DA West Bengal : রাজ্যের ডিএ মামলায় 'এগিয়ে' সরকারি কর্মীরা, রায়ের দিকে তাকিয়ে গোটা দেশ ; কবে মিলবে বকেয়া ?

রাজ্য সরকারের ডিএ-মামলার (Dearness Allowance) শুনানি সোমবার। সুপ্রিম কোর্টের এই শুনানির দিকে নজর রাজ্যের সরকারি কর্মীদের। মামলাকারী সংগঠন ও সরকারি কর্মীদের আশা, সোমবার মহামান্য সুপ্রিম কোর্ট তাঁদের পক্ষেই রায় দেবে।

Advertisement
রাজ্যের ডিএ মামলায় 'এগিয়ে' সরকারি কর্মীরা, রায়ের দিকে তাকিয়ে গোটা দেশ ; কবে মিলবে বকেয়া ? প্রতীকী ছবি
হাইলাইটস
  • রাজ্য সরকারের ডিএ-মামলার (Dearness Allowance) শুনানি সোমবার
  • মামলায় এগিয়ে সরকারি কর্মীরা, দাবি আইনজীবীদের

রাজ্য সরকারের ডিএ-মামলার (Dearness Allowance) শুনানি সোমবার। সুপ্রিম কোর্টের এই শুনানির দিকে নজর রাজ্যের সরকারি কর্মীদের। মামলাকারী সংগঠন ও সরকারি কর্মীদের আশা, সোমবার মহামান্য সুপ্রিম কোর্ট তাঁদের পক্ষেই রায় দেবে। মহামান্য হাইকোর্ট কেন্দ্রীয় হারে ডিএ দেওয়ার যে নির্দেশ দিয়েছে, তাই বলবৎ রাখবেন মহামান্য বিচারপতি দীনেশ মহেশ্বরী ও শ্রী হৃষীকেশ রায়ের ডিভিশন বেঞ্চ। আইনজীবি ও সরকারি কর্মীদের দাবি, এই মামলায় তারা এগিয়ে রয়েছেন। 

কী এই মামলা ? 

কলকাতা হাইকোর্ট কেন্দ্রীয় হারে রাজ্যের কর্মীদের ডিএ (Dearness Allowance) দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল ও পরে পুর্নবিবেচনার আর্জিও খারিজ করে দেয়। এদিকে রাজ্যের মুখ্যসচিব ও অর্থ সচিবের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার মামলা হয়। সেই রায়কে চ্য়ালেঞ্জ জানিয়ে রাজ্য সরকার এসএলপি করে সুপ্রিম কোর্টে। তারই শুনানি সোমবার। মামলাকারী সংগঠনগুলির আশা এই মামলা সুপ্রিম কোর্টে গৃহীত হবে না। আর মামলা গৃহীত না হলে হাইকোর্টের যে রায়, তাই বাস্তবায়িত করতে হবে রাজ্য সরকারকে। অর্থাৎ AICPI অনুযায়ী ডিএ দিতে হবে সরকারি কর্মীদের। 

মামলায় রাজ্য সরকারি কর্মীদের পাল্লা ভারী ?

মামলাকারী সংগঠন ও আইনজীবীদের একাংশের মতে, সোমবারের শুনানিতে রাজ্য সরকার চাইবে এই মামলা সুপ্রিম কোর্টে গৃহীত হোক। তবে আইনজীবীদের একাংশের মতে, সেই সম্ভাবনা কম। কারণ এর আগেই মাননীয় বিচারপতি দীনেশ মহেশ্বরী ও শ্রী হৃষীকেশ রায়ের ডিভিশন বেঞ্চ রাজ্য সরকার -সহ সব পক্ষকে শর্টনোট জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল। তা জমাও করেছে সব পক্ষ।  তাই সোমবার হয়তো মামলা শুনবেন না মহামান্য বিচারপতিরা। তাঁরা রায় দিতে পারেন। আইনজ্ঞদের একাংশের যুক্তি, মহামান্য সুপ্রিম কোর্টে এই এসএলপি-র শুনানি একাধিকবার হয়েছে। সেখানে নিজেদের বক্তব্য স্পষ্টভাবে জানিয়েছেন আইনজীবী মীনাক্ষী আরোরা, বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্যরা। মহামান্য আদালতকে তাঁরা হাইকোর্ট ও SAT-এর রায়ের কথাও জানিয়েছেন। রাজ্য সরকারের তরফেও মহামান্য আদালতকে জানানো হয়, যে পরিমাণ ডিএ দাবি করা হচ্ছে, তা দিতে গেলে রাজ্যে অর্থনৈতিক অচলাবস্থা  তৈরি হবে। অথচ এই রাজ্য সুপ্রিমকোর্টে প্রথমে জানিয়েছিল, সরকারি কর্মীরা যে বকেয়ার দাবি করছে তা অলীক কল্পনা মাত্র। আইনজীবীদের মতে, রাজ্য সরকারের ডিএ নিয়ে অবস্থান স্পষ্ট নয়, তা কার্যত পরিষ্কার হয়ে গেছে। এর সুবিধা সরকারি কর্মীরা হয়তো পাবেন। 

