
দেশের আয়কর নিয়মে বিরাট বদল হতে চলেছে। নতুন আয়কর বিল অগাস্টেই সংসদে পেশ করতে চলেছেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। ১১ অগাস্ট বিলটি (Income Tax Bill, 2025) পেশ করবেন অর্থমন্ত্রী। এই বিল পাশ হয়ে গেলেই আয়করে বিরাট পরিবর্তন ঘটে যাবে। আয়কর আইন ১৯৬১ (বর্তমান আইন) দীর্ঘ ৬০ বছর পর পরিবর্তন হবে।
আয়কর আইন ২০২৫-এ কী কী নতুন থাকছে?
মূলত, আয়কর প্রক্রিয়াকে অত্যন্ত সহজ করা হয়েছে নতুন আইনে। আইনি জটিলতা কমিয়ে সাধারণ মানুষের জন্য অত্যন্ত সরল করা হয়েছে। বর্তমানে যে আয়কর আইন রয়েছে, তা বেশ জটিল। ৫ লক্ষ ১২ হাজার শব্দের আইন। কিন্তু Income Tax Bill, 2025-এ সেই শব্দ সংখ্যা ২ লক্ষ ৬০ হাজারে নামানো হয়েছে। বর্তমানে আইনটি ৪৭ পাতার। তা কমিয়ে ২৩ পাতার করা হয়েছে। ধারার সংখ্যাও ৮১৯ থেকে কমিয়ে ৫৩৬ করা হয়েছে। আয়কর বিল ২০২৫-এ ৫৭টি টেবিল ব্যবহার করা হয়েছে, যা সহজেই বোঝা যায় আইন সম্পর্কে। আগে যা ছিল ১৮টি।
'অ্যাসেসমেন্ট ইয়ার'-এর যুগ শেষ হতে চলেছে
নতুন ইনকাম ট্যাক্স বিলের সবচেয়ে বড় পরিবর্তন হল, এবার 'অ্যাসেসমেন্ট ইয়ার' বা ‘মূল্যায়ণ বর্ষ’ তুলে দেওয়া হচ্ছে। এখন যেভাবে আমরা আয় করি এক বছরে, আর সেই আয়ের কর জমা দিতে হয় পরের বছরে, সেই নিয়ম আর থাকছে না।
আরও পড়ুন: নিউ না ওল্ড রেজিম? আয়কর রিটার্ন জমার আগে এই হিসাবটা করে নিন
আরও পড়ুন: নতুন সপ্তাহেই সংসদে পেশ, নতুন আয়কর বিলের করদাতাদের উপর কী প্রভাব? বিস্তারিত
নতুন আইনে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, বছরে যা আয় করবেন, সেই বছরেই সেই আয়ের কর জমা দিতে হবে। এই পরিবর্তনের ফলে করদানে স্বচ্ছতা বাড়বে এবং সাধারণ মানুষ ও করদাতারা আর বিভ্রান্ত হবেন না বলে মনে করা হচ্ছে।
ডিজিটাল-ফ্রেন্ডলি, আধুনিক এবং সহজ ব্যবস্থা
নতুন বিলটি শুধু করবর্ষের নিয়ম বদলাচ্ছে না, আরও কিছু আধুনিক এবং আন্তর্জাতিক মানের নিয়ম আনছে: কর সংক্রান্ত সমস্ত নথিপত্র ডিজিটাল ফর্মে জমা দেওয়া যাবে, কর সংক্রান্ত ঝামেলা মেটাতে সহজ পদ্ধতি প্রস্তাব করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক করব্যবস্থার সঙ্গে মিল রেখে নতুন নিয়ম তৈরি হচ্ছে, বিশেষ করে যেসব কোম্পানির বিদেশে কাজ রয়েছে।
সিলেক্ট কমিটির প্রস্তাব কী কী?
২১ জুলাই রাজ্যসভার সিলেক্ট কমিটি ২০২৫-এর ইনকাম ট্যাক্স বিল নিয়ে বিশদ রিপোর্ট জমা দিয়েছে। রিপোর্টটি ৪৫০০ পাতার, তাতে মোট ২৮৫টি সুপারিশ রয়েছে।
গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশগুলির মধ্যে রয়েছে
‘ক্যাপিটাল অ্যাসেট’, ‘ইনফ্রাস্ট্রাকচার ক্যাপিটাল কোম্পানি’, এবং ‘মাইক্রো ও স্মল এন্টারপ্রাইজ’-এর সংজ্ঞা আরও স্পষ্ট করা
গৃহঋণের উপর ছাড়ের নিয়ম সহজ করা
ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী বা উদ্যোক্তাদের জন্য শেয়ারহোল্ডারে অস্থায়ী পরিবর্তন হলেও ক্ষতির বহন করার সুযোগ রাখা
পরিবেশবান্ধব সংস্থাগুলিকে ছাড় দেওয়া এবং R&D (গবেষণা ও উন্নয়ন)-এ বিনিয়োগে কর ছাড়
কর আইনে ‘মূল কোম্পানি’র সংজ্ঞা আরও পরিষ্কার করা
ধর্মীয় এবং চ্যারিটেবল ট্রাস্টদের ক্ষেত্রে, অজ্ঞাত দাতার অনুদানে ৩০% কর ধার্য হলেও, একেবারে ধর্মীয় কাজে ব্যবহৃত অর্থে সম্পূর্ণ ছাড় দেওয়ার প্রস্তাব
কেউ যদি আয়করযোগ্য সীমার নিচে আয় করেন, কিন্তু তাঁর উপরে TDS কাটা হয়ে থাকে, তাহলে তাঁকে রিটার্ন ফাইল করার বাধ্যবাধকতা যেন না থাকে—এই সুপারিশও করেছে কমিটি
এ বার কী হবে?
যদি এই বিল সংসদে পাশ হয়, তাহলে এটি ভারতের আয়কর ব্যবস্থার অন্যতম বড় সংস্কার হিসেবে ইতিহাসে জায়গা করে নেবে। কর ব্যবস্থা আরও সহজ হবে, করদাতাদের ঝামেলা কমবে।