পরিবর্তনের সময় যা আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়।

এ তো গেল পুরাণের কথা। লোকাচার বলে, কালীপূজার আগের দিন চৌদ্দ শাক খেতে হয়। সন্ধ্যায় জ্বালতে হয় চৌদ্দ প্রদীপ। রাতে বিদেহী আত্মারা নেমে আসেন মর্ত্যলোকে। পশ্চিমের ‘হ্যালোউইন’ প্রথার সঙ্গে অনেকাংশেই মেলে এই আচার।

চতুর্দশী তিথির ভরা অমাবস্যায় চারিদিক নিশ্ছিদ্র অন্ধকার। সেই ঘন অন্ধকারের আমেজে বাড়ির চারপাশে প্রদীপ জ্বাললে মন্দ কী? বলি রাজার অনুচররা যাতে যত্রতত্র ঢুকে না পড়েন, তার ব্যবস্থাও হয়ে যায় তাতে। ‘হ্যালোউইনে’ও বাড়ির চারপাশে টাঙানো হয় বিচিত্র সব লন্ঠন, অধিকাংশই কুমড়ো কেটে তৈরি!

 

Advertisement