scorecardresearch
 

The Fever God Jorasur: যে কোনও জ্বর নাকি সারিয়ে দেন এই দেবতা, কোথায়-কারা পুজো করেন?

বাংলার বিভিন্ন প্রান্তে বিভিন্ন জনজাতির বাস। ফলে বাংলার লোকায়েত দর্শনে নানান দেবদেবীর কথা জানা যায়। প্রাকৃতিক প্রতিকূলতা থেকে রক্ষা পেতে, রোগ বালাই থেকে রক্ষা পেতে, বিপদ সংকট থেকে রেহাই পেতে মানুষ নানান দেবতার পুজো করতে শুরু করে, সেই সব দেবতারাই হয়ে উঠেছেন বাংলার লৌকিক দেবতা।

Advertisement
ফাইল ছবি। ফাইল ছবি।
হাইলাইটস
  • বাংলার বিভিন্ন প্রান্তে বিভিন্ন জনজাতির বাস।
  • ফলে বাংলার লোকায়েত দর্শনে নানান দেবদেবীর কথা জানা যায়।
  • প্রাকৃতিক প্রতিকূলতা থেকে রক্ষা পেতে, রোগ বালাই থেকে রক্ষা পেতে, বিপদ সংকট থেকে রেহাই পেতে মানুষ নানান দেবতার পুজো করতে শুরু করে, সেই সব দেবতারাই হয়ে উঠেছেন বাংলার লৌকিক দেবতা।

বাংলার বিভিন্ন প্রান্তে বিভিন্ন জনজাতির বাস। ফলে বাংলার লোকায়েত দর্শনে নানান দেবদেবীর কথা জানা যায়। প্রাকৃতিক প্রতিকূলতা থেকে রক্ষা পেতে, রোগ বালাই থেকে রক্ষা পেতে, বিপদ সংকট থেকে রেহাই পেতে মানুষ নানান দেবতার পুজো করতে শুরু করে, সেই সব দেবতারাই হয়ে উঠেছেন বাংলার লৌকিক দেবতা।

তেমনই অজানা জ্বর, ডেঙ্গি, ম্যালেরিয়া ইত্যাদির প্রকোপ বাড়লে, জ্বরাসুরের পুজো করে পল্লী বাংলা। বিভিন্ন গ্রন্থ জানাচ্ছে, জ্বর-দেবতার তিন পা, তিন মাথা, ছয় বাহু ও নয়টি চোখ। কেশ স্বর্ণাভ, নখস্পর্শ বজ্রাধিক। পুজোর আলাদা মন্ত্র ছিল, ‘কৃশপিঙ্গললোমক্ষং কৃষ্ণাঞ্জনচয়োপমম্/প্রলয়াম্বুদনির্ঘোষং সর্বভূতভয়াপহম্।’ এখন যেমন পেট খারাপ হলে অর্থোপেডিক দেখবেন না, জ্বরজ্বারি নিয়ে গেলে হৃদ্‌রোগবিশেষজ্ঞ ভাগিয়ে দেবেন, দেবতারাও অনেকটা সে রকম।

জ্বর হলে জ্বরাসুর, বসন্ত হলে শীতলা, কলেরা হলে ওলাবিবি আর খোস-পাঁচড়া হলে পাঁচু ঠাকুরের থানে যেতে হবে। নামেই মালুম, ওলাবিবি মুসলমান। তাঁর আর এক নাম ওলাইচণ্ডী, তিনি মা শীতলার বোন। অসুস্থতার এই দেবীদের আইডেন্টিটি এতটাই নমনীয় যে হিন্দু ওলাইচণ্ডী ও মুসলমান ওলাবিবিতে ফারাক নেই। বিভিন্ন বইয়ে দাবি, লব, কুশকে বাঁচাতে  স্বয়ং সীতাকেও জ্বরাসুরের পুজো করতে হয়েছিল। 

আরও পড়ুন

জ্বরাসুর কে? 
জ্বর নাশের বিচিত্র দেবতা হলেন জ্বরাসুর। গায়ের রঙ ঘন নীল। তিনটি মাথা, নয়টি চোখ, ছয়টি হাত ও তিনটি পা নিয়ে জ্বরাসুর বিরাজ করেন। অসংখ্য থানে শীতলা, মনসা, দক্ষিণ রায়, আটেশ্বর প্রভৃতি লৌকিক দেবদেবীর সঙ্গে জ্বরাসুর পুজো পান। জ্বরাসুরের মূর্তি পূজার প্রচলন খুব বেশি এবং শীতলার থানে বা মন্দিরে জ্বরাসুর নিত্যপুজো পান। পাল যুগ থেকে বাংলায় শীতলা মূর্তির সঙ্গী হতে শুরু করে জ্বরাসুর। হিন্দু পুরাণ মতে, জ্বরাসুর হলেন জ্বর-দেবতা এবং শীতলা দেবী হলেন তার স্ত্রী।

Advertisement

উত্তর ভারত এবং পূর্ব ভারতের বসন্ত এবং জ্বর রোগের রক্ষাকর্তা‌ হিসেবে যথাক্রমে শীতলা ও জ্বরাসুর পুজিত হন। 
মনে করা হয়, শিবের ধ্যান করার সময় কপালের ঘাম থেকে জ্বরাসুর জন্মগ্রহণ করেছিলেন। দেবতাদের জন্য জ্বরাসুর ছিলেন ত্রাসের কারণ। একবার বিষ্ণু জ্বরাসুরের জ্ব‌রে পড়েন। তিনিই জ্বরাসুরকে হত্যা করেছিলেন। তিনি সুদর্শন চক্র ব্যবহার করে জ্বরাসুরকে তিন টুকরো করেছিলেন।

বাংলার বৌদ্ধ মন্ত্রযান, বজ্রযান ঐতিহ্যে জ্ব‌রাসুর রয়েছে। বৌদ্ধ সংস্কৃতিতে, জ্ব‌রাসুর কখনও কখনও রোগের বৌদ্ধ দেবী পর্ণশর্বরীর স্বামী হিসাবে বিবেচিত হন। কিছু ছবিতে এই দেবতাগুলি বৌদ্ধ দেবী এবং রোগের ধ্বংসকারী বজ্রযোগিনীর, রাগ থেকে পালাতে দূরে উড়ে যাচ্ছে দেখানো বলে। প্রাচীন তন্ত্রপুঁথিতেও জ্বরাসুরের উল্লেখ রয়েছে। সে কথা মনে করিয়ে দিয়ে গিয়েছেন সাহিত্যিক তারাদাস বন্দ্যোপাধ্যায়। 'তারানাথ তান্ত্রিক' বইয়ের এক আখ্যানে তিনি জ্বরাসুরের পুজোর কথা বিস্তারিত লিখেছিলেন।

অষ্টাদশ শতকে মানিকরাম গঙ্গোপাধ্যায়ের লেখা 'শীতলামঙ্গল' কাব্যে জ্বরাসুরের বিস্তারিত বর্ণনা পাওয়া যায়। মানিকরামের 'ধর্মমঙ্গল' বিখ্যাত, কিন্তু শীতলা, জ্বরাসুরদের নিয়েও তিনি মঙ্গলকাব্য লিখে গিয়েছেন।

Disclaimer: 'বাংলা ডট আজতক ডট ইন' কোনওরকম কুসংস্কারকে প্রশ্রয় দেয় না। এই প্রতিবেদনে দেওয়া তথ্য সাধারণ বিশ্বাস এবং তথ্যের উপর ভিত্তি করে। আজতক বাংলা এটি নিশ্চিত করে না। 
 

 

TAGS:
Advertisement