বাড়ি বা ফ্ল্যাট কিনতে অনেকেই স্বামী ও স্ত্রী একসঙ্গে হোম লোন নেন। দু জনের আয়ে হোম লোন পেতেও সুবিধা হয়, একই সঙ্গে বেশি টাকার ফ্ল্যাটও কেনা যায়। আবার অনেক সময় স্বামী বা স্ত্রীর একার আয়ে হোম লোন কম হয়ে যায়, তাই বাজেট বাড়াতে দুজনেই একসঙ্গে হোম লোন নেন। এ ক্ষেত্রে আবার 80C ধারায় আয়করেও ছাড় মেলে। হোম লোন বেশির ভাগ দম্পতিই ২০ বছর বা ২৫ বছর, অনেকে আবার ৩০ বছরের জন্যও নেন। সবই ঠিক আছে, কিন্তু প্রশ্ন হল, যদি ডিভোর্স হয়ে যায় বা এমন কোনও রোগ হল, যা পঙ্গুত্বের দিকে ঠেলে দিল, কো-বরোয়ারের মৃত্যুও হতে পারে। তখন কী হবে?
দুজনেরই টার্ম পলিসি বা জীবন বিমা মাস্ট
1 Finance এর প্রধান আর্থিক উপদেষ্টা অখিল রাঠি সব প্রশ্নের উত্তর দিলেন। তিনি জানাচ্ছেন, স্বামী ও স্ত্রী একসঙ্গে হোম লোন নিলে সুদের হার, ঋণের এলিজিবিলিটি সহ একাধিক সুবিধা মেলে। আবার আয়করেও 80C ধারায় ছাড় মেলে। একসঙ্গে ঋণ পরিশোধ করতেও সুবিধা হয়। তবে একসঙ্গে বাড়ি বা ফ্ল্যাট কেনার আগে নিজেদের সুরক্ষিত করুন তারপর ঋণের আবেদনের চিন্তা করুন। তাঁর কথায়, 'প্রটেক্ট ফার্স্ট অ্যান্ড বরো।' যদি দম্পতি দুজনেই একসঙ্গে EMI দেন, তাহলে দুজনেরই টার্ম পলিসি বা জীবন বিমা কিন্তু মাস্ট। সেই টার্ম পলিসি যেন অন্তত কোনও একজনের বকেয়া ঋণের পরিমাণের সমান হয়। বরং বেশি হওয়াই ভাল। যদি দম্পতির মধ্যে স্বামী অথবা স্ত্রী, একজন EMI দেন, তাহলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির ফুল টার্ম ইনসিওরেন্স পলিসি অবশ্যই দরকার।
একটি জরুরি তহবিল বা এমার্জেন্সি ফান্ড
পারিবারিক স্বাস্থ্যবিমার পাশাপাশি অল্প পরিমাণে ক্রিটিক্যাল ইলনেস বা পার্সোনাল অ্যাকসিডেন্ট পলিসি রাখুন, যাতে হঠাৎ আয় বন্ধ হয়ে গেলে তার মোকাবিলা করা যায়। জীবিকা ও ইএমআই মিলিয়ে অন্তত ছয় মাস থেকে এক বছরের খরচ সামলানোর মতো একটি জরুরি তহবিল বা এমার্জেন্সি ফান্ড গড়ে তুলুন। আর সুরক্ষার জন্য সাধারণ ‘লেভেল-টার্ম পলিসি’ নিন, ব্যাঙ্ক বা ঋণদাতার দেওয়া বান্ডল পলিসি নয়। এতে সুবিধা হবে, রিফাইন্যান্স করলে বা ঋণ পরিবর্তন করলেও কভারেজ একই থাকবে।
দম্পতির ডিভোর্স হলে কী হবে?
এছাড়াও বাড়তি সুরক্ষার জন্য স্বামীর টার্ম পলিসি বিবাহিত নারীদের সম্পত্তি আইন, ১৮৭৪ (MWPA)-এর আওতায় নেওয়ার কথা ভাবতে পারেন। এতে স্ত্রী অথবা সন্তানের নামে একটি ট্রাস্ট তৈরি হয়, ফলে ভবিষ্যতে ঋণদাতা বা অন্য কোনও পাওনাদার সেই বিমার টাকা ছুঁতেও পারবে না। তবে সুবিধাভোগীর নাম বাছাই করার সময় সতর্ক থাকতে হবে, কারণ সাধারণত তাঁদের সম্মতি ছাড়া পরে আর পরিবর্তন করা যায় না, এমনকী যদি দম্পতির ডিভোর্স হয়ে যায়,তাতেও।
EMI পরিশোধ করুন জয়েন্ট অ্যাকাউন্ট থেকে
সর্বদা লোন নেওয়ার সময় স্বামী ও স্ত্রী মালিকানা আর ঋণ পরিশোধের রেশিয়ো স্পষ্ট রাখুন। কর সুবিধা যে অনুপাতে নিতে চান, সেই অনুপাতে স্বামী-স্ত্রী দুজনই সহ-মালিক ও সহ-ঋণগ্রহীতা হলে ভাল। স্বচ্ছতার জন্য EMI পরিশোধ করুন জয়েন্ট অ্যাকাউন্ট থেকে। লোন আর প্রপার্টিতে নোমিনেশন আপডেট রাখুন এবং উত্তরাধিকারের ঝামেলা এড়াতে সহজ উইল তৈরি করুন। মনে রাখবেন, সম্পর্কের পরিবর্তন হোক বা অসুস্থতা আসুক, ব্যাঙ্ক সহ ঋণগ্রহীতাদের ‘jointly and severally liable’ ধরে, মানে যে কোনও একজনকে পুরো EMI দিতে বলা হতে পারে। বাস্তবে অনেক সময় ঋণ এক জনের নামে ট্রান্সফার করা যায় (যোগ্যতার ভিত্তিতে), বা প্রপার্টি বিক্রি করে ঋণ মেটানো হয়। চিকিৎসাজনিত বা আয়ের সমস্যার সময়ে দেরি না করে শুরুতেই ব্যাঙ্কের সঙ্গে যোগাযোগ করে মোরাটোরিয়াম বা ঋণের মেয়াদ বাড়ানোর মতো বিকল্প খুঁজে নেওয়াই বুদ্ধিমানের।
অনেক সময় ব্যাঙ্কগুলি মহিলাদের তুলনামূলক কম সুদে হোম লোন বা গৃহঋণ অফার করে। সাধারণত বার্ষিক ১ শতাংশ কম হয় সুদের হার। যদিও এ ক্ষেত্রে যদি প্রপার্টি স্ত্রীর নামে থাকে এবং তিনি আর্থিকভাবে স্বামীর উপর নির্ভরশীল হন, তাহলে ওই প্রপার্টি থেকে পাওয়া ভাড়ার আয়, আয় করের হিসেবে স্বামীর আয়ের সঙ্গে যোগ হয়ে কর ধার্য হবে।