এই প্রথম LPG নিয়ে India US বড় ডিল, আপনার রান্নাঘরের খরচ কি বাড়বে না কমবে

এলপিজি বা রান্নার গ্যাস কেনার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে এই প্রথম চুক্তিবদ্ধ হয়েছে ভারত। ১৭ নভেম্বর সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করে এ খবর জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় পেট্রোলিয়াম ও প্রাকৃতিক গ্যাস মন্ত্রী হরদীপ সিং পুরি। সবিস্তারে চুক্তির বিবরণও শেয়ার করেছেন।

Advertisement
এই প্রথম LPG নিয়ে India US বড় ডিল, আপনার রান্নাঘরের খরচ কি বাড়বে না কমবেভারত ও মার্কিন সিলিন্ডার ডিল
হাইলাইটস
  • বার্ষিক ২.২ মিলিয়ন টন এলপিজি আমদানি করবে ভারত।
  • যা ভারতের বার্ষিক এলপিজি আমদানির প্রায় ১০%।

ভারতের সব বাড়িতে প্রতি তিনটি এলপিজি সিলিন্ডারের মধ্যে দু'টি আসে পশ্চিম এশিয়া থেকে। সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরশাহি এবং কাতার থেকে আসে এলপিজি। এতে বোঝা যায়, রান্নার জ্বালানির জন্য অন্য দেশের উপর ভারত কতটা নির্ভরশালী। ভারত ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বাণিজ্য সমঝোতা নিয়ে সাম্প্রতিক ঘটনাক্রম সকলেই জানেন। এবার দুই দেশের মধ্যে এলপিজি নিয়ে একটা 'ডিল' হয়েছে। এর ফলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে এলপিজি কিনবে ভারত। কথায় কথায় বাণিজ্য হাতিয়ার করেন ট্রাম্প। সেই মার্কিন মুলুকের সঙ্গে কীভাবে, কখন চুক্তি হল? রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক দিক থেকেই তা কতটা যুক্তিযুক্ত। মোদ্দা কথা, ভারতের কতটা লাভ বা লোকসান? আর সাধারণ মানুষের প্রশ্ন, এতে গ্যাসের দাম বাড়বে না কমবে?

এলপিজি বা রান্নার গ্যাস কেনার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে এই প্রথম চুক্তিবদ্ধ হয়েছে ভারত। ১৭ নভেম্বর সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করে এ খবর জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় পেট্রোলিয়াম ও প্রাকৃতিক গ্যাস মন্ত্রী হরদীপ সিং পুরি। সবিস্তারে চুক্তির বিবরণও শেয়ার করেছেন। লিখেছেন,'ইতিহাসে এই প্রথমবারের মতো বিশ্বের বৃহত্তম এবং দ্রুত এগিয়ে চলা এলপিজি বাজার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য উন্মুক্ত করা হল। ভারতের জনগণকে নিরাপদ এবং সাশ্রয়ী মূল্যের এলপিজি সরবরাহ করার জন্য এলপিজি উৎসের বৈচিত্র্য আনছি'। চুক্তির বিষয়বস্তুও ব্যাখ্যা করেছেন। তাঁর বক্তব্য,'ভারতের রাষ্ট্রায়ত্ত তেল কোম্পানিগুলি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে এলপিজি আমদানির জন্য একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। এই চুক্তির অধীনে ইন্ডিয়ান অয়েল, ভারত পেট্রোলিয়াম এবং হিন্দুস্তান পেট্রোলিয়াম বার্ষিক ২.২ মিলিয়ন টন এলপিজি আমদানি করবে'। যা ভারতের বার্ষিক এলপিজি আমদানির প্রায় ১০%। এই গ্যাস মার্কিন উপসাগরীয় উপকূল থেকে আসবে। উপসাগরীয় উপকূল হল মেক্সিকো উপসাগরের সীমান্তবর্তী মার্কিন উপকূলীয় অঞ্চল। এটি বিশ্বের বৃহত্তম তেল ও গ্যাস উৎপাদন, প্রক্রিয়াকরণ এবং রফতানি কেন্দ্রগুলির মধ্যে অন্যতম। সূত্রের খবর, ইন্ডিয়ান অয়েল কর্পোরেশন, ভারত পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন এবং হিন্দুস্তান পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন আগামী বছর থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে এলপিজি আমদানি করবে। তারা শেভরন, ফিলিপস ৬৬ এবং টোটাল এনার্জি ট্রেডিংকে যৌথ দরপত্র দিয়েছে। এটি ভারতীয় বাজারের জন্য মার্কিন এলপিজি ব্যবহারের প্রথম দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি।

Advertisement

এই চুক্তির মূল শর্ত নিয়ে আলোচনা করা যাক। পেট্রোলিয়াম মন্ত্রী বলেছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে এলপিজি কেনার এই চুক্তি এক বছরের জন্য। তবে চুক্তির ক্ষেত্রে 'দীর্ঘমেয়াদি' শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে। কারণ ভারত আগে বেশিরভাগ স্পট মার্কেট থেকে কিনেছিল। এখন তার পরিবর্তন করতে চাইছে নয়াদিল্লি। ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে এলপিজি চুক্তিটি মাউন্ট বেলভো মূল্য নির্ধারণের মানদণ্ড মেনে চলবে। মাউন্ট বেলভো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস রাজ্যে অবস্থিত একটি ছোট শহর। এটি বিশ্বের বৃহত্তম এলপিজি স্টোরেজ এবং প্রক্রিয়াকরণ কেন্দ্র। এখানে নির্ধারিত দর বিশ্বব্যাপী দামকে প্রভাবিত করে। ফলে স্পট মার্কেটের অস্থিরতা এড়াতে পারবে ভারত। কারণ, স্পট মার্কেটে দাম অস্থির। ওঠা-নামা করে বেশি। এই বাজারে দাম চাহিদা ও সরবরাহের কারণে ওঠানামা করে।

এলপিজির দাম বাড়বে না কমবে?

এবার আপনার সুবিধা এবং অসুবিধার কথায় আসা যাক। ভারত বিশ্বের বৃহত্তম এলপিজি গ্রাহকদের মধ্যে অন্যতম। উজ্জ্বলা প্রকল্পের আওতায় লক্ষ লক্ষ দরিদ্র পরিবারকে এলপিজি সংযোগ দেওয়া হয়েছে। পেট্রোলিয়াম ও প্রাকৃতিক গ্যাস মন্ত্রকের তথ্য অনুযায়ী, গত ১০ বছরে ভারতে এলপিজি ব্যবহার দ্বিগুণেরও বেশি বেড়েছে। ভারতে এলপিজি সংযোগের সংখ্যা ৩৩ কোটি ছাড়িয়ে গিয়েছে। ২০১৪ সালে দেশে ১৪.৫২ কোটি এলপিজি সংযোগ ছিল। ইতিমধ্যে ভারতে ১ কোটি ৫০ লক্ষ পরিবারের পিএনজি (পাইপড ন্যাচারাল গ্যাস) ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে। গার্হস্থ্য জ্বালানির একটি বড় অংশ এলপিজির উপর নির্ভরশীল। ফলে আন্তর্জাতিক বাজারে এলপিজির দাম বৃদ্ধি বা কমার সরাসরি প্রভাব পড়ে ভারতের রান্নাঘরে। পেট্রোলিয়াম মন্ত্রী দাবি করেছেন, গত বছর বিশ্বব্যাপী এলপিজির দাম ৬০ শতাংশেরও বেশি বেড়েছে। তা সত্ত্বেও কেন্দ্রীয় সরকার উজ্জ্বলা প্রকল্পের সুবিধাভোগীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা নেয়নি। প্রতি সিলিন্ডারে মাত্র ৫০০ বা ৫৫০ টাকা চার্জ করা হয়েছিল। সেই সময় একটি এলপিজি সিলিন্ডারের প্রকৃত মূল্য ছিল ১,১০০ টাকারও বেশি। গত কয়েক বছরে আন্তর্জাতিক বাজারে গ্যাসের দাম বেড়েছে। এই ধাক্কা থেকে মানুষকে রক্ষা করার জন্য, ভারত সরকার বার্ষিক ৪০ হাজার কোটি টাকারও বেশি আর্থিক বোঝা বহন করেছে। কিন্তু আমেরিকার সঙ্গে চুক্তির ফলে ভারতে কি গ্যাসের দাম সস্তা হবে? এর ফলে ভারত কী লাভ বা ক্ষতি?

এলপিজি সস্তা না দামি?

আর্থিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন,'সারা বিশ্ব থেকে এলপিজি আমদানি করে ভারত। নাইজেরিয়া, লাতিন আমেরিকা, রাশিয়া এবং বেশিরভাগ উপসাগরীয় দেশ রয়েছে সেই তালিকায়। স্পট মার্কেট থেকেও কেনে ভারত। ভারত বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম এলপিজি ক্রেতা। কারণ কোটি কোটি মানুষের বাড়িতে পৌঁছে দিতে হবে সিলিন্ডার। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এলপিজি বোঝাই জাহাজ আসতে ২৫ থেকে ৩০ দিন সময় লাগবে। স্বাভাবিকভাবেই উপসাগরীয় দেশগুলির তুলনায় পণ্যবহণ এবং বিমার খরচ বেশি। গ্রাহকদের কি এ নিয়ে চিন্তা করার দরকার আছে? না। কারণ কোম্পানিগুলি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গ্যাস বলে আলাদা করে বেচতে পারবে না। বিভিন্ন দেশ থেকে এলপিজি এনে সেটা বিক্রি করা হবে। তারপর যোগ হবে ভর্তুকি। প্রাথমিকভাবে বলা যায়, মার্কিন এলপিজি একটু ব্যয়বহুল হবে। এটা একবারই কেনা হবে। ফলে গ্রাহকদের চিন্তা করার দরকার নেই। হ্যাঁ, কোম্পানিগুলিকে নিজের আয় ও ব্যয়ের হিসেব মেলাতে হবে।

ভারত ও মার্কিন চুক্তির পিছনের কথা

এবার চুক্তির পটভূমি বোঝা যাক, একটি সর্বভারতীয় সংবাদ মাধ্যমের রিপোর্টে বলা হয়েছে, ভারত নিজের এলপিজি চাহিদার প্রায় ৬৬% বিদেশ থেকে কেনে। প্রায় ৯৫% আসে পশ্চিম এশিয়া থেকে। বেশিরভাগটাই জোগান দেয় সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাশাহি, কাতার এবং কুয়েতের মতো দেশগুলি। এই চুক্তির মাধ্যমে ভারত পশ্চিম এশিয়ার উপর নির্ভরতা কমাল। তবে এই গ্যাস চুক্তিটি এমন এক সময়ে হল, যখন ভারত এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক খুব একটা ভাল নয়। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ভারতীয় পণ্যের উপর মোট ৫০% শুল্ক আরোপ করেছেন। ভারত এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বর্তমানে এই শুল্ক কমানোর জন্য একটি বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে আলোচনা করছে। ফেব্রুয়ারিতে ওয়াশিংটনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। সেই সময় ট্রাম্প বলেছিলেন, তেল ও গ্যাস সরবরাহ করার জন্য পদক্ষেপ করতে সম্মত হয়েছে ভারত ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। যা দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে সাহায্য করতে পারে। বাণিজ্য ঘাটতির অর্থ হল আমেরিকা ভারত থেকে আমদানির তুলনায় ভারতে উল্লেখযোগ্যভাবে কম রফতানি করে। যা মার্কিন অর্থনীতির জন্য ভালো নয় মনে করেন ট্রাম্প। আমেরিকা ভারতের শীর্ষ তেল ও গ্যাস সরবরাহকারী হয়ে উঠবে বলেও নিজের ইচ্ছার কথাও জানিয়েছিলেন। আপাত দৃষ্টিতে মনে হতে এলপিজি চুক্তি মার্কিন শুল্ক কমানোর জন্য একটা উদ্যোগ। আর ভারতের কতটা লাভ বা লোকসান হল, সেটা সময় বলবে।

Advertisement

POST A COMMENT
Advertisement