Advertisement

এই মামলায় রাজ্য সরকার ও সরকারি কর্মচারী সংগঠনগুলোর জমা দেওয়া জমা দেওয়া শর্টনোট খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে বলে মনে করছেন আইনজীবী ও অর্থনীতিবিদরা। তাঁদের মতে, শর্টনোটে সব পক্ষ কী লেখে তাই দেখেই হয়তো সিদ্ধান্ত নিতে পারে মহামান্য সুপ্রিম কোর্ট। এখন প্রশ্ন কী আছে এই শর্টনোটে ? 

সূত্রের খবর, সরকারি কর্মীরা যে শর্টনোট জমা দিয়েছে সেখানে বাছা বাছা যুক্তি দেওয়া হয়েছে তাদের তরফে। কেন এই রাজ্য সরকারি কর্মীদের ডিএ পাওয়া দরকার, এটা তাদের সাংবিধানিক অধিকার তা লেখা রয়েছে ছত্রে ছত্রে। কী কী যুক্তি দেওয়া হয়েছে? 

১) সূত্রের খবর শর্টনোটে সরকারি কর্মীরা জানিয়েছে, হাইকোর্ট আগেই জানিয়েছে, ডিএ রাজ্যের দয়ার দান নয়, সরকারি কর্মীদের মৌলিক ও সাংবিধানিক অধিকার। অথচ রাজ্য সরকার তা মানছে না। 

২) এই সরকার হাইকোর্টে জানিয়েছিল, সরকারি কর্মীদের দাবি অনায্য। কোনও ভিত্তি নেই। অথচ সুপ্রিম কোর্টে জানাল, ডিএ দিলে রাজ্যে অর্থনৈতিক অচলাবস্থা তৈরি হবে। অর্থাৎ সরকারের অবস্থান স্পষ্ট নয়। 

৩) ডিএ দেওয়া হয় মূদ্রাস্ফিতির জন্য। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়, আজ যে জিনিসের দাম ১০০ টাকা, ৬ মাস পর তার দাম বাড়বে। সেই মাপকাঠিতেই সরকারি কর্মীরা ডিএ পেয়ে থাকেন। সব রাজ্যই তা দেয়। অথচ পশ্চিমবঙ্গের সরকারি কর্মীরা পাচ্ছেন না। জিনিসের দাম বাড়ছে, খরচ বাড়ছে অথচ বকেয়া মিলছে না। ফলে সরকারি কর্মীদের অবস্থা শোচনীয়। 

৪) সূত্রের খবর, শর্টনোটে এও উল্লেখ, AICPI অনুযায়ী ডিএ দেয় সব রাজ্য। অথচ এই রাজ্য সরকার ২০১১ সালের পর থেকে তা মানছে না। তারা মর্জিমাফিক চলছে। রাজ্য সরকার যদি AICPI ফলো না করত তাহলে তাদের রোপা ২০০৯ সংশোধনী আনা প্রয়োজন ছিল। এবং তাদের জানাতে হত, রাজ্য সরকারি কর্মীদের স্বার্থে তারা AICPI ফলো না করে নিজস্ব বিধি লাগু করেছে যাতে সরকারি কর্মীদের সুবিধা হয়। কিন্তু রাজ্য সরকার এমন কোনও সিদ্ধান্ত নেয়নি। আবার তারা AICPI-ও ফলো করছে না।

 


সোমবারের এই মামলা যে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ তা একবাক্যে মানছে সরকারি কর্মচারি পরিষদ, কনফেডারেশন অফ স্টেট গভর্মেন্ট এমপ্লয়িজ ও ইউনিটি ফোরাম। সরকারি কর্মচারি পরিষদের সভাপতি দেবাশিস শীল বলেন, 'SAT থেকে শুরু করে হাইকোর্ট এখনও পর্যন্ত ডিএ নিয়ে আইন মোতাবেক যে রায় দিয়েছে তা সরকারি কর্মীদের পক্ষে। আমাদের বিশ্বাস সুপ্রিম কোর্টেও সেই রায় বহাল থাকবে। কারণ, একাধিকবার শুনানি হয়েছে মহামান্য সুপ্রিম কোর্টে। মাননীয় বিচারপতিদের কাছে আমাদের আইনজীবীরা নিজেদের বক্তব্য রেখেছেন। শর্টনোটও আমরা জমা করেছি। রাজ্যের জমা করা এসএলপি খারিজ হবে বলে আমাদের বিশ্বাস। এখন AICPI ফলো করে সব রাজ্য। আমাদেরও দাবি সেই মোতাবেক বকেয়া মিটিয়ে দেওয়ার। আশা করি, মহামান্য সুপ্রিম কোর্ট সোমবারই মামলার নিষ্পত্তি করে দেবে। জয় হবে সরকারি কর্মীদের।' 

কনফেডারেশন অফ স্টেট গভর্মেন্ট এমপ্লয়িজের মলয় মুখোপাধ্যায় বলেন, 'রাজ্য সরকার ডিএ কার্যকর করেনি। তবে এবার তাদের করতেই হবে। আমাদের আশা মহামান্য সুপ্রিম কোর্ট রাজ্যের আবেদন ডিসমিস করে দেবে। আগেও বলেছি, এই সরকারকে বকেয়া দিতেই হবে। সোমবারের রায় থেকে তা পরিষ্কার হয়ে যাবে বলে আমরা আশাবাদী।' 


সুপ্রিম কোর্টের দিকে তাকিয়ে গোটা দেশ 

আইনজীবীদের একামশের মতে, সোমবার মহামান্য সুপ্রিম কোর্ট যদি রাজ্য সরকারের SLP খারিজ করে দেয় সেক্ষেত্রে তা ঐতিহাসিক রায় হবে। তাদের যুক্তি, ডিএ নিয়ে এই মামলা সেই ২০১৬ সাল থেকে চলছে। SAT ও মহামান্য হাইকোর্ট একাধিকবার সরকারি কর্মীদের পক্ষে রায় দিয়েছে। তবে সরকার তা কার্যকর করেনি। এই পরিস্থিতিতে মহামান্য সুপ্রিম কোর্ট SLP ডিসমিস করলে তা ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত। কারণ, সরকার দিনের পর দিন এই মামলায় লড়েছে, টাকা খরচ করেছে শুধুমাত্র ডিএ থেকে বঞ্চিত করার জন্য।

Advertisement

আবার আইনজীবীদের যুক্তি, সুপ্রিম কোর্টের রায় দেশের আইন হিসেবে গণ্য হয়। সোমবারের রায় যদি রাজ্য সরকারের বিপক্ষে যায় তা হবে, গোটা দেশের সমস্ত রাজ্য সরকারি কর্মীদের জয়। কারণ, বিভিন্ন রাজ্য ডিএ, এরিয়ার ইত্যাদি নিয়ে বঞ্চনা করার চেষ্টা করে সরকারি কর্মীদের। মামলা করে আদালতে। সেক্ষেত্রে এই মামলার রায় দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। বিজেপি-কংগ্রেস-বাম যে সরকারই রাজ্যে শাসন করুক না কেন, সবাইকে এই নির্দেশ মানতে হবে।

কবে মিলবে ডিএ? 

এই প্রশ্নের উত্তর লুকিয়ে সোমবারের শুনানির দিকে। সোমবার যদি এই মামলা মহামান্য সুপ্রিম কোর্টে ডিসমিস হয়ে যায় তাহলে মহামান্য কলকাতা হাইকোর্টের ডিএ মেটানোর যে রায় তা বলবৎ থাকবে বলেই মত আইনজীবীদের একাংশের। 

POST A COMMENT
Advertisement