ডিএ। গত কয়েক মাস ধরে রাজ্য রাজনীতির সবথেকে চর্চিত বিষয়। বকেয়া মেটানোর দাবিতে অনশন করেছেন সরকারি কর্মীদের একাংশ। নবান্নে বৈঠকও হয়েছে। এখনও শহিদ মিনারের মঞ্চে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে সংগ্রামী যৌথ মঞ্চ। কলকাতায় তাঁদের মিছিল ৬ মে। ঠিক তার আগে ৪ মে প্রায় একই দাবিতে শহরে মিছিল করবে যৌথ মঞ্চ। অথচ শহিদ মিনারে আন্দোলন শুরুর সময় থেকে দুই যৌথ মঞ্চ একসঙ্গেই ছিল। কিন্তু এখন তারা পৃথক মিছিল করছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশের মতে, এর থেকে ক্রমশ স্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে যে, ডিএ-র আন্দোলন বিভাজিত। সংগ্রামী যৌথ মঞ্চ গত কয়েক মাসে নিজেদের দিকে প্রচারের আলো কেড়ে নিয়েছিল। ফলে অনেকটাই ব্যাকফুটে চলে গিয়েছিল যৌথ মঞ্চ। সেই কারণে সংগ্রামী যৌথ মঞ্চের ৬ তারিখের কর্মসূচি ঘোষণার পরও ৪ তারিখ কর্মসূচি ঘোষণা করে। যা থেকে কার্যত পরিষ্কার, সরকারি কর্মীরা কোন দিকে রয়েছেন, সেই জলই এখন মাপতে চাইছে দুই মঞ্চই। আসলে এটা দুই মঞ্চেরই শক্তি পরীক্ষার লড়াই।
আরও পড়ুন : সিংভি রাজ্যের আইনজীবী, 'ডিএ মিলবে কীভাবে?' ক্ষুব্ধ-মামলাকারী সংগঠন- কংগ্রেস কর্মীরাও
কেন বিভাজন ?
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের দাবি, এই বিভাজনের নেপথ্যে রয়েছে যৌথ মঞ্চের শক্তি। এই মঞ্চের ছাতার তলায় রয়েছে ৪০টিরও বেশি সংগঠন। কিন্তু, তাদের কর্মকাণ্ড অনেকটা ফিকে হয়ে যায় সংগ্রামী যৌথ মঞ্চের শহিদ মিনারের আন্দোলনের জেরে। এমনকী যৌথ মঞ্চ সেই সময় সংগ্রামী যৌথ মঞ্চকে সমর্থনও করে। তাদের ছাতার তলায় থাকা একাধিক সংগঠন প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে শহিদ মিনারের আন্দোলন-অবস্থানে অংশ নেয়। কিন্তু, সংগ্রামী যৌথ মঞ্চের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ সামনে আসার পর দূরত্ব তৈরি হয় দুই মঞ্চের। বিশেষ করে দেবপ্রসাদ হালদারের আনা আর্থিক তছরূপের অভিযোগ সামনে আসার পর যৌথ মঞ্চের ছাতার তলায় থাকা একাধিক সংগঠন সংগ্রামী যৌথ মঞ্চ থেকে সরে যায়।
যদিও বিভাজনের তত্ত্ব মানতে নারাজ যৌথ মঞ্চের অন্যতম সরকারি কর্মচারীদের সংগঠন কো-অর্ডিনেশন কমিটির নেতা বিশ্বজিৎ গুপ্ত চৌধুরী বলেন, 'প্রতিটা সংগঠনের আলাদা কর্মসূচি থাকে। আমাদেরও আছে। ১০ মার্চ আমরা একসঙ্গেই ধর্মঘট করেছি। দুই মঞ্চের দাবিতে ডিএ থাকলেও আলাদা দাবিও রয়েছে। ভবিষ্যতে প্রয়োজনে ফের একসঙ্গে আন্দোলন করা যাবে। আমাদের মঞ্চের মিছিলে ডাকা হয়েছে সংগ্রামী যৌথ মঞ্চকেও।'
কো-অর্ডিনেশন কমিটি এই কথা বললেও অন্য সুর বঙ্গীয় শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সমিতির। যৌথ মঞ্চের সদস্য সংগঠন তারাও। তাদের তরফে শিক্ষক স্বপন মণ্ডল বলেন, 'যৌথ মঞ্চই প্রথম ডিএ আন্দোলন শুরু করে। যৌথ মঞ্চের দায়বদ্ধতা সংগ্রামী যৌথ মঞ্চের থেকে অনেক বেশি। কারণ এখানে অনেক পুরোনো সরকারি-শিক্ষকদের সংগঠন রয়েছে। এখানে আদর্শের বিষয় আছে। অনেক বিষয়ে সংগ্রামী যৌথ মঞ্চ আমাদের সঙ্গে সহমত পোষণ করেনি। এছাড়াও ওদের বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ আসছে। ওদের মঞ্চে থাকা সরকারি কর্মীই অভিযোগ করেছেন। সেই অভিযোগটা আপত্তিজনক। দীর্ঘ আন্দোলনের ইতিহাসে এমন কোনও অভিযোগ ওঠেনি আমাদের বিরুদ্ধে।'
এই মিছিল নিয়ে সংগ্রামী যৌথ মঞ্চের কনভেনর ভাস্কর ঘোষ বলেন, 'আমাদের মিছিল আছে ৬ তারিখ। সেই মিছিলে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে যৌথ মঞ্চকে। তারা এলে ভালোই। না এলেও আমাদের আন্দোলন চলবে। ইস্যু ভিত্তিক আলাদা মিছিল হতেই পারে। আমাদের সবার লক্ষ্য, সরকারি কর্মীদের স্বার্থ রক্ষা করা।'
আরও পড়ুন : সময়ের আগে কি EMI বা লোন শোধ করা উচিত? মাসের প্রথমেই জেনে নিন
বকেয়া ডিএ-র দাবিতে সুপ্রিম কোর্টে মামলাকারী সংগঠনগুলোর মধ্যে সরকারি কর্মচারি পরিষদ জানিয়েছে, তারা দুই মিছিলকেই সমর্থন করবে। এই নিয়ে সরকারি কর্মচারী পরিষদের সভাপতি দেবাশিস শীল বলেন, 'সরকারি কর্মীদের স্বার্থে যে কোনও ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনকে আমরা নৈতিকভাবে সমর্থন করি। ৬ তারিখ সংগ্রামী যৌথ মঞ্চের মিছিলে আমাদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। আমরা সেদিনের মিছিলে উপস্থিত থাকব। আদালতে মামলা চলার পাশাপাশি ময়দানের লড়াইয়েও আমরা থাকব।'
আর এক মামলাকারী সংগঠন ইউনিটি ফোরামের তরফে দেবপ্রসাদ হালদার বলেন, 'নৈতিকভাবে দুই মিছিলকেই আমরা সমর্থন করছি। তবে এখন কোনও মিছিলে শারীরিকভাবে আমাদের কেউ উপস্থিত থাকবেন না।' তবে কনফেডারেশ অফ স্টেট গর্ভমেন্ট এমপ্লয়িজের কারও এই নিয়ে প্রতিক্রিয়া মেলেনি।
এদিকে দুই মঞ্চের আলাদা কর্মসূচী হওয়ায় তৃণমূলের হাত শক্ত হলেই বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। তাঁদের দাবি, শহিদ মিনারের আন্দোলন রাজ্য সরকারকে বিপাকে ফেলেছিল। রাজ্যের একাধিক নেতা-মন্ত্রী এমনকী খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও এই আন্দোলন নিয়ে কথা বলেছিলেন। একাধিক অভিযোগ করেছিলেন। সেই সময় যৌথ মঞ্চ ও সংগ্রামী যৌথ মঞ্চ একসঙ্গেই ছিল। তবে এখন তারা আলাদা মিছিল করছে, পৃথক কর্মসূচিও বানাচ্ছে।
এই নিয়ে তৃণমূল নেতা দেবাংশু ভট্টাচার্য বলেন, 'ডিএ আন্দোলনের নামে ওখানে যে সব কর্মকাণ্ড চলছে তা আদৌ কাম্য নয়। আর সরকার বা তৃণমূল কংগ্রেস এই আন্দোলন নিয়ে মোটেও চিন্তিত নয়। মাত্র কয়েক শতাংশ সরকারি কর্মী রয়েছে ওই আন্দোলনে। তাও তারা নাকি আলাদা মিছিলের ঘোষণা করেছে। রাজ্য়ের মানুষ এই আন্দোলন নিয়ে একদমই চিন্তিত নয়। সরকারি কর্মীদের খুব সামান্য অংশ শুধুমাত্র নিজেদের স্বার্থে এই আন্দোলন করছে। তারা করতেই পারে। কিন্তু সরকারের লক্ষ্য রাজ্যের সার্বিক উন্নতি। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায় সেই লক্ষ্যেই কাজ করছেন।'