
অষ্টম বেতন কমিশনের আর্থিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত হবেন ৬৯ লক্ষ পেনশনভোগী? জোরদার বিতর্ক চলছে এই নিয়ে। রয়েছে নানা প্রশ্ন, বিভ্রান্তি। আসল বিষয়টি ঠিক কী?

কেন্দ্রকে ইতিমধ্যেই প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের কর্মচারী সংগঠনের তরফে চিঠি পাঠানো হয়েছে। কর্মচারীদের বেতন সংক্রান্ত দাবি-দাওয়া নিয়ে ইতিমধ্যেই ‘ন্যাশনাল কাউন্সিল অফ জয়েন্ট কনসালটিভ মেশিনারি’ বা NC-JCM স্থায়ী কমিটি সদস্যদের সঙ্গে একপ্রস্ত বৈঠকও সেরেছেন সচিব শিবগোপাল মিশ্র।

প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের কর্মচারী সংগঠন ‘অল ইন্ডিয়া ডিফেন্স এমপ্লোয়িজ় ফেডারেশন’ বা AIDEF-এর অভিযোগ, বৈঠকের আলোচ্য সূচিতে পেনশনের আর্থিক সুযোগ-সুবিধার দিকটিকে রাখা হয়নি।

নির্মলা সীতারামনকেও একটি চিঠি পাঠিয়েছে AIDEF। সংগঠনটির বক্তব্য, অষ্টম বেতন কমিশনের বিজ্ঞপ্তিতে কোথাও ৬৯ লক্ষ পেনশনভোগীর কথা উল্লেখ করা হয়নি। সেই ‘ভুল’ সংশোধন করে নতুন নির্দেশিকা জারির দাবি তুলেছে তারা।

এছাড়াও বর্তমানে অবসরপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় কর্মচারীদের জন্য চালু রয়েছে পারিবারিক পেনশন ব্যবস্থা। এআইডিইএফের অভিযোগ, ৩ নভেম্বরের বিজ্ঞপ্তিতে সেই বিষয়ের কোনও উল্লেখ নেই। আরও একটি ত্রুটির কথা বলেছে ওই সংগঠন। অতীতে সপ্তম বেতন কমিশন সুপারিশের তারিখ স্পষ্ট ভাবে উল্লেখ করেছিল সরকার। সেটি ছিল ১ জানুয়ারি, ২০১৬। কিন্তু, অষ্টম বেতন কমিশন সুপারিশের দিনক্ষণ জানায়নি কেন্দ্র।

আগামী বছরের ১ জানুয়ারি থেকে অষ্টম বেতন কমিশন চালু করার পরিকল্পনা রয়েছে মোদী সরকারের। তার আগে চূড়ান্ত সুপারিশের প্রক্রিয়া হবে। ফলে আগামী দিনে পেনশনভোগীদের এই সুবিধা থেকে বাদ পড়ার আশঙ্কা কম।

১৩০টি বিভাগের প্রায় ৮ লক্ষ কর্মচারীর প্রতিনিধিত্বকারী কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারী ও শ্রমিক ফেডারেশন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে চিঠি লিখেছে। এতে, ToR-এ পরিবর্তন এনে পেনশন সংশোধন এবং অন্যান্য দাবি অন্তর্ভুক্ত করার আবেদন করা হয়েছে।

সব বিষয়ে খোলসা করার জন্য প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ জানানো হয়েছে। টার্মস অফ রেফারেন্স (ToR) পরিবর্তনের জন্য ক্রমাগত দাবি করা হচ্ছে।

কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারীরা অষ্টম বেতন কমিশনের অধীনে পেনশন ও পেনশন-সম্পর্কিত সুবিধাগুলির সংশোধন ও পুরনো পেনশন প্রকল্প (OPS) পুনরুদ্ধারের দাবি রেখেছে। কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারী ও শ্রমিকদের কনফেডারেশন প্রশ্ন তুলেছে,ToR-এ অষ্টম বেতন কমিশন বাস্তবায়নের সময়সীমা কেন উল্লেখ করা হয়নি। তাদের যুক্তি, আগের বেতন কমিশনের সুপারিশগুলি ১০ বছরের ব্যবধানে বাস্তবায়িত হয়েছিল।

পেনশনভোগীরা প্রযুক্তিগতভাবে ToR-এর বাইরে নন, কিন্তু স্পষ্টভাবে উল্লেখ না থাকার কারণে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছে। ফলে কর্মী ও পেনশনভোগীদের মধ্যে যেকোনও বিভ্রান্তি দূর করার জন্য শ্রমিক ইউনিয়নগুলি প্রধানমন্ত্রী মোদিকে ToR-এ স্পষ্টভাবে এটি উল্লেখ করার জন্য অনুরোধ করেছে।

অষ্টম বেতন কমিশনকে পেনশন ও গ্র্যাচুইটির সম্পূর্ণ কাঠামো পর্যালোচনা করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এতে দুই প্রকারের কর্মচারী অন্তর্ভুক্ত। NPS এবং Unified Pension Scheme-এর আওতাভুক্ত কর্মীদের ডেথ-কাম-রিটায়ারমেন্ট গ্র্যাচুইটি। NPS-এর বাইরে থাকা কর্মীদের গ্র্যাচুইটি এবং পেনশন। NPS-এর বাইরে থাকা কর্মীদের জন্য সুপারিশ করার সময় 'নন-কন্ট্রিবিউটরি পেনশন স্কিম' অর্থাৎ যে পেনশন স্কিমে কর্মীদের কোনো অবদান রাখতে হয় না।

এতে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে বিজ্ঞপ্তিতে 'পেনশনভোগী' শব্দটি লেখা না থাকলেও, পেনশন এবং গ্র্যাচুইটি উভয়ই কমিশনের কার্যক্ষেত্রের মধ্যে রয়েছে